Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 3:03 pm

ইতিবাচক প্রভাব নেই দেশের পুঁজিবাজারে

শাহরিয়ার সিফাত: এক মাস পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসন। দীর্ঘ এ সময়ে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর। এরই মাঝে গত কয়েক দিন ধরে যুদ্ধবিরতি ও সমঝোতার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। গতকাল এ বিষয়ে বেশ অগ্রগতিও হয়েছে। কয়েকটি শহরে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া।

যুদ্ধবিরতির এ ঘোষণায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায়। যুদ্ধ শুরুর দিকে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশের অর্থনীতির সব খাতে। বিশেষ করে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সূচকের সঙ্গে পতন ঘটে শেয়ার দরে। কিন্তু যুদ্ধবিরতির ঘোষণার কোনো প্রভাব এখনও পড়েনি এ বাজারে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে ইউক্রেনের অবরুদ্ধ শহর মারিউপোলে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে রাশিয়া। তার আগে বিভিন্ন শহরে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে রাশিয়া।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর আগের দিন দেশের পুঁজিবাজারে প্রধান সূচক ছিল ছয় হাজার ৯৪৮ পয়েন্ট। যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিন চলতি বছর প্রথমবার সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় দেশের পুঁজিবাজার। এক দিনেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক কমে ১০৯ পয়েন্ট বা দেড় শতাংশের বেশি। যেটি ছিল চলতি বছরের সবচেয়ে বড় দরপতন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ১০৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৮৩৯ পয়েন্টে। এদিন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩২৬টি কোম্পানির দরপতন হয়। দুই দিন বন্ধ থাকার পর ২৭ ফেব্রুয়ারি রোববার আগের কার্যদিবসের চেয়ে বেশি ধাক্কা আসে পুঁজিবাজারে। একসঙ্গে ১৬৩ পয়েন্ট কমে সূচক নামে ৬ হাজার ৬৭৬ পয়েন্টে।

২৮ ফেব্রুয়ারি বিএসইসির বিভিন্ন পদক্ষেপের পর কিছুটা ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বাজার। এতে ৬৩ পয়েন্ট বেড়ে সূচক ওঠে আসে ছয় হাজার ৭৩৯ পয়েন্টে। একই ভাবে চলতি মাসের প্রথম লেনদেন অর্থাৎ ১ মার্চ সূচকে যোগ হয় আরও ১৪ পয়েন্ট। এতে সূচক হয় ছয় হাজার ৭৫৩ পয়েন্ট। ২ মার্চ আবার পতন হয় সূচকের। ৫৪ পয়েন্ট কমে সেদিন সূচক দাঁড়ায় ৬৭৫৩ পয়েন্টে। এরপর থেকে গতকাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সূচক কমেছে প্রায় ২০০ পয়েন্ট। যদিও গতকাল সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে সূচক দাঁড়িয়েছে ৬৭৫৭ পয়েন্টে।

গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক গিয়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৭৫৭ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট। গত এক সপ্তাহ ধরে মিশ্র প্রবণতায় চলছে দেশের পুঁজিবাজার। যুদ্ধ বন্ধ হলে দেশের পুঁজিবাজারে এর প্রভাব কেমন হতে পারে এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগের ওপর ভর করে চলে না। তারা সুযোগ বুঝেই চলে যায়। এখন যে পরিমাণ বিনিয়োগ চলে গিয়েছে, তারা সহসা ফিরবে না। যদি ফিরে আসে তাহলে প্রভাব পড়বে। কিন্তু অর্থনীতিতে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেবে অনেক দেশই। এর প্রভাব বুঝতে কিছুটা সময় লাগবে।’

ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করছে রাশিয়া। পাশাপাশি ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও যোদ্ধাদের প্রবল দেশপ্রেমের কারণে ক্রমেই ক্ষতিতে পড়ছে রুশ বাহিনী। নিজেদের বিপুলসংখ্যক সৈন্য নিহতের পাশাপাশি যুদ্ধাস্ত্রও হারাচ্ছে দেশটি।

যুদ্ধ শুরুর কয়েক দিনের মধ্যেই সারাবিশ্বে যুদ্ধের প্রভাবে নিত্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করে। এতে দেশগুলোর সরকারের কৌশলটি কাজে লাগে। পার্শবর্তী দেশ ভারতেও দ্রব্যমূল্য কমে আসছে। ব্যবসায়ীরা রমজান উপলক্ষে বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়ে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। কিন্তু তার কোনো প্রভাব বাংলাদেশে এখনও পড়েনি। যুদ্ধের প্রভাবে বেড়ে যাওয়া গমসহ খাদ্যশস্য, তেলবীজের দামে এখনও ভাটা পড়েনি।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, একশ্রেণির অসাধু বিনিয়োগকারী বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরির জন্য আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এতে অনেক বিনিয়োগকারী তাদের শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। এ কারণে সূচকের পতন হয়েছে। এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারী কামরুজ্জামান বলেন, ‘যুদ্ধের খবরে বাজার যেভাবে পড়েছে, যুদ্ধবিরতি, শান্তি আলোচনা এবং ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সারাবিশ্বে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়েনি।’

প্রসঙ্গত, যুদ্ধের ভীতিতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ইউক্রেনের ৪০ লাখের বেশি মানুষ। হতাহতের সংখ্যাও অসংখ্য। অন্যদিকে এই যুদ্ধে নিহত হয়েছেন অনেক রুশ সৈন্যও। আর এই হামলার কারণে একের পর এক পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে রাশিয়া। তবে বিশ্বব্যাপী বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও অর্থনৈতিক চাপে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে রাশিয়ার আক্রমণ।