ইতিকাফ আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইবাদত

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রমজানের নিয়মিত আমল হলো ইতিকাফ। তিনি রমজানের শেষ ১০ দিন এ ইবাদত করতেন। এ দশকে লাইলাতুল কদর পাওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইতিকাফ জরুরি বিষয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমৃত্যু ইতিকাফ করে গেছেন।

‘ইতিকাফ’ শব্দের অর্থ হলো ‘আঁকড়ে ধরা’, অর্থাৎ উদ্দেশ্য হাসিলের নিমিত্তে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা এবং তার প্রতি মনকে আবদ্ধ রাখা। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মসজিদে অবস্থান করাই ইতিকাফ ।

আগের সব নবী-রাসুল ও তাদের উম্মতরা শত কিংবা হাজার বছর হায়াত পেয়েছেন। তারা বছরের পর বছর আল্লাহ ইবাদাত-বন্দেগিতে কাটাতেন। সে হিসেবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের অল্প আয়ু বা জীবনকাল দিয়েছেন। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা উম্মাতে মুহাম্মাদির জন্য দান করেছেন মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। ইতিকাফকারীদের অধিকাংশেরই এ রাতটি পাওয়ার সৌভাগ্য হয়ে থাকে।

ইতিকাফে বসার অর্থই হচ্ছে, রমজানের শেষ ১০ দিন মসজিদে অবস্থান করা এবং এই দিনগুলোকে আল্লাহর জিকিরের জন্য নির্দিষ্ট করা।

মুমিন বান্দাদের জন্য ২০ রমজান সূর্যাস্তের আগে, অর্থাৎ ইফতারের আগেই ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে উপস্থিত হওয়া আবশ্যক।

ইতিকাফের জন্য নিয়ত করা আবশ্যক। একসঙ্গে ১০ দিনের জন্য নিয়ত না করলে সুন্নাত ইতিকাফ আদায় হবে না, বরং তা নফলে পরিণত হবে।

ইতিকাফের নিয়ত করলে অবশ্যই তা পূর্ণ করা আবশ্যক। কারণ ছাড়া তা ভঙ্গ করা বৈধ নয়।

ইতিকাফকারীর জন্য ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা হারাম।

ইতিকাফ শুরু করার পর কোনো ব্যক্তির যদি দু-এক দিন ভঙ্গ হয়ে যায়, তখন ভঙ্গ দিনের ইতিকাফ পরে কাজা করে নিতে হবে।

পারিশ্রমিক বা ইফতার-সাহরির বিনিময়ে ইতিকাফ করা এবং করানো যাবে না।

ইতিকাফকালে কোরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ তাহলিল করা, দ্বীনি মাসআলা-মাসায়েল আলোচনা করা, নিজের শিক্ষা অর্জন করা এবং অন্যকে শেখানো উত্তম ও বৈধ।

ইতিকাফের স্থানকে ব্যবসাস্থল বানানো মাকরুহ।

রমজানের ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। রমজানের বাইরে অন্য সময় ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত নয়। রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা। ন্যূনতম শেষ তিন দিন ইতিকাফ করা। রমজানের বাইরে ইতিকাফের নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ নেই।

ইতিকাফ তিন প্রকার

সুন্নত ইতিকাফ: রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ সুন্নতে মোয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। অর্থাৎ মহল্লার যে কোনো একজন ইতিকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ইতিকাফ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লার একজন ব্যক্তিও যদি ইতিকাফ না করেন, তবে মহল্লার সবার সুন্নত পরিত্যাগের গোনাহ হবে। দুররে মুখতার: ২/৪৪০।

২১ তারিখের রাত থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত এই ইতিকাফের সময়। কারণ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক বছর এই দিনগুলোতেই ইতিকাফ করতেন। এ কারণে এটাকে সুন্নত ইতিকাফ বলা হয়।

ওয়াজিব ইতিকাফ

মান্নতের ইতিকাফ ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা যেন তাদের মানত পূর্ণ করে।’ সুরা হজ: ২৯।

তাতে কোনো শর্ত থাকুক বা না থাকুক। যেমন কেউ বলল, ‘আমার এই কাজ সমাধা হলে আমি ইতিকাফ করব।’ এতে যেমন ইতিকাফ ওয়াজিব হবে, ঠিক তেমনই কেউ যদি বলে, ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইতিকাফ করব,’ এ অবস্থাতেও ইতিকাফ করা ওয়াজিব বলে সাব্যস্ত হবে। ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২১৩, দুররে মুখতার: ২/৪৪১।

সুন্নাত ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে গেলে তা কাজা করা ওয়াজিব।

নফল ইতিকাফ

ওপরের দুই ধরনের ইতিকাফ ছাড়া বাকি সব ইতিকাফ নফল। এ ইতিকাফ মানুষ যে-কোনো সময় করতে পারে। অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যতক্ষণ মনে হবে করা যাবে। রোজারও প্রয়োজন নেই। এমনকি যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে, নফল ইতিকাফের নিয়ত করা সুন্নত।

মুহাম্মদ আকিল নবী

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০