ঘরে বসে মাসে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্নে বহু স্তর বিপণন (এমএলএম) ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে দেশের তরুণদের একাংশ। গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি শঙ্কা জাগানিয়া হলেও অবাস্তব নয়। দেশে এ ধরনের কোম্পানির অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা ও তাতে বিভিন্ন বয়সী মানুষকে ব্যাপকভাবে যোগ দিতে আগেও দেখা গেছে। কাগজনির্ভর এ ব্যবসায় যোগ দিয়ে অনেকেই হয়েছেন সর্বস্বান্ত। সম্প্রতি ইন্টারনেটনির্ভর এ ব্যবসার উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য ও কৌশল প্রায় একই। ধারণা করা যায়, এর মাধ্যমেও অংশগ্রহণকারী তরুণরা হবেন প্রতারিত। আমরা মনে করি, আরও বেশি তরুণ এতে জড়িয়ে পড়া ও ক্ষতির শিকার হওয়ার আগেই ইন্টারনেটভিত্তিক এমএলএম ব্যবসা বন্ধ করা দরকার।
বস্তুত এর মধ্য দিয়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর একাংশের বিনা পরিশ্রমে ও অপেক্ষাকৃত কম সময়ে বেশি উপার্জনের মনোভাব স্পষ্ট। আজকাল উচ্চশিক্ষিত কারও কারও মধ্যেও দেখা যায় এমন প্রবণতা। তরুণ জনগোষ্ঠীর একাংশের মধ্যে এ মনোভাব বেড়ে উঠছে কেনÑসেটাও প্রশ্ন। এটা সমাজে সৃষ্টি করে আরও নানা সমস্যা। সন্দেহ নেই, তরুণ জনগোষ্ঠীর একাংশের এমন মনোভাব বদলাতে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এজন্য সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীদের এগিয়ে আসা দরকার। উল্লেখ্য, পারিবারিক শিক্ষা ও সন্তানকে যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমেও এর সমাধান সম্ভব। এজন্য অভিভাবকদের হতে হবে সচেতন। পরিশ্রমবিহীন উপার্জনের প্রত্যাশা যে অনৈতিক, সে শিক্ষাই দিতে হবে সন্তানদের। এটা লোভ বাড়িয়ে তোলে। পরিণামে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারেÑসন্তানকে প্রত্যেক অভিভাবক যদি এ ব্যাপারে সতর্ক করতে পারেন, তাহলে তরুণ জনগোষ্ঠীর এমন প্রবণতা হ্রাসে কিছুটা সফল হওয়া যাবে।
বিনা পরিশ্রমে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে বেশি বেশি উপার্জনের মানসিকতা দেশে পরিণত হয়েছে সামাজিক ব্যাধিতে। শুধু বেকার তরুণ জনগোষ্ঠী কেন, চাকরিসম্পন্ন বয়স্ক অনেককেও এ ধরনের কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে সম্পদ বাড়ানোর লক্ষ্যে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে অল্প সময়ে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব বলে এ ধরনের ব্যবসার বিস্তার ঘটছে সহজেÑদেশ থেকে বিদেশে। কাঠামোগতভাবে উদ্যোগ নেওয়া না হলে এ ধরনের ব্যবসার বিস্তার ঠেকানো কঠিন। আগেও দেখা গেছে, তরুণদের জন্য ক্ষতিকর ও দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিসম্পন্ন অনেক ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)। এ অবস্থায় আমরা চাইব, ইন্টারনেটভিত্তিক এমএলএম ব্যবসা পরিচালনাকারী ওয়েবসাইট বন্ধে সংস্থাটি নেবে কার্যকর পদক্ষেপ। বাহারি বিজ্ঞাপন দিয়ে, বিশেষত বেকার তরুণদের লোভে ফেলার যেসব প্রচেষ্টা এ মাধ্যমে দেখা যায়Ñপদক্ষেপ নিতে হবে সেগুলো বন্ধেও।
দেশে কর্মসংস্থানের ভালো ব্যবস্থা না থাকায়ও এ ধরনের ব্যবসায় উৎসাহী হচ্ছে একশ্রেণির তরুণ। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কাঠামোগত ও সামাজিক অন্যান্য উদ্যোগ নিয়েও এক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন কঠিন হবে। আমরা চাইব, এ দিকেও দৃষ্টি দেবেন নীতিনির্ধারকরা। দেশীয় আইন অনুযায়ী এমএলএম ব্যবসা অবৈধ। কেউ এ ধরনের উদ্যোগ নিলে তাকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, ইন্টারনেটভিত্তিক যে এমএলএম ব্যবসার কথা গতকালের শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তার উৎস অন্য দেশে। এর উদ্যোক্তারা এখানকার কারও সঙ্গে প্রতারণা করলে তাদের কীভাবে আনা হবে আইনের আওতায়? আমরা মনে করি, প্রযুক্তির উৎকর্ষের এ যুগে এমন অপরাধ রোধ ও সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে থাকা দরকার আন্তর্জাতিক উদ্যোগও। তাহলে অন্যান্য দেশের জনগোষ্ঠীকেও ব্যবসার নামে এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পা দেওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে।