Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:59 pm

ইন্দোনেশিয়া-সিঙ্গাপুরের ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ ফার্ম চালুর উদ্যোগ

শেয়ার বিজ ডেস্ক:ইন্দোনেশিয়া-সিঙ্গাপুর যৌথভাবে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ ফার্ম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। দেশ দু’টি আগামী বছরের মধ্যে যেন এই ভাসমান ফার্ম চালু করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করছে। খবর: দ্য স্ট্রেইটস টাইমস ও দ্য স্টার।

২০২৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার বাটাম শহরে এ ফার্ম চালু করা হতে পারে। এতে প্রায় ২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে, যা সাগরের তলদেশের কেবল দিয়ে সরবরাহ করা হবে।

কাজের অগ্রগতির ফলে ধারণা করা হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার প্রথম শহর হিসেবে বাটামেই প্রথম ফটোভোলটিক (পিভি) প্লান্ট বৃহৎ আকারে পরিচালনা করা হবে।

বর্তমানে দেশটিতে হাতেগোনা কয়েকটি পিভি প্লান্ট রয়েছে। একেকটি প্লান্ট থেকে ৫০ মেগাওয়াটের কম বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। আগামী অক্টোবরে দেশটির পশ্চিম জাভা প্রদেশে একটি পিভি প্লান্ট থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের আশা করছে দেশটির সরকার।

আরও বড় পরিসরে ফটোভোলটিক ইলেকট্রিসিটি কাজ করতে প্রস্তত সিঙ্গাপুর বলে জানান মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের উপমন্ত্রী রাচমাট কাইমুদ্দিন। তিনি দ্য স্ট্রেইটস টাইমসকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, বাটামে প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করবেন তিনি।

যৌথভাবে এ প্রকল্পের সুফল পাবে দুই দেশ। সিঙ্গাপুর প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে পুনঃব্যবহারযোগ্য জ্বালানির উৎস খুঁজছে, একই সময় ইন্দোনেশিয়া বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে উপকৃত হবে। এতে দেশটি প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ সচেষ্ট হবে এবং ভৌগোলিক সুবিধার যথাযথ ব্যবহার করতে পারবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

জাকার্তাভিত্তিক থিংকট্যাংক (চিন্তক প্রতিষ্ঠান) ইনস্টিটিউট ফর এসেনশিয়াল সার্ভিসেস রিফর্মের নির্বাহী পরিচালক ফেবি তুমিওয়া বলেন, গ্যাসের দাম খুব বেশি এবং অস্থির। বাটামের পিভি প্রকল্প যে শুধু ন্যায্যদামে বিদ্যুৎ বিক্রি করবে তা নয়, সিঙ্গাপুরের বিদ্যুৎ খাতের শুল্ক স্থিতিশীল রাখবে। ইন্দোনেশিয়ায় এর অর্থ, দেশটিতে বিনিয়োগ বাড়বে বলে জানান ফেবি তুমিওয়া।

ইন্দোনেশিয়ার বিদ্যুৎ খাত বর্তমানে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। এর পরিবর্তে পুনঃব্যবহারযোগ্য জ্বালানি বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করছে দেশটি।

ফেবি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক স্বল্পমূল্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। কারণ তাদের সরকার বিদ্যুৎ প্লান্টে কয়লা বিক্রির মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এজন্য পিভি বিদ্যুৎ তৈরি বেশি প্রতিযোগিতামূলক হবে না। এক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগের সঠিক ব্যবহার হবে।

রাচমাট বলেন, বাটাম সৌরবিদ্যুৎ ফার্মের ৪০ শতাংশ স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হবে। এর সরঞ্জাম স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি বলে জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি গ্র্যাজুয়েট রাচমাট আরও বলেন, এই প্রকল্পে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তাভিত্তিক আদারো এনার্জি, টিবিএস এনার্জি উতামা ও মেডকো এনার্জির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে সিঙ্গাপুরের কেপেল করপোরেশনসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

ইন্দোনেশিয়ার প্রতিষ্ঠান আদারো বিদ্যুৎ খাত থেকে শুরু করে স্বর্ণখনি নিয়ে ব্যবসা করে। এদিকে টিবিএস ইলেকট্রিক গাড়ি বিক্রি করে। এছাড়া তেল ও গ্যাস কোম্পানি মেডকোর বেশ সুনাম রয়েছে দেশটিতে।

সিঙ্গাপুরের কেপেলের এক মুখপাত্র জানিয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নিয়ে কাজ করে।

এদিকে নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুর পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ওপর নজর দিয়েছে। ২০৩২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রটি পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পরিমাণ ৮০ শতাংশে উন্নীত করতে চায়। এজন্য প্রায় ২ হাজার ৭০০ কর্মী কাজ করছেন। বিদ্যুৎ খাতের সম্প্রসারণেও ৮০০ কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২০৩২ সালের মধ্যে বর্তমানের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় রাষ্ট্রটির কর্তৃপক্ষ। একই সময়ের মধ্যে কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই কর্মীরা বিতরণ, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, কার্বণ নিঃসরণ কমিয়ে আনা, সৌরবিদ্যুৎ ও স্মার্ট গ্রিডের উন্নয়নে কাজ করবেন।