বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে কোম্পানির মালিকরা জড়িত থাকেন। ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করতে হলে বিএসইসিকে পৃথকভাবে একটি ইনটেলিজেন্স উইং প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যাদের কাজ হবে পুঁজিবাজারে কোম্পানির মালিকরা বিভিন্ন ধরনের যেসব অপরাধ করেন সেগুলো খুঁজে বের করা এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা। কারণ শুধু সার্ভিলেন্স দিয়ে মালিকদের ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করা সম্ভব নয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানের আলোচনায় বিষয়টি উঠে আসে। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির সাবেক সচিব ও চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. ফোরকান উদ্দীন, এফসিএ।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, নির্বাচনের আগে পুঁজিবাজার মন্দাবস্থানে ছিল। কারণ তখন প্রধান ইস্যু ছিল নির্বাচন। নির্বাচনে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয় কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। এ জন্য বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ অবস্থানে ছিলেন। সবার প্রত্যাশা ছিল নির্বাচনের পর পুঁজিবাজার গতিশীল হবে এবং এখন সেটি দেখা যাচ্ছে। জানুয়ারির প্রথমার্ধে পুঁজিবাজারে যে গতিতে উঠেছে এখন আর সে গতি দেখা যাচ্ছে না। গত মাসের ১৩ তারিখ থেকে সেই গতিশীলতা ধীরে ধীরে কমে আসছে। এখন কথা হচ্ছে কেন কমে যাচ্ছে? নির্বাচনের পর বিদেশি বিনিয়োগ সামান্য বেড়েছে কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ তেমন বাড়েনি। আবার মানি মার্কেট থেকে পুঁজিবাজারে যে বিনিয়োগ হবে সেখানেও সমস্যা রয়ে গেছে। কারণ মানি মার্কেটে যে উদ্বৃত্ত অর্থ ছিল তা অনেক কমে গেছে। আবার ২০১০ সালের পর পুঁজিবাজারে প্রায় ১০০টি কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সেগুলোর বেশিরভাগই স্বল্প মূলধনি বা তেমন ভালো মানের নয়। মৌলভিত্তির কোম্পানি দুই থেকে তিনটির বেশি আনতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, স্বল্প মূলধনি কোম্পানির জন্য আলাদা বোর্ড হচ্ছে। এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সাহায্যের দরকার রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে পুুঁজিবাজারে অনেক স্বল্প মূলধনি কোম্পানি ব্যাংক বা পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলেছে এবং পরে ওই সব কোম্পানিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বা টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। যে দেশে এ ধরনের কালচার বিরাজমান সেখানে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির জন্য আলাদা বোর্ড কতটুকু সফল হবে সেটাই দেখার বিষয়।
মো. ফোরকান উদ্দীন বলেন, নির্বাচনের আগে বাজার তেমন ভালো অবস্থানে ছিল না। অর্থাৎ নির্বাচনের কারণে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী তাদের মূলধন তুলে নিয়েছে। নির্বাচনের আগে এটি সব দেশের পুঁজিবাজারে হয়। শুধু যে এদেশে হয় তা কিন্তু নয়। নির্বাচনের পর স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজমান রয়েছে। এখন আবার বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারের আসতে শুরু করেছে এবং সূচক, গড় লেনদেন, বাজার মূলধন এবং কোম্পানির শেয়ারের দামে ইতিবাচক উন্নতি দেখা গেছে। কিন্তু সে গতিশীলতা ধরে রাখা যাচ্ছে না। আসলে এখানে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। আবার দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির তুলনায় সরকারি বিনিয়োগ থেকে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি অনেক কম। তাই বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে তেমনি দেশের পুঁজিবাজারেও উন্নয়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, আইসিবির প্রতি অনেক দিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে। আইসিবির কাজ হচ্ছে যখন বাজার টানা ঊর্ধ্বগতি বা নিম্নগতি থাকবে তখন সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা। এ জন্যই আইসিবিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু আইসিবি কখনই দায়িত্ব অনুযায়ী সেভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। এ জায়গাটি বিবেচনায় আনতে হবে এবং আইসিবির মতো আরও এক-দুটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আবার পুঁজিবাজারে যে ইনসাইডার ট্রেডিং বিরাজমান রয়েছে সেটি বন্ধ করতে হবে এবং এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে কোম্পানিগুলোর মালিকরাও জড়িত থাকেন। ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করতে হলে বিএসইসির কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে বিএসইসির আলাদা একটি ইনটেলিজেন্স উইং প্রতিষ্ঠা করা। যাদের কাজ হবে পুঁজিবাজারে কোম্পানির মালিকরা বিভিন্ন ধরনের যেসব অপরাধ করেন সেগুলো খুঁজে বের করা। কারণ শুধু সার্ভিলেন্স দিয়ে মালিকদের ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করা সম্ভব নয়।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ