নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচন কমিশন ইভিএমে এখনও পুরোপুরি আস্থাভাজন হতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনকে প্রহসনে রূপান্তর করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। এটা আমরা অন্তর থেকে বলছি। সুন্দর ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সুস্থ ধারা অব্যাহত থাকুক।’ গতকাল নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন সিইসি। চার নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা পাঁচটা মিটিং করেছি। (ইভিএমের ওপর) পুরোপুরি আস্থাভাজন হতে পারিনি। আরও মিটিং হবে, সেখানে পর্যালোচনা করব। প্রয়োজনে উš§ুক্ত আলোচনা করব। আমরা বলেছি, ইভিএম নিয়ে সবার আস্থা অর্জন করতে চাই।’
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান মাদারীপুরে গিয়ে বলেন, ‘ইভিএমে ত্রুটি ধরতে পারলে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন সিইসি।’ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নানা মহলে সমালোচনার মধ্যে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি (সিইসি) কোথাও এ ধরনের কোনো বক্তব্য দেননি বলে দাবি করে বলেন, গত তিন মাসে তিনি ‘দশ’, ‘মিলিয়ন’ ও ‘ডলার’ এ তিনটি শব্দ মুখেই উচ্চারণ করেননি। তার কোনো কমিশনার, এমনকি কমিশনের কোনো কর্মচারীও এ ধরনের কোনো বক্তব্য দেননি।
সিইসি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। সিইসি ১০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করেছেন, এটা উদ্ভট কথা। সিইসি এ ধরনের উদ্ভট কথা বলতেই পারেন না। তবে কিছুদিন আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ইভিএম-সংশ্লিষ্টদের কেউ না কেউ এ ধরনের কথা বলে থাকতে পারেন।’
নির্বাচন কমিশনার আনিছুরের বক্তব্যের বিষয়টি সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি তার পক্ষ নিয়েই বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য শোনার পর ইন্টারনাল তদন্ত শুরু করলাম। যারা ইভিএম নিয়ে কাজ করছেন, ইভিএম তৈরি করছেন, তাদের মধ্যে কেউ এটা বলেছেন ভালোবাসা বা উচ্ছ্বাস থেকে। সেখান থেকে এই বিষয়টি এসেছে। এটা নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানের বক্তব্য নয়, তিনি আরেকজনের কাছ থেকে শুনে কোট করতে গিয়ে হয়তো একটু বিভ্রান্ত হয়ে গেছেন।’
নির্বাচন কমিশনার ‘কিছুটা স্মৃতিভ্রম হয়ে’ এ কথা বলে থাকতে পারেন বলেও মন্তব্য সিইসি। তিনি বলেন, ‘এটা কমিশনের বক্তব্য নয়। কোনোভাবে কমিশনের কোনো কর্মচারীও একথা বলেননি, কমিশনার তো দূরের কথা, বলতে পারেন না। (আমরা) মিডিয়ার সামনে কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলি। প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে অনেক সময় সিøপ হয়ে যায়। কমিশনকে অপদস্ত করার জন্য, সিইসিকে অপদস্ত করার জন্য তিনি এটা বলেননি। কথাটা আসলে কিছুটা স্মৃতিভ্রমাত্মকভাবে হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
তবে নির্বাচন কমিশনারদের কথা বলার ক্ষেত্রে আরও ‘সতর্ক অবস্থান নেয়া উচিত’, ‘দায়িত্বশীল হওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘এর মাধ্যমে ইসির অবস্থান অবনমিত হয়েছে। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে এতে। ইসির প্রতি মানুষ আস্থা আনতে চায়। শুরুতে যদি বিনষ্ট হয়ে যায়, তাহলে কমিশন আগামী যে জনপ্রত্যাশিত নির্বাচন করতে চায়, তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এখনও চেষ্টা করছি, চার কমিশনার ও আমি অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দায়িত্ব পালন করার জন্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘বারবার বলেছি, দায়িত্বশীল পদে আছি। এ নিয়ে আরও ১০টা মিটিং হবে, এখন যদি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিইÑইভিএমে কোনো ত্রুটি নেই, এটা হতে পারে না।’
‘দিনের ভোট দিনেই হবে’ ইসি আনিছুরের এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘ভোট তার নিয়মানুযায়ী হবে। দিনের ভোট দিনেই হবে, ভোট রাতে হবে নাÑএটা স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমাদের উনি (ইসি আনিছুর মাদারীপুরে) স্পষ্ট করে বলতে চেয়েছেন, দিনের ভোট দিনেই হবে।’
ইভিএম নিয়ে বক্তব্য আসার পর বিএনপি নেতাদের সমালোচনাকেও ইতিবাচকভাবে দেখেন বলে জানান সিইসি।