ইনিংস হারের সেই দুঃস্বপ্নে বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক: ব্যাটিং করতে যেন ভুলেই গেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। গতকাল সৌম্য-সাব্বিরদের দেখে তা-ই মনে হয়েছে সবার। যার মাশুলটাও বেশ চড়া দামেই দিতে হয়েছে। সাড়ে তিন বছর পর আবারও সেই ইনিংস হারের দুঃস্বপ্নে পড়তে হলো সফরকারীদের। কাগিসো রাবাদার দারুণ বোলিংয়ে টাইগাররা এবার হেরেছে ইনিংস ও ২৫৪ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজয়। এর আগে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার কাছে ইনিংস ও ২৪৮ রানে চট্টগ্রামে হেরেছিল টাইগাররা।

বুমফন্টেইন টেস্ট বাংলাদেশ যে ইনিংস ব্যবধানে হারবে, তা টের পাওয়া গিয়েছিল গত পরশু। কেননা ওই দিন টাইগাররা প্রথম ইনিংসে ১৪৭ রান তুলতেই গুটিয়ে গিয়েছিল। সঙ্গে পড়েছিল ফলোঅনে। কিন্তু পরের দিন ভালো কিছু করার কথা শুনিয়েছিলেন ব্যাটসম্যান কাম উইকেটকিপার লিটন কুমার দাস। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬০০ রানও করতে পারবে তার দল! সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন তিনি। তবে গতকাল সেসবের কিছুই হয়নি। বরং টাইগাররা অলআউট হয়েছে মাত্র ১৭২ রানে।

প্রথম ইনিংসের মতো গতকালও শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। যার শুরুটা হয়েছিল সৌম্য সরকারকে দিয়ে। দুই রানে জীবন পাওয়া বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে উইকেট উৎসব শুরু করেন রাবাদা। সৌম্যকে বিদায় করে চলতি বছরে প্রথম বোলার হিসেবে ৫০ উইকেট নেন প্রোটিয়া এ পেসার। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরে গেছেন মুমিনুল হকও। পরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন অধিনায়ক মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ওয়েইন পার্নেলের বল ছেড়ে দিয়ে এলবিডাব্লিউ হয়ে ফিরে যান মুশি। সঙ্গে সঙ্গে ইনিংস ব্যবধানের হারটা সময়ে পরিণত হয় টাইগারদের।

পঞ্চম উইকেটে প্রথম ইনিংসের সেরা ব্যাটসম্যান লিটন দাসের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর জুটিতে ছিল লড়াইয়ের আভাস। সহজেই দক্ষিণ আফ্রিকার আক্রমণ সামলাচ্ছিলেন দুজনে। জুটিটাও জমে উঠেছিল। কিন্তু আন্দিলে ফেলুকওয়ায়োর বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হন লিটন। এর আগে প্রথম টেস্টে এলবিডাব্লিউ হয়েছিলেন বল ছেড়ে দিয়ে। তার বিদায়ের পরই সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহও। সাতটি চার আর একটি ছক্কায় ৪৩ রান করা ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে নিজের শততম উইকেট নেন রাবাদা। শেষদিকে জ্বলে উঠতে পারেননি সাব্বির রহমান। প্রথম ইনিংসে শূন্য করা এ ব্যাটসম্যান গতকাল করেন ৪ রান। কিছুক্ষণ পরই তাইজুল ইসলাম ও রুবেল হোসেনকে ফিরিয়ে ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট নেন রাবাদা। টেস্টে এ নিয়ে তৃতীয়বার পেলেন ১০ উইকেট।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বরাবরই এশিয়ার দেশগুলো বিপদে পড়ে। তাই বলে একটা টেস্ট ম্যাচ শেষ হয়ে যাবে আড়াই দিনে? আসলে কী এমন জাদুমন্ত্র ছিল বুমফন্টেইনের উইকেটে, যা থেকে কোনো সুবিধাই নিতে পারল না বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও টাইগার ব্যাটসম্যানরা পারেননি বড় কোনো জুটি গড়তে। কারও নামের পাশে নেই সেঞ্চুরি কিংবা হাফসেঞ্চুরি। সবাইকে দেখে মনে হয়েছে কত অসহায়। ব্যাটিংটায় যেন ভুলে গেছেন। আসলেই কি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ব্যাট হাতে ফুল ফোটাতে ভুলে গেছেন?

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ৫৭৩

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৪৭

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৭২ (ইমরুল ৩২, সৌম্য ৩, মুমিনুল ১১, মুশফিক ২৬, মাহমুদউল্লাহ ৪৩, লিটন ১৮, সাব্বির ৪, তাইজুল ২, রুবেল ৭, শুভাশিস ১২, মোস্তাফিজ ৭; রাবাদা ৫/৩০, অলিভিয়ের ১/৩৯, মহারাজ ০/৩০, পার্নেল ১/৩১, ফেলুকওয়ায়ো ৩/৩৬)

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ও ৫৪ রানে জয়ী

সিরিজ: দক্ষিণ আফ্রিকা ২-০ ব্যবধানে জয়ী

ম্যাচ সেরা: কাগিসো রাবাদা

সিরিজ সেরা: ডিন এলগার

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০