দেশের রিজার্ভের অর্থে গঠিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) অর্থ ব্যবসায়ীরা ফেরত দিচ্ছেন না। শেয়ার বিজে গতকাল প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, ৪০ প্রতিষ্ঠানের কাছেই আটকা ৬০০ মিলিয়ন ডলার। অভিযোগ রয়েছে, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানের কারণে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা সহজেই এই ঋণের সুবিধাভোগী হয়েছেন। ইডিএফ ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতি হয়েছে।
সদ্য পতন হওয়া শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ থেকে শুরু করে ব্যাংক খাতে ঋণ কেলেঙ্কারিতে আলোচিত ক্রিসেন্ট, বিসমিল্লাহ ও এসবি পুণ্য গ্রুপ ঋণের নামে ইডিএফ ঋণ আত্মসাৎ করেছে। ঋণ নিয়ে সময়মতো ফেরত দেয়নি আকিজ গ্রুপও। এর বাইরে আরও অনেক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ইডিএফ ঋণ হাতিয়ে নিয়েছে। আবার যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ দেয়া হয়েছিল, ডলার সংকটের কারণে তাদের হিসাব থেকেও তা সমন্বয় করতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ইডিএফ ঋণের বড় একটা অংশ মেয়াদোত্তীর্ণ তথা খেলাপি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন বলছে, ইডিএফ তহবিলের সুবিধাভোগী শীর্ষ ৪০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ৬০ কোটি ডলারের মতো আটকে রয়েছে। ইডিএফ ঋণ সময়মতো ফেরত না আসার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির অভাবকে দায়ী করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার পর্যবেক্ষণে যেসব খেলাপি গ্রহীতার নাম উঠে এসেছে। তাদের কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে। এগুলোর নাম সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থাও তাদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ। তারা এত প্রভাবশালী যে, তাদের ঘাঁটালে ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাকরি রক্ষাও কঠিন হয়ে পড়ে। অবশ্য খেলাপিদের কাছ থেকে সুবিধা নেয়া কর্মকর্তার সংখ্যাও কম নয়। যেহেতু সরকারের আনুকূল্যেই খেলাপিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, সরকারের পতনের পর তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আত্মগোপনেও চলে গেছে অনেকে। নতুন সরকারের যেহেতু রাজনৈতিক পরিচয় নেই, তাই এটি আশা করা অসংগত হবে না যে, তারা চাইলে চাপ দিয়ে হলেও দীর্ঘদিন ধরে খেলাপি হয়ে থাকা বিপুল অঙ্কের ঋণ আদায় করা সম্ভব হবে।
পণ্য রপ্তানির জন্য কাঁচামাল আমদানিতে রপ্তানিকারকদের ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কম সুদে ডলারে ঋণ দিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১৯৮৯ সালে গঠিত হয় ইডিএফ। এই ঋণ ফেরত দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ ২৭০ দিন সময় পান উদ্যোক্তারা। কিন্তু আলোচ্য প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো তা পরিশোধ করেনি। অনিয়ম, জালিয়াতি ও যোগসাজশের মাধ্যমে বেশিরভাগ ইডিএফ ঋণ বের করে নেয়ায় তা সময়মতো ফেরত আসছে না।
আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ইডিএফের ঋণ নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান ফেরত দেয়নি, তাদের চিহ্নিত করে শূন্য সহনশীলতায় তা আদায়ে যথাসম্ভব দ্রুত কার্যকর ব্যŸস্থা নেবে সরকার। সরকার পরিবর্তনে ঋণখেলাপিরা রং বদলায়। তা করার আগে ইডিএফের অর্থ আদায় করতে হবে।