হামিদুর রহমান : মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের পরিমাপক হিসেবে ব্যবহৃত গিগাবাইট (জিবি) নিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে অভিনব কৌশলে প্রতারণা করছে বহুজাতিক মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। একই সমমূল্যের প্যাকেজ ও একই মেয়াদি হলেও আগের তুলনায় বর্তমানে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহৃত গিগাবাইট দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়াতে বিশেষ অফারের প্যাকেজগুলো ইন্টারনেট ধীরগতিতে কাজ করে। পাশাপাশি ইন্টারনেটে গিগাবাইট শেষ হলেও সিগন্যাল না দিয়ে মূল ব্যালান্স থেকে টাকা কেটে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তমাল মির্জা বলেন, ‘গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে গ্রামীণফোন অপারেটরের সিম ব্যবহার করছি। ইন্টারনেট ব্যবহারে গ্রামীণফোনে খুব একটা সুবিধা না থাকাই ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ে রবি আজিয়াটা ব্যবহার করছি। তবে বর্তমানে দুটো অপারেটরেই বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ করছি ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ে গিগাবাইট দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
একই ধরনের অভিযোগ করেন ই-কমার্স ব্যবসায়ী ইকরাম আলী। তিনি বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে ক্লিক বিডি ডটকম পরিচালনা করছি। অনলাইনে ব্যবসা করায় সারাক্ষণই অনলাইনে থাকতে হয়। অফিসে ব্রডব্যান্ডের সংযোগ থাকলেও কাস্টমারদের পণ্য ডেলিভারি দিতে গেলে মোবাইলে ডেটা ব্যবহার করতে হয়। তাই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সংযোগ পেতে গ্রামীণফোন অপারেটরের সিম ব্যবহার করি। গ্রামীণফোনের ৩৭ টাকায় ৭৫ এমবি ইন্টারনেট প্যাকেজটি ব্যবহার করছি। এর মেয়াদ সাত দিন হলেও দুই দিনেই শেষ হয়ে যায়। অথচ আগেও একই প্যাকেজ একই রকমভাবে চার দিন পর্যন্ত ব্যবহার করেছি।’
রাজধানীর মৌচাকের অধিবাসী রবি আজিয়াটা গ্রাহক জিল্লুর কামাল বলেন, ‘দেশে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো সেবা দিচ্ছে ব্যবসা করার জন্য। সব অপারেটরের অবস্থা একই রকম। রবির পাশাপাশি গ্রামীণফোনও ব্যবহার করছি। তবে রবির তুলনায় গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের এমবি দ্রুত শেষ হয়ে যায়।’
গ্রাহকদের মতে, দেশের সবচেয়ে বেশি প্রতারণা করছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। বড় ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না থাকায় মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর প্রতারণা ক্রমেই বাড়ছে। দেশে যে পরিমাণ প্রতারণা হচ্ছে তার খুব সামান্য একটি অংশ ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ করতে আসে। অথচ এর বাইরেও সারা দেশে অসংখ্য গ্রাহক প্রতারণার শিকার হলেও কেউ নজর দিচ্ছে না। আবার অনেক গ্রাহক জানেই না তার সঙ্গে প্রতারণা হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, দেশে বিপুল পরিমাণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। আর এসব গ্রাহকের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকারি কিছু অসৎ, লোভী কর্মকর্তার কারণেই মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো বিভিন্ন অপরাধে পার পেয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তারা।
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুহিউদ্দিন আহম্মেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দেশে মোবাইল ফোন অপারেটগুলোর গত মাস পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজার অভিযোগ ভোক্তা অধিকারে জমা পড়েছে। বড় ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না থাকায় এসব অভিযোগ আগের তুলনায় বাড়ছে। এর আগে গ্রাহকদের এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ২২ নভেম্বর গণশুনানি হয়েছে, যেটি এখনও পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি।’
মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শাহজাহান মাহমুদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করার কোনো সুযোগ নেই। কোনো মোবাইল ফোন অপারেটর যদি এ ধরনের প্রতারণা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ খুব তাড়াতাড়ি বিষয়গুলো নিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলেও তিনি জানান।