নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই লাখ নতুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্পটি ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতি আর আর্থিক সংকটের’ কথা বিবেচনা করে আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার।
নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম গতকাল সোমবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত পেয়েছি। এ মুহূর্তে প্রকল্পটি তারা প্রক্রিয়াজাতকরণ করছে না। বাতিল হচ্ছে না, তবে এ মুহূর্তে হচ্ছে না।’
আগামী নির্বাচন আয়োজনের যে পরিকল্পনা ইসি সাজিয়েছে, তাতে অর্ধেক সংসদীয় আসনে (১৫০টি) ইভিএমে ভোটগ্রহণের ভাবনা ছিল। সেই লক্ষ্যে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ইভিএম ক্রয় ও ব্যবস্থাপনার জন্য গত বছরের অক্টোবরে এ প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।
প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সর্বোচ্চ দেড়শ আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনাও হোঁচট খেল। তবে ইসির হাতে এ মুহূর্তে যে ইভিএম রয়েছে, তা দিয়ে ৫০ থেকে ৬০টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি চলবে বলে নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য।
পরিকল্পনা কমিশন গত রোববার ইভিএম নিয়ে সরকারের এ সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনকে জানায়। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের কাছে তা উপস্থাপন করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানানো হয়।
ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইভিএম সংক্রান্ত প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের পাঠানোর পর কিছু তথ্য সংযোজন করতে বলা হয়েছিল। ইসির সিদ্ধান্তের আলোকে পরিকল্পনা কমিশনে তা পাঠানোও হয়েছিল। পরে পরিকল্পনা কমিশন থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ইভিএম প্রকল্পটি এবার হচ্ছে না। ইভিএম প্রকল্পটির বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে এবং বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় আপতত প্রক্রিয়াকরণ না করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, কমিশন বলেছিল নতুন মেশিন পেলে সর্বোচ্চ দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট হবে। নতুন ইভিএম না পেলে ২০১৮ সালের ইভিএম দিয়ে যত আসনে সম্ভব ইভিএমে ভোট হবে। সে সিদ্ধান্ত বহাল আছে। কমিশনের হাতে এখন অন্তত দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে। এর মধ্যে ব্যবহারযোগ্য ইভিএম দিয়ে ৫০ থেকে ৭০টি আসনে ইভিএমে ভোট হতে পারে।
ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিতর্কের মধ্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোটের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর গত ১৯ অক্টোবর ৮ হাজার কোটি টাকার ওই প্রকল্প তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ইসি। এক দফা ফেরত আসার পর সংস্কার করে পুনরায়ও পাঠানো হয় প্রস্তাব। কিন্তু কোনো অগ্রগতি না দেখে নভেম্বরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছিলেন, মধ্য জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্পটি পাস না হলে পরবর্তী কাজগুলো করা সম্ভব হবে না।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সব কিছু মিলিয়েই আমরা বলেছিলাম, মধ্য জানুয়ারির মধ্যে না হলে আমাদের পক্ষে দেড়শ আসনে করা সম্ভব না। কথাটি বলেছি সর্বোচ্চ। আমাদের হাতে যে ইভিএম আছে তা নিয়ে ৭০ থেকে ৮০টি করতে পারব।’