নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের বাজারে তামাক ও অ্যালকোহল ছাড়া বাংলাদেশের সব পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু দেশটির বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বিভিন্ন ধরনের নন-ট্যারিফ (অশুল্ক) ও প্যারা-ট্যারিফ বাধা রয়েছে। এগুলো দূর করা জরুরি। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার চতুর্থ ইন্দো-বাংলা বাণিজ্যমেলায় এসব কথা বলেন।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই) আয়োজিত এ মেলার উদ্বোধন করেন তিনি। তিন দিনব্যাপী বাণিজ্যমেলায় ভারত ও বাংলাদেশের অটোমোবাইল, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ইলেকট্রনিকস, গৃহস্থালির সামগ্রী, পেইন্টস, ব্যাংকিং সেবা, পাওয়ার জেনারেশন, ইন্স্যুরেন্স, টেক্সটাইল, সিমেন্ট তৈরিসহ বিভিন্ন খাতের প্রায় ৩০টি কোম্পানি অংশ নেয়। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উš§ুক্ত থাকবে।
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ ও ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্টার্স অরগানাইজেশন মেলার সহযোগিতা করছে। এতে ভারতীয় বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।
উদ্বোধনী আইবিসিসিআই’র সভাপতি তাসকিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, এফবিসিসিআই’র সভাপতি ও নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহ্মাদ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার বাংলাদেশ-প্রধান অভিজিৎ চক্রবর্তী, আইবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি দেওয়ান সুলতান আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ অনেক ভালো হয়েছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকার ভারতীয় ব্যবসায়ীদের জন্য তিনটি অর্থনৈতিক জোন বরাদ্দ দিচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, বাংলাদেশ ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দিচ্ছে। ভারতের সীমান্ত থেকে কাছাকাছি বাগেরহাট ও অন্যটি মোংলায় স্থাপিত দুটি জোন ইতোমধ্যে উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে আরেকটি অঞ্চল পাবো বলে আশা করা হচ্ছে। এগুলো বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগকে গতিশীল করবে। অনেক ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে।
তিনি দুদেশের বাণিজ্যের তথ্য তুলে ধরে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য-সহযোগী। গত ১৫ বছরে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের রফতানি ১০ গুণ বেড়েছে। আর বাংলাদেশের বাজারে ভারতের রফতানি বেড়েছে ৬ গুণ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার।
আবদুল মাতলুব আহ্মাদ বলেন, তিন কারণে ভারতীয় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তাদের কারখানা তৈরি করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের সঙ্গে ৩৯টা দেশের শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা আছে যেসব দেশের সঙ্গে ভারতের সে সুবিধা নেই। ফলে ভারতীয় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন করতে পারলে, তা বাংলাদেশ থেকে ওইসব দেশে রফতানি করা যাবে। এতে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর ব্যবসা হবে। বাংলাদেশেরও রফতানি হবে। ভারতীয় কোম্পানিগুলো এর পাশাপাশি বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যগুলো তাদের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে নিয়ে যেতে পারবে। এছাড়া বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের বাজার তো আছেই। বাংলাদেশে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের মাধ্যমে এভাবে উভয় পক্ষ উপকৃত হবে বলে মন্তব্য করেন আবদুল মাতলুব আহমাদ।