ইন্দোনেশিয়ায় মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়াবে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভূমিকম্প ও সুনামিতে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। গতকাল পর্যন্ত ৮৩২ জন মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। তবে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জুসুফ কাল্লা সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছেন, প্রাণহানির সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
দেশটির সুলাওয়েসি দ্বীপে গত শুক্রবার ভূমিকম্পের পর ভয়াবহ সুনামি আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল সাত দশমিক পাঁচ। সুনামির ফলে সৃষ্ট ছয় থেকে সাত ফুট উঁচু ঢেউ সুলাওয়েসির পালু শহরকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
সুনামির পর উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার কারণে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জুসুফ কাল্লা জানান, আক্রান্ত এলাকায় দেড়শ’র মতো ভূমিকম্প-পরবর্তী আঘাত হেনেছে। প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাসের এলাকাটিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং মানুষের ভোগান্তি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
আক্রান্ত শহর পালুর প্রধান সড়কগুলো ভূমিধসের কারণে বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রিজ ধসে পড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে আট শতাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৪০ জন। খোলা জায়গায় অস্থায়ীভাবে তৈরি চিকিৎসা তাঁবুগুলোয় বহু আহতকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর প্রায় ১০ হাজার শরণার্থী পালু শহরের ৫০টি পয়েন্টে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পালু শহরে যাওয়ার অনেকগুলো সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়াদের উদ্ধারে ভারী যন্ত্রপাতি মোতায়েন করতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে।
ভূমিকম্পে মসজিদসহ কয়েকশ বাড়ি, হাসপাতাল এবং শপিং সেন্টার ধ্বংস হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে সুনামির বেশ কয়েকটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, আতঙ্কিত লোকজন ভয়ে চিৎকার করে কাঁদছে, কেউ কেউ ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় পালিয়ে যাচ্ছে। ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকবার পরাঘাতের (আফটার শক) কারণে ক্রমাগত কাঁপছে সুলাওয়েসি শহর।
সুনামি আঘাত হানার পর পালুর প্রধান বিমানবন্দরটি বন্ধ রাখা হয়েছে। দেশটির একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সেখানে হেলিকপ্টার ল্যান্ড করানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাজধানী জাকার্তা থেকে কার্গো বিমানে করে ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে সেনাবাহিনী।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পালুর একটি হোটেল ও মার্কেটের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বহু লোক আটকা পড়ে ছিল। ধসে পড়া ওই মার্কেটের সামনে রোববার কয়েকশ লোক জড়ো হয়ে তাদের স্বজনদের সন্ধান করছে। তাদের নিখোঁজ স্বজনরা মার্কেটের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবিত অবস্থায় আটকা পড়ে আছে বলে মনে করছেন তারা।
আর রেড ক্রস জানিয়েছে, জীবিত ও আহতদের উদ্ধারে তাদের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্গত এলাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
একটি উৎসব উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় কয়েকশ লোক পালুর সৈকতে জড়ো হয়েছিল। আবছা অন্ধকারে ধেয়ে আসা পানির দেয়াল সৈকত থেকে তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এতে অনেকেই মারা যায়। শক্তিশালী পানির তোড় সামনে যা পেয়েছে ধ্বংস করে এগিয়ে গেছে।
এদিকে ভূমিকম্পে পালু কারাগারের দেয়ালগুলো ভেঙে পড়ার পর ৫৬০ জন কারাবন্দির মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনতারা। পাশাপাশি দংগাল কারাগার থেকেও প্রায় শতাধিক বন্দি পালিয়েছে।
এর আগে, গত মাসে ইন্দোনেশিয়ার লম্বোক দ্বীপে কয়েক দফা ভূমিকম্প আঘাত হানে। আর গত ৫ আগস্টের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ইন্দোনেশিয়ার লম্বোক দ্বীপেই ৪৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০