নিয়াজ মাহমুদ : প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবেদন করেছে ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ‘ফিক্সড প্রাইস’ পদ্ধতিতে ২০ কোটি টাকা তুলতে চাওয়া ওষুধ খাতের এ কোম্পানিটির বিরুদ্ধে প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডারধারীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে রয়েছে। এ বিষয়ে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে দুটি মামলাও বিচারাধীন রয়েছে আদালতে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানিটির অর্থ উত্তোলনের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বরাবর আবেদন করেছেন কোম্পানিটির একজন শেয়ারহোল্ডার।
কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডার প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান গত বৃহস্পতিবার বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বরাবর এ আবেদন করেন। ওই আবেদনে ইন্দো-বাংলা ফার্মার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তোলা হয়। কোম্পানিটির চেয়ারম্যান এজিজা ইয়াসমিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএফএম আনোয়ারুল হকসহ সব পরিচালকদের বিরুদ্ধে গত বছর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন এ শেয়ারহোল্ডার। সিআর মামলা দুটির মধ্যে ৭২৩/১৬ নং মামলাটি চলমান। আর ৭২৪/১৬ নং সিআর মামলাটি বিচারের অপেক্ষায় আছে বলে শেয়ারহোল্ডারের অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
জানতে চাইলে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডার ও মামলা দুটির বাদী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ইন্দো-বাংলা ফার্মার পরিচালনা পর্ষদকে সৎ ও দক্ষ মনে করে ২০১৫ সালে কোম্পানিটির কিছু শেয়ার ক্রয় করি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কোম্পানির পর্ষদ একদল প্রতারণাকারী। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএফএম আনোয়ারুল হক তার স্বাক্ষরিত নিজের ও কোম্পানিরি দুটি চেকে মোট এক কোটি ৫০ লাখ টাকা আমার পাওনা বাবদ দিয়েছিল। কিন্তু ওই টাকা এখনও পরিশোধ করেনি। নিজের টাকা আদায়ের জন্য আইনি আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি।’
ইন্দো-বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পুরো পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সুযোগ পেলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ারহোল্ডার মাহমুদুল হাসান। একইসঙ্গে তিনি মামলা দুটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানিটির অর্থ উত্তোলনের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বিএসইসির কাছে আবেদন করেছেন।
বিএসইসিতে শেয়ারহোল্ডারের অভিযোগ ও আদালতে মামলা প্রসঙ্গে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএফএম আনোয়ারুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে জানতে চাইলে বিএসইসির ক্যাপিটাল ইস্যু বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য কোম্পানিটি যদি বিদ্যমান আইনের পরিপন্থি ও কোনো তথ্য গোপন করে, তাহলে সিকিউরিটিজ আইনানুযায়ী আইপিও অনুমোদন পাবে না। এমনকি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।’
জানা গেছে, দায়েরকৃত মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গত ১১ জুন আদালত বরিশাল পুলিশ সুপারকে ইন্দো-বাংলা ফার্মার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সব পরিচালককে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। আসামিরা গ্রেফতার এড়িয়ে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির বড় সংকট রয়েছে। তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানিতেই নেই করপোরেট সুশাসন। এমন পরিস্থিতিতে যদি বিতর্কিত কোম্পানিকে আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়, তাহলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি হবে না। এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আর লাভবান হবেন উদ্যোক্তা পরিচালকরা। আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিএসইসিকে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ বাজারসংশ্লিষ্টদের।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ফিক্সট প্রাইস পদ্ধতিতে আইপিও মাধ্যমে ইন্দো-বাংলা ফার্মা পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য বিএসইসিতে আবেদন করেছে। কোম্পানিটি দুই কোটি শেয়ার ছেড়ে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা, আর পরিশোধিত মূলধন ৭৩ কোটি টাকা।
ইন্দো-বাংলা ফার্মাকে পুঁজিবাজারকে তালিকাভুক্ত করতে ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে এএফসি ক্যাপিটাল, ইবিএল ইনভেস্টমেন্ট ও সিএপিএম এডভাআরি লিমিটেড। কোম্পানিটি ২০১৪ সালে জয়েন্ট স্টকের অনুমোদন নিয়ে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। বিভাগীয় শহর বরিশালের কারখানায় কোম্পানিটির উৎপাদন কার্যক্রম চলছে।
পারিবারিক কোম্পানি ইন্দো-বাংলা ফার্মার পরিচালক পদে রয়েছেন হাফিজা ইয়াসমিন, মো. আমিন-উর-রশিদ, সাঈদা হক, ফাতিমা পারভীন, মোসা. শাহনাজ আক্তার, মিজানুর রহমান ও আইসিবি মনোনীত পরিচালক হিসেবে রয়েছেন এমদাদ হোসাইন মোল্লা। এছাড়া তিন স্বাধীন পরিচালক রয়েছে কোম্পানিটিতে।
এদিকে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইন্দো-বাংলা ফার্মার অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ভেজাল এবং নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি পরিদর্শন করে। কমিটির প্রতিবেদনে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ২০টি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল এবং ১৪টি কোম্পানির সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক (নন-পেনিসিলিন, পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন) ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিলের সুপারিশ করা হয়। এ তালিকায় ইন্দো-বাংলা ফার্মার ছিল বলে জানা গেছে।
Add Comment