নিজস্ব প্রতিবেদক: প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করা হলেও পুঁজিবাজারে আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) ছাড়ার অনুমোদন পেয়েছে ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা তুলবে। গতকাল মঙ্গলবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সভায় কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বরাবর পাঠানো ইন্দো-বাংলা ফার্মার শেয়ারহোল্ডার প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তোলা হয়। কোম্পানির চেয়ারম্যান আজিজা ইয়াসমিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এফ এম আনোয়ারুল হকসহ সব পরিচালকের বিরুদ্ধে গত বছর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেন এ শেয়ারহোল্ডার। সিআর মামলা দুটির মধ্যে ৭২৩/১৬ নং মামলাটি চলমান। আর ৭২৪/১৬ নং সিআর মামলাটি বিচারের অপেক্ষায় আছে বলে শেয়ারহোল্ডারের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। দায়ের করা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গত ১১ জুন আদালত বরিশাল পুলিশ সুপারকে ইন্দো-বাংলা ফার্মার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সব পরিচালককে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। আসামিরা গ্রেফতার এড়িয়ে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন।
জানা গেছে, আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি বাজারে দুই কোটি শেয়ার ছেড়ে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। এজন্য প্রতিটি শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা। পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে কোম্পানিটি কারখানা, প্রশাসনিক ভবন, গুদাম ও গ্যারেজ ভবন নির্মাণ, মেশিনারিজ ক্রয় ও আইপিও খাতে ব্যয় করবে।
কোম্পানিটির ৩০ জুন ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে দুই দশমিক ৬২ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬৩ টাকা।
আইপিওতে কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড, ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও সিএপিএম অ্যাডভাইজরি লিমিটেড।
এদিকে মামলার কারণ জানতে চাইলে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডার ও মামলা দুটির বাদী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, ইন্দো-বাংলা ফার্মার পরিচালনা পর্ষদকে সৎ ও দক্ষ মনে করে ২০১৫ সালে কোম্পানিটির কিছু শেয়ার ক্রয় করি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কোম্পানির পর্ষদ একদল প্রতারণাকারী। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এফ এম আনোয়ারুল হক তার স্বাক্ষরিত নিজের ও কোম্পানিরি দুটি চেকে মোট এক কোটি ৫০ লাখ টাকা আমার পাওনা বাবদ দিয়েছিল। কিন্তু ওই টাকা এখনও পরিশোধ করেনি। নিজের টাকা আদায়ের জন্য আইনি আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি।
ইন্দো-বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পুরো পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সুযোগ পেলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ারহোল্ডার মাহমুদুল হাসান। একই সঙ্গে তিনি মামলা দুটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানিটির অর্থ উত্তোলনের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বিএসইসির কাছে আবেদন করেন।
পারিবারিক কোম্পানি ইন্দো-বাংলা ফার্মার পরিচালক পদে রয়েছেন হাফিজা ইয়াসমিন, মো. আমিন-উর-রশিদ, সাঈদা হক, ফাতিমা পারভীন, শাহনাজ আক্তার, মিজানুর রহমান ও আইসিবি মনোনীত পরিচালক হিসেবে রয়েছেন এমদাদ হোসাইন মোল্লা। এছাড়া তিন স্বাধীন পরিচালক রয়েছে কোম্পানিটিতে।
এদিকে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইন্দো-বাংলা ফার্মার অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি পরিদর্শন করে। কমিটির প্রতিবেদনে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ২০টি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল এবং ১৪টি কোম্পানির সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক (নন-পেনিসিলিন, পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপ) ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিলের সুপারিশ করা হয়। এ তালিকায় ইন্দো-বাংলা ফার্মার নাম ছিল বলে জানা গেছে।
Add Comment