ইন্টারনেট বা অন্তর্জালে যুক্ত থাকা মানে বিশ্বের সব কম্পিউটার সার্ভারের সঙ্গে ব্যবহারকারীকে যুক্ত রাখা। এটি নিছক যোগাযোগের মাধ্যম নয়; এর গুরুত্ব ও বিস্তৃতি এখন এত বেশি যে, এটি ছাড়া এক মুহূর্তও যেন চলতে পারে না বিশ্ব। ইন্টারনেট বিপ্লবের ঢেউ প্রবলভাবে আছড়ে পড়েছে আমাদের দেশেও। বলা যায় খুব দ্রæত মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সেবার সম্প্রসারণ হয়েছে। মফস্বলের ছোট দোকানেও কিশোর-তরুণরা এমবি কার্ড কিনছে এখন। এমন কোনো প্রবাসী খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি দেশে স্বজনদের সঙ্গে ইমো, ভাইবার বা স্কাইপেতে কথা বলেননি; ভিডিও কল করেন না। কিন্তু দেশে ফোরজি সেবা চালু থাকলেও মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটে ভোগান্তি অনেক। এর মধ্যে গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘ইন্টারনেট এখনও সীমিত, লাখো গ্রাহক ভোগান্তিতে’ শীর্ষক খবর এর ব্যবহারকারীদের জন্য হবে আরও অস্বস্তির। ইন্টারনেটের গতি কমে আসায় দেশের গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) কোম্পানিগুলোর ব্যান্ডউইডথ সমস্যার এখনও সুরাহা হয়নি। বকেয়া আদায়ে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি (বিএসসিসিএল) ব্যান্ডউইডথ ডাউন করে দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে দেশের লাখো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। পাওনা না পাওয়া পর্যন্ত বিএসসিসিএল ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ শুরু করবে না। ১৯ আইআইজি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩৮৪ কোটি টাকা পাবে বিএসসিসিএল। এর মধ্যে ৯ আইআইজির কাছে পাওনা প্রায় ১৮২ কোটি টাকা। বকেয়া পরিশোধ না করায় গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে ৫০০ জিবিপিএস (গিগাবিট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। সাবমেরিন কেব্লের এমন সিদ্ধান্তে দেশব্যাপী ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে।
সাবমেরিন কেব্ল থেকে ব্যান্ডউইডথ কিনে মোবাইল অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) কাছে সরবরাহ করে আইআইজি কোম্পানিগুলো। দেশে ব্যবহƒত ব্যান্ডউইডথের পরিমাণ পাঁচ হাজার জিবিপিএস। এর মধ্যে বিএসসিসিএল সরবরাহ করে আড়াই হাজার জিবিপিএস।
মোবাইল ফোন অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) কাছে ব্যবহারকারীদের কোনো বকেয়া নেই। অথচ তাদের বিল অনাদায়ী থাকায় ভোক্তা পর্যায়ের গ্রাহকরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। ইন্টারনেট কোনো বিলাসপণ্য নয়, এটিকে নিত্যপণ্য বললে অত্যুক্তি হবে না।
বিএসসিসিএলের এমডি জানান, বারবার তাগিদ দেয়ার আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলো বকেয়া পরিশোধ করেনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি তাদের চিঠি দিয়েছে। তাতেও সাড়া দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে সরকারের ওপর মহলের সিদ্ধান্তে ব্যান্ডউইডথ বন্ধ করা হয়েছে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, ব্যান্ডউইডথ কমে যাওয়ায় গ্রাহকদের ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে। গ্রাহকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সমস্যায় পড়ছেন। কথাটি আংশিক সত্য। কেননা ইন্টারনেট কেবল যোগাযোগ মাধ্যমের জন্যই ব্যবহার করা হয় না। এর বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। বড় দুর্ভোগ ফ্রিল্যান্সারদের।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তার প্রশ্নÑপাওনা আদায়ে সেবা বন্ধ ছাড়াও নানা উপায় রয়েছে। জনগণকে ভুগতে হয়, এমন সিদ্ধান্ত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান কীভাবে নেয়?
আমরা আশা করি, সরকার অতি দ্রæত ব্যান্ডউইডথ সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা নেবে। যাদের দায়িত্বহীনতায় ব্যবহারকারীদের ভোগান্তি হলো, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হলে এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা পুনর্বার ঘটবে না বলেই আমরা মনে করি।