Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:19 pm

ইনসাইডার ট্রেডের কারণে দর বাড়ছে দুর্বল কোম্পানির

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজার জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত যে অবস্থানে রয়েছে তাতে এ বাজারকে কোনোভাবেই একটি গতিশীল বাজার বলা যায় না। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারের উত্থান-পতনকেও বাজার সংশোধন বলা যায় না। দেখা গেছে, স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই অকারণে দাম বাড়ছে। আবার বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদর সেভাবে বাড়ছে না বরং আরও কমে যাচ্ছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, পুঁজিবাজারে একটি ইনসাইডার ট্রেড হচ্ছে। যে কারণে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার বেচাকেনা বেশি হচ্ছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন এনবিইআর চেয়ারম্যান ড. আহসানুল আলম পারভেজ এবং ইসলামিক ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি ও সিইও এজেডএম সালেহ। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, পুঁজিবাজারের জš§লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত এবং ২০১০ সালের উত্থান-পতনকে আসলে বাজার সংশোধন বলা যায় না। দেখা যাচ্ছে, স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারগুলোর কোনো তথ্য ছাড়াই বেশ দাম বাড়ছে আর ভালো মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদর সেভাবে বাড়ছে না। এ থেকে বোঝা যাচ্ছেÑপুঁজিবাজারে একটি ইনসাইডার ট্রেড হচ্ছে। যে কারণে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার বেচাকেনা বেশি হচ্ছে।
আমাদের পুঁজিবাজারে দুই ধরনের সমস্যা রয়েছে। একটি হচ্ছে, ক্রনিক ব্যাধি এবং অপরটি হচ্ছে সর্দি কাশির মতো মৌসুমি রোগ। আমাদের বাজারে মূল সমস্যা হচ্ছে ক্রনিক ব্যাধি। আসলে পুঁজিবাজার স্বল্প এবং মধ্যমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা নয়। এটি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের স্থান।
এজেডএম সালেহ বলেন দেশের অর্থবাজার সাময়িক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মানি মার্কেটের মূল উপাদানগুলো হচ্ছে ক্যাপিটাল এডিকোয়েসি রেশিও, অ্যাডভান্স গ্রোথ, ফল মানি রেট, এডি রেশিও প্রভৃতি। এর মধ্যে অ্যাডভান্স গ্রোথ রেশিওতে একটু সমস্যা রয়েছে। বাকিগুলো আন্তর্জাতিক মানে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। গত বছর আমাদের ডিটোজিটের গ্রোথ রেশিও ছিল ১০.৩। অ্যাডভান্সের ছিল ১৮.৮। সেখানে একটু অসামঞ্জস্য রয়েছে। যার ফল আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি। এখন যাকে তারল্য সংকট বলা হচ্ছে। এটাকে তারল্য সংকট না বলে তারল্য ব্যবস্থাপনাও বলা যেতে পারে। আমাদের জাতীয় ব্যাংকগুলোতে তেমন তারল্য সংকট নেই। তাদের পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো যারা একটু বেশি পরিমাণের ঋণ দিয়েছে তারা কিছুটা তারল্য সংকট রয়েছে। এটি সাময়িক। এ ব্যাপারে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা যদি দ্রুত কার্যকর হয় তবে অচিরেই সমাধান হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, খেলাপি ঋণ। এটির পরিমাণ অনেক বেশি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে তারল্য সংকট। এখানে মূল বিষয়টি হচ্ছে সুশাসনের অভাব। ব্যাংক খাতে এটির খুবই প্রয়োজন। দক্ষতা, নৈতিকতা এবং সততা না থাকলে ব্যাংক খাতে সুশাসন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যতদিন পর্যন্ত এটি নিশ্চিত না করা যাবে ততদিন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে সমস্যা থেকেই যাবে।
বর্তমানে ম্যাক্রো অর্থনীতির সব সূচক ভালো অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে জিডিপি ৭.১০ থেকে ৭.২৮। আমদানি গত বছরের চেয়ে ৯ শতাংশ বেড়েছে। রফতানি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। রিজার্ভ ২০১৬ সালে ছিল ৩০ দশমিক ১০। এবার তা হয়েছে ৩০ দশমিক ৩০। সব সূচকই ইতিবাচক। আমাদের অর্থনীতির সামনে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আশির দশক থেকে আমাদের ব্যাংক খাত বিস্তৃতি লাভ করে। তখন থেকেই কিছু বেসরকারি ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, সরকারের যেসব ভালো ভালো খাতের কোম্পানি এখনও পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়নি সেগুলোকে তালিকাভুক্ত করা। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনা এবং বেসরকারি খাতেও অনেক ভালো কোম্পানি রয়েছে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা। এসব কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে আমাদের পুঁজিবাজার টেকসই হবে এবং অর্থনীতির চাকা সচল হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন সেক্ষেত্রে সরকারও চাইবে পুঁজিবাজার যাতে ভালো অবস্থানে থাকে।