ক্রীড়া ডেস্ক: প্রথম ইনিংসে অল্প রানে গুটিয়ে যাওয়ায় বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে আবু জায়েদ রাহী, রুবেল হোসেন ও তাইজুল ইসলামের বোলিং নৈপুণ্যে পাকিস্তানের লিড ধরাছোঁয়ার মধ্যেই রাখতে সক্ষম হয়েছিল টিম টাইগার্স। জবাব দিতে নেমে তামিম ইকবাল ও সাইফ হাসানের ব্যাটে ভালো শুরু পেয়েছিল সফরকারীরা। তাদের দেখানো পথে পরে দারুণভাবেই হঁটছিলেন মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তাই রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা দেখছিলেন লিডের স্বপ্ন। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে বিকালে হ্যাটট্রিক করে টাইগারদের সে স্বপ্ন মুহূর্তেই দুঃস্বপ্নে পরিণত করেন নাসিম শাহ। যে কারণে চলতি টেস্টে ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ।
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ২৩৩ রানের জবাবে গতকাল পাকিস্তান গুটিয়ে যায় ৪৪৫ রানে। সব মিলিয়ে তাই ২১২ রানে পেছনে থেকে সফরকারীরা ব্যাটিংয়ে নামে। দিন শেষে ৬ উইকেটে ১২৬ রান করে রাসেল ডমিঙ্গোর দল। এখনও মুমিনুলরা স্বাগতিকদের চেয়ে পেছনে আছে ৮৬ রানে। তাই ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কাটা বেশ বড় করেই ভর করেছে।
গতকাল বাংলাদেশের বড় ক্ষতিটা করেছেন নাসিম শাহ। শেষ বিকালে এ পেসার দারুণ খেলতে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তকে প্রথমে এলবিডব্ল–র ফাঁদে ফেলেন। পরের বলে একই স্টাইলে এ ডানহাতি সাজঘরের পথ দেখান নাইটওয়াচম্যান তাইজুল ইসলামকে। পরপর দুই উইকেট তুলে পাক পেসার হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান। শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালাতে প্রলুব্ধ করে দ্বিতীয় সিøপে ক্যাচে পরিণত করে যা সত্যি করেন। তাতেই রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ইনিংস হারের মুখে ফেলে দিয়েছে সফরকারীদের।
২১২ রানে পেছনে থেকে ব্যাট করতে নেমে গতকাল শেষ বিকালে তামিম ইকবাল ও সাইফ হাসান বেশ আস্থার সঙ্গেই খেলছিলেন। সে সুবাদে ৯ ওভারে তারা ৩৯ রানের জুটিও গড়েন। এর ফলে পাকিস্তানের মাটিতে টেস্টে ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও করেন তারা। তবে কাজের কাজটি করতে পারেননি সাইফ। ভালো শুরু করে জুটি বড় করতে পারেননি তিনি। আউট হয়েছেন ১৬ রানে। প্রথম ওভারে শাহিন আফ্রিদিকে চার মেরে দারুণ শুরু করেন তিনি। নবম ওভারে টানা দুটি চারও মেরেছেন নাসিম শাহকে। ওই ওভারেরই শেষ বলে নাসিম শাহর বলে বোল্ড হন সাইফ (২৫ বলে ১৬)। এদিকে চা-বিরতির তৃতীয় ওভারে ফেরেন তামিম ইকবাল। প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য লেগস্পিনার ইয়াসির শাহের বলে এলবিডব্ল– হওয়ার আগে তিনি করেন ৫৬ বলে ৬ চারে ৩৪ রান। সে সময় বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৫৫। ঠিক এ অবস্থায় সফরকারীদের ইনিংসে হাল ধরেন মুমিনুল-শান্ত। শুরুটা তারা করেছিলেন দেখেশুনে। এরপর সময় যত গড়িয়ে যায়, তারা খোলস ছেড়ে বের হয়ে রানের পেছনে ছুটতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা ৯২ বলে ৫০ রানের জুটি গড়েন। এর মধ্যে নাজমুল হোসেন শান্ত অবদান রাখেন ২৩ আর মুমিনুলের ছিল ২৬ রান। পরে তারা নিজেদের ইনিংসের সঙ্গে দলের রানও বাড়াতে দারুণ খেলছিলেন। ঠিক তখনই বল হাতে আগুন ছোটান নাসিম শাহ। এ ডানহাতি ইনিংসের ৪১তম ওভারের চতুর্থ বলে শান্তকে এলবিডব্ল–র ফাঁদে ফেলেন। ফেরার আগে এ বাঁহাতি করেন ৩ চার ও এক ছয়ে ৩৮ রান। এর পরের বলেই ফিরে যান তাইজুল ইসলাম। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও পারেননি কিছু করতে। নাসিম শাহর হ্যাটট্রিকম্যানে দ্রুতই পরিণত হন তিনি। সে ক্ষত শুকানোর আগেই গতকাল ইয়াসির শাহ’র বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মোহাম্মদ মিথুন। একটি জায়গায় কিন্তু দারুণ মিল তাইজুল, মাহমুদউল্লাহ ও মিথুনের। তারা কেউ পারেননি রানের খাতা খুলতে। যে কারণে হঠাৎ করেই এ ম্যাচে বড় বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। যদিও অন্য প্রান্তে মুমিনুল হক রয়েছেন লিটন দাসকে সঙ্গী করে। কিন্তু তারপরও প্রশ্নটি বড় করেই থেকে যায়Ñবাংলাদেশ কী পারবে ইনিংস পরাজয় এড়াতে!
এর আগে গতকাল নিজের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন আবু জায়েদ। তার সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া বল খেলতে গিয়ে প্রথম সিøপে মোহাম্মদ মিথুনকে ক্যাচ দেন বাবর আজম (১৪৩)। পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যানটিকে এদিন কোনো রান যোগ করতে দেননি জায়েদ। এরপর আসাদ শফিক আর হারিস সোহেল ধীরে এগোতে চেষ্টা করেন। কিন্তু দিনের সপ্তম ওভারে আসাদকে (৬৫) উইকেটের পেছনে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করে ইবাদত তাদের প্রতিরোধ ভাঙেন।
ষষ্ঠ উইকেটে ২১ রানের জুটি গড়েছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান-হারিস সোহেল। কিন্তু রুবেল হোসেনকে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রিজওয়ান। ইয়াসির শাহকেও বেশিক্ষণ টিকতে দেননি রুবেল। এলবিডব্ল–র ফাঁদে ফেলেন তিনি। তবে এক প্রান্ত আগলে ছিলেন হারিস সোহেল। দ্রুত ৩ উইকেট হারানো পাকিস্তানকে টানেন তিনি। এক পর্যায়ে বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে এ বাঁহাতি স্বাগতিকদের রান নিয়ে যান ৪০০’র ওপরে। নিজেও তুলে নেন ৭২ বলে অর্ধশতক। শেষ পর্যন্ত তার প্রতিরোধ ভাঙেন তাইজুল। আলগা বলে বেরিয়ে এসে বাঁহাতি স্পিনারকে ওড়াতে চেয়েছিলেন হারিস। টাইমিং হয়নি ঠিকঠাক। ডিপ মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ নেন তামিম ইকবাল। তার আগে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৭৫ রান করেন হারিস। এর কিছুক্ষণ পরই নাসিম শাহকে রান আউটের ফাঁদে ফেলে টিম টাইগার্স। তাতে প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান গুটিয়ে যায় ৪৪৫ রানে। বাংলাদেশ পেছনে পড়ে ২১২ রানে। গতকাল শেষ বিকালে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে সফরকারীরা দারুণ খেললেও নাসিম শাহ’র এক হ্যাটট্রিকেই ম্যাচের চিত্র পাল্টে যায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৩৩
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ১২২.৫ ওভারে ৪৪৫ (মাসুদ ১০০, আবিদ ০, আজহার ৩৪, বাবর ১৪৩, শফিক ৬৫, হারিস ৭৫, রিজওয়ান ১০, ইয়াসির ৫, আফ্রিদি ৩, আব্বাস ১* নাসিম ২; ইবাদত ২৫-৬-৯৭-১, আবু জায়েদ ২৯-৪-৮৬-৩, রুবেল ২৫.৫-৩-১১৩-৩, তাইজুল ৪১-৬-১৩৯-২, মাহমুদউল্লাহ ২-০-৬-০)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৪৫ ওভারে ১২৬/৬ (তামিম ৩৪, সাইফ ১৬, শান্ত ৩৮, মুমিনুল ৩৭*, তাইজুল ০, মাহমুদউল্লাহ ০, মিথুন ০, লিটন ০*; আফ্রিদি ১১-২-৩৫-০, আব্বাস ১১.৪-৫-২০-০, নাসিম ৮.২-২-২৬-৪।