Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 9:04 pm

ইফতারে অস্বাস্থ্যকর রাস্তার খাবার বাড়াচ্ছে ঝুঁকি!

ইফতারের নামে অস্বাস্থ্যকর রাস্তার খাবার বুঝে না বুঝে চলছে ক্রয়-বিক্রয়। রমজানে রাজধানীর ফুটপাত দখল করে ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। কিন্তু ইফতার বিক্রির জায়গা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এসব বিক্রেতার লক্ষ্য থাকে, যেখানে জনসমাগম বেশি সেখানেই খোলা আকাশের নিচে একটি টেবিল নিয়ে বসে পড়েন তারা। খোলা জায়গায় ইফতার বিক্রি কতটা অস্বাস্থ্যকর ও মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ও ঝুঁকির তা জানে না এসব বিক্রেতা। ক্রেতাদের কেউ জেনে, কেউ না জেনেই করছে ভিড়!

রাজধানীর অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইফতার বিক্রির দোকান। মিরপুর ১ ও ২ নম্বরসহ শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া এলাকায় স্যাঁতসেঁতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে টেবিল পেতে ইফতার বিক্রি করছেন অনেকে। পুরান ঢাকায় শাহী ইফতারির ঐতিহ্যের নামে চলছে বেশি উন্মাদনা। উš§ুক্ত নর্দমার পাশে দুর্গন্ধ যুক্ত ধুলাবালির মধ্যেই চলছে বেগুনি, পিঁয়াজু, জিলাপি, আলুর চপ, ছোলা, সবজি চপ, বুন্দিয়াসহ স্পেশাল আইটেম হিসেবে হালিম নিয়ে হাঁকডাক দিচ্ছেন ইফতার বিক্রেতারা। তারা খালি হাতেই খাবার ধরছেন আবার অন্য কাজও করছেন।

রাস্তার পাশে খোলা ও নোংরা পরিবেশে ইফতার বিক্রি করেছেন একজনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ময়লা তো রাস্তায়। টেবিল তো পরিষ্কার। তাহলে সমস্যা কী? আর মানুষ তো কিনে খাচ্ছে। একদিনও তো খাবার বিক্রি না করে ফেরত নিয়ে যেতে হয় না। আর এখন তো ধুলাবালি নেই। বৃষ্টি হইছে একটু আগে। রাস্তায় ধুলাবালি থাকলে খাবার পলিথিন দিয়ে ঢাইকা বিক্রি করি। এমন একই মন্তব্য ফুটপাতের প্রায় সব ইফতার বিক্রেতাদের।

পুরান ঢাকায় ব্যাচেলর থাকেন; যারা ছাত্র বা চাকরিজীবী। তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না বাসায় ইফতার বানানো। তাই রাস্তার পাশে থেকে আলুর চপ, বেগুনি, পিঁয়াজু কিনে নিয়ে যায়। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি ভাজা-পোড়া খাবারগুলো শরীরের শিরা ধমনীতে চর্বির পুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। এতে হƒদরোগসহ উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, খোলা ও নোংরা স্থানের খাবারে ডায়রিয়ার ঝুঁকি আছে। এসব কারণে সম্প্র্রতি ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। তাই এসব খাবার পরিহার করা জরুরি। সারাদিন রোজা রাখার পর এসব খাবার স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি সৃষ্টি করতে পারে। আবার সুস্থ মানুষও এসব খোলা খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে রমজান মাসে বুকে ব্যথাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। 

শুধু মুখারোচক অস্বাস্থ্যকর রাস্তার খাবার রোজাদারদেরই নয়, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব বয়সের মানুষের কাছে এটার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি রমজানের এ সময়ে, কেউ বুঝে আবার কেউবা না বুঝে গ্রহণ করছে এমন খাবার। যার  জন্য একটা অংশ অসুস্থ হচ্ছে কিন্তু কারণটা বুঝতে পারছে ভোগান্তির পর। বিশেষ করে শিশু ও কিশোরদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিটা অনেক বেশি যা তার পরিবারও বুঝতে পারছেন না। মুসলমানদের পবিত্র এই রমজানটা ইবাদতের মাস সবার পবিত্রতা বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি সচেতন হতে হবে সবাইকে সারাদিন রোজা রাখার পর যেন ইফতারের অস্বাস্থ্যকর খাবারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে না হয় কারও। প্রশাসনের উচিত এমন অস্বাস্থ্যকর রাস্তার খাবার দোকানগুলোর জন্য দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে সবাইকে যার যার জায়গা থেকে।  নিজে সুস্থ থাকুন, অন্যকে সুস্থ থাকতে সহযোগিতা করুন।

আবদুল কাদের নাগিব

শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়