ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ চায় ইইউ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের (আইপিএস) সাত ধাপেই কাজ করার সুযোগ থাকার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশকেও এতে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ইউরোপীয় জোটের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক বিশেষ দূত গাব্রিয়েলে ভিসেন্তিন। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’-এ অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাতটি লক্ষ্যের সবকটিতে ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ।’

তিনি বলেন, যখন বাংলাদেশ উন্নত দেশের দিকে যাচ্ছে, তখন আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্পর্ককে গভীর করতে হবে। এটাকে একটা খোলামেলা আমন্ত্রণ হিসেবে নিতে পারে বাংলাদেশ।

টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমৃদ্ধি, সবুজায়ন, সমুদ্রে সুশাসন, ডিজিটাল সুশাসন ও অংশীদারিত্ব, কানেক্টিভিটি, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা এবং মানবিক নিরাপত্তা এ সাতটি লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে তারা। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় গত বছর ইইউর তরফে এই কৌশল নির্ধারণ করা হয়।

নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতে কাজের প্রক্রিয়া স্পষ্ট করার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে ভিসেন্তিন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানতে চেয়েছেন, ইইউর সর্বজনীন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নীতিতে কীভাবে অংশগ্রহণ করা যাবে। ইইউর দেশি অসামরিক ও সামরিক মিশনে অনেক ধরনের উদ্যোগ আছে, যেটাতে অংশগ্রহণ করা যায়, যা উম্মুক্ত ব্যাপার। যৌথ মহড়ার মতো কার্যক্রম এতে আছে। ভিয়েতনামের সঙ্গে আমাদের এমন একটি সমন্বিত সহযোগিতার চুক্তি আছে, যেটা বাংলাদেশও অনুসরণ করতে পারে।

মেরিটাইম নিরাপত্তা ও সেখানে অপরাধ পর্যবেক্ষণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৈরি ‘ক্রিমারিও’ সফটওয়্যার বাংলাদেশের ব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিশেষ দূত। তিনি বলেন, সমুদ্রে সচেতনতা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা চলছে, যেটার নাম ক্রিমারিও। এটা একটি সফটওয়্যার নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডগুলোকে তাৎক্ষণিক তথ্য দিয়ে থাকে। অবৈধ মাছ শিকার এবং মানুষ ও মাদক পাচারের তথ্য খুব সহজে পাওয়া যায় এর মাধ্যমে।

ইইউর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের বড় অংশজুড়ে ’কানেক্টিটিভিটি’ রয়েছে বলে জানিয়ে বিশেষ দূত বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের দর্শন হচ্ছে সংযোগ তৈরি করা, নির্ভরশীলতা নয়। এ প্রকল্পগুলোয় ঋণের ব্যবস্থা হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিপ্রেক্ষিত চিন্তা করে। সুতরাং এটা ঋণগ্রহীতা দেশের নির্ভরশীলতা তৈরির বদলে তাদের উন্নয়নে সহযোগিতা করবে।

ভারত ও প্রশান্ত সাগরাঞ্চলে চীনের আধিপত্য ঠেকানোর লক্ষ্য নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। জো বাইডেন সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ওই কৌশলে পরিবর্তন আসার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন ভিসেন্তিন। তবে ইইউর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল শুরু থেকেই সবার জন্য ‘উম্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ হিসেবে রয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, যেসব অংশীদার আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়, এটা সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উম্মুক্ত। আফ্রিকার পূর্ব উপকূল থেকে শুরু করে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত এটা বিস্তৃত, যার মধ্যে চীনও রয়েছে। আমাদের কৌশল সহযোগিতার জন্য, বিরোধ বাধানোর জন্য নয়।

প্রতিরক্ষা ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন উপস্থিতি বাড়াতে চায় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অপারেশন আতালান্তা চলমান রয়েছে, যাতে আমরা স্থানীয় নৌবাহিনীর মাধ্যমে অনেক যৌথ মহড়াও করেছি। আমরা নতুনভাবে সমন্বিত মেরিটাইম কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, যা ভারত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে হরমুজ প্রণালী পর্যন্ত বিস্তৃত।

রোহিঙ্গা ইস্যুত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় কোনোভাবে স্থায়ী কিছু নয়, তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত একটি সাময়িক ব্যবস্থা মাত্র। এটা আমরা স্বীকার করি এবং গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করি। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার একটা বাস্তবিক উপাদান রয়েছে, সে কারণে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি।

ডিক্যাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাসের সঞ্চালনায় সংলাপে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈনউদ্দীন স্বাগত বক্তব্য দেন

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০