রহমত রহমান: বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী মোট জনগোষ্ঠীর হিসেবে বিশ্বে যে দেশগুলো ইন্টারনেট সংযোগে পিছিয়ে রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বিটিআরসির হিসেবে দেশে প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর তুলনায় তা অনেক কম। এর মূল কারণ ইন্টারনেটের দাম বেশি।
ইন্টারনেটের দাম বেশির কারণ হিসেবে মোবাইল অপারেটররা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হার বেশি বলে দাবি করে আসছে। ইন্টারনেট ব্যবহার সহজ ও প্রযুক্তি ছোঁয়ায় সব মানুষকে আনতে ইন্টারনেটের ওপর মূসক হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব অনুমোদন করেন। এর মধ্য দিয়ে একদিকে রাজস্ব কমলেও অন্যদিকে রাজস্ব বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিরা।
সূত্র জানায়, একজন গ্রাহক যে কোনো মোবাইল অপারেটরের ১০০ টাকার ইন্টারনেট ব্যবহার করলে তার ওপর ১৫ শতাংশ হারে বা ১৫ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। ১০ শতাংশ কমানোর ফলে এখন দিতে হবে পাঁচ শতাংশ বা পাঁচ টাকা। ভ্যাট ছাড়াও ১০০ টাকার ইন্টারনেট ব্যবহার করলে এক টাকা উন্নয়ন সারচার্জ ও পৌনে ছয় টাকা সম্পূরক শুল্কসহ মোট ২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ রাজস্ব দিতে হয়। এনবিআরের হিসেবে বছরে মোবাইল ইন্টারনেট থেকে প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার।
ইন্টারনেটে ভ্যাটের কারণে খরচ বেশি বলে দাবি করে আসছে বেসিসসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিবিষয়ক কয়েকটি সংগঠন। এ খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা ইন্টারনেট ভ্যাটমুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে আসছেন। তাদের দাবি, ইন্টারনেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও অন্যান্য শুল্ক মিলিয়ে মোট কর ২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। দেশে যে পরিমাণ ইন্টারনেট ব্যবহার হয়, তা থেকে (২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ) সরকারের আয় হয় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা। বক্তাদের দাবি, এই শুল্ক কর প্রত্যাহার করা হলে সরকার এ খাত থেকে পরোক্ষভাবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারবে। তারা মনে করেন, ইন্টারনেট এখন আর বিলাসী পণ্য নয়। তথ্যপ্রযুক্তি তথা ইন্টারনেটনির্ভর শিল্পে ইন্টারনেট হলো কাঁচামাল। এর ওপর থেকে শুল্ক ও কর প্রত্যাহার না করলে এ শিল্প কখনও শক্ত ভিত পাবে না।
সূত্র আরও জানায়, প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ইন্টারনেটে ভ্যাট কমানোর বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ইন্টারনেটের ভ্যাট বাড়ানো না হলেও কমানোর বিষয়ে কোনো প্রস্তাব করা হয়নি। সাবেক বেসিস ও বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জব্বারও দীর্ঘদিন হতে ইন্টারনেটের ওপর হতে ভ্যাট তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে অর্থমন্ত্রীর কাছ হতে ইন্টারনেটের এ ভ্যাট ছাড়ের প্রতিশ্রুতিও তিনি আদায় করে নিয়েছিলেন। মন্ত্রী হওয়ার পরও বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। প্রস্তাবিত বাজেটের পর আবার অর্থমন্ত্রীর কাছে ইন্টারনেটের ভ্যাট কমানোর সুপারিশ করেন।
সূত্র জানায়, ২১ জুন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে অর্থমন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী, এনবিআর চেয়ারম্যান এবং বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনগুলোর বাজেট সংক্রান্ত দাবি ও আপত্তিগুলো নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে ইন্টারনেটে ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল অর্থমন্ত্রী ফাইলে সই করেন।
গতকাল সচিবালয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, অর্থমন্ত্রী ভ্যাট পাঁচ শতাংশ করে ফাইলে সই করেছেন। ফলে এখন থেকে ইন্টারনেটের ওপর ভ্যাট পাঁচ শতাংশ। বাজেট পাসের দিনই প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেবেন। এরপরই এটি কার্যকর করা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের খরচ ১০ শতাংশ খরচ কমবে।
এ বিষয়ে এনবিআরের একজন প্রথম সচিব শেয়ার বিজকে বলেন, ইন্টারনেটের মূসক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করতে বেসিসসহ কয়েকটি সংগঠন দাবি করেছে। এছাড়া মোবাইল ফোন অপারেটররা ভ্যাট প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। পরে অর্থমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে এনবিআরকে বলেছে। আমরা ভ্যাট কমালে রাজস্ব আয়ে প্রভাব পড়বে কিনাÑসে বিষয়ে মতামত দিয়েছে। গতকাল অর্থমন্ত্রী তাতে সই করেছে শুনেছি। তবে বাজেট পাসের দিন সংসদে ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেয়ার বিজকে বলেন, ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে পাঁচ শতাংশ করার ফলে প্রযুক্তি খাতে পরিবর্তন আসবে। যারা বেশি ব্রান্ডউইচ ব্যবহার করে তারা বেশি উপকৃত হবে। তবে সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাও এর সুবিধা পাবেন।
অ্যামটব মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, সব পর্যায়ে ইন্টারনেটের ব্যবহারের ওপর থেকে ভ্যাট তুলে নেওয়া হলে তা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে ভ্যাট তুলে নিলে খরচ কমবে এবং ইন্টারনেট ডেটার ব্যবহার বাড়বে। তাতে করে সরকারের সামগ্রিক আয় বৃদ্ধি পাবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বর্তমানে সক্রিয় মোবাইল সংযোগের সংখ্যা সাড়ে ১৪ কোটি। আর ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা আট কোটির বেশি।

Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 4:36 am
ইন্টারনেটে ভ্যাট কমে পাঁচ শতাংশ হচ্ছে
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: