নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মানুষের ঘরে থাকার সময় মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক প্রথম মাসে বাড়লেও এপ্রিলের শেষে কমেছে দুটিই। এপ্রিল শেষে দেশে মোট মোবাইল গ্রাহক ১৬ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার এবং ইন্টারনেট গ্রাহক ১০ কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার বলে জানিয়েছে বিটিআরসি।
মার্চের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, এপ্রিল শেষে মোবাইল গ্রাহক কমেছে ২৪ লাখ ১৭ হাজার এবং ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে ২০ লাখ ৬৭ হাজার। তবে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে। দেশের বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গ্রাম ও শহরে অবস্থানের কারণে বিভিন্ন অপারেটরের ভিন্ন ভিন্ন সিম ব্যবহার কমায় মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে বলে মনে করছে বিটিআরসি।
মোবাইল গ্রাহকের মধ্যে গ্রামীণফোনের সাত কোটি ৪৩ লাখ ৬১ হাজার, রবির চার কোটি ৮৮ লাখ ৪৩ হাজার, বাংলালিংকের তিন কোটি ৪৮ লাভ ৭৬ হাজার এবং টেলিটকের ৪৮ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। আর মোট ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ৯ কোটি ৩১ লাখ এক হাজার, ওয়াইম্যাক্স দুই হাজার এবং আইএসপি ও পিএসটিএন গ্রাহকসংখ্যা আট লাখ ৮৪ হাজার।
গত ৮ মার্চে দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী চিহ্নিত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। মানুষের ঘরে থাকার সময়ে অনলাইনভিত্তিক কাজের কারণে ইন্টারনেট গ্রাহক বেড়ে যায় ৩০ লাখের বেশি।
মার্চ মাস শেষে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার। মোট ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে ৯ কোটি ৫১ লাখ ৬৮ হাজার, ওয়াইম্যাক্স দুই হাজার এবং আইএসপি গ্রাহক আট হাজার ৮৪। গ্রাহক কমে যাওয়ার বিষয়ে বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেন খান বলেন, দেশের বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গ্রাহকের নতুন সংযোগ ক্রয়ের প্রবণতা কমেছে, যা সাময়িক সময়ের জন্য হতে পারে। তাছাড়া গ্রাম ও শহরে অবস্থানের কারণে বিভিন্ন অপারেটরের ভিন্ন ভিন্ন সিম ব্যবহারও কমেছে।
মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এসএম ফরহাদ গত ১৬ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, করোনাভাইরাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে ছয় কোটির বেশি মোবাইল গ্রাহক ঢাকা থেকে গ্রামে এবং গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় যাতায়াত করেছে। আমাদের হিসাবে ৪০-৪৫ শতাংশ গ্রাহক ঢাকা শহর ছেড়ে চলে যায়।
লক্ষ করা গেছে, করোনার কারণে লকডাউনে মানুষ গ্রামের দিকে চলে গেছে। এ সময় ভিন্ন অপারেটরের সিম কেনার প্রবণতা কমে যায়। মানুষ কাস্টমার কেয়ারেও যায়নি। যে এলাকায় যে অপারেটরের নেটওয়ার্ক ভালো, গ্রাহক সেটি ব্যবহার করছে। সে কারণে গ্রাহক কম হতে পারে। এই ৪০ শতাংশের হিসাবে দেশের প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি গ্রাহকের মধ্যে ছয় কোটির বেশি শহর থেকে গ্রামে মুভ করেছে। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে দেশে প্রযুক্তি ব্যবহারের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে জানান, কভিড-১৯ মহামারিকালে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ, ই-কমার্সে কেনাকাটা বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৫০ লাখ।
দুর্যোগ ও মহামারিকালে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেই অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সচল রাখার এটি একটি প্রকৃষ্টতম উদাহরণ বলে মনে করেন পলক। এর আগের মাসেও মোবাইল ও ইন্টারনেটের গ্রাহক বাড়ার ধারাবাহিকতা ছিল। গত ফেব্রুয়ারি শেষে মোট ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮৪ হাজারের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ৯ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার, ওয়াইম্যাক্স পাঁচ হাজার এবং আইএসপি গ্রাহক ৫৭ লাখ ৪৩ হাজার ছিল।
মার্চ শেষে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ কোটি ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের সাত কোটি ৫৩ লাখ ৩৩ হাজার, রবির চার কোটি ৯৭ লাখ ১৮ হাজার, বাংলালিংকের তিন কোটি ৫৩ লাখ ৭৩ হাজার এবং টেলিটকের ৪৯ লাখ ১৩ হাজার। ফেব্রুয়ারিতে মোট মোবাইল গ্রাহক ছিল ১৬ কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজারÑগ্রামীণফোনের সাত কোটি ৫৮ লাখ ৬০ হাজার, রবির চার কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার, বাংলালিংকের তিন কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজার ও টেলিটকের ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার।