নিজস্ব প্রতিবেদক: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তারের পর থেকে উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন হাজার গ্রাহক। পাওনাদারের এ উৎকণ্ঠার মধ্যে ইভ্যালির অফিস আবার বন্ধ হলো। গতকাল শনিবার ইভ্যালির ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এখন বাসায় থেকে অফিসের কাজ করবেন।
তবে অফিস বন্ধ থাকলেও উদ্বেগের কোনো কারণ নেই বলে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেছে ইভ্যালি। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, হোম অফিসের মধ্যেও তাদের সব কার্যক্রম স্বাভাবিক সময়ের মতো চলবে।
প্রতারণার বহু অভিযোগের পর এক গ্রাহকের করা মামলায় ইভ্যালির এমডি ও চেয়ারম্যানকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এরপর থেকে আগে মূল্য পরিশোধিত পণ্যগুলো পাওয়া নিয়ে ইভ্যালির হাজার গ্রাহক উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
ইভ্যালির ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, ‘১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ রোজ শনিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ইভ্যালি এমপ্লয়িগণ নিজ নিজ বাসা থেকে অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। হোম অফিস পদ্ধতিতে ইভ্যালির সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মে চলমান থাকবে। আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা আমাদের একান্তভাবে কাম্য। ইভ্যালির ওপর আস্থা রাখুন, পাশে থাকুন। আপনাদের ভালোবাসাই আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।’
ওই নোটিসের নিচে রেজাউল করিম নামের একজন মন্তব্য করেন, ‘দারুণ ভদ্রতার সাথে পালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেয়া যেতে পারে। ইভ্যালি এই ঘোষণার সাথে এটা শিখিয়ে দিল। আপনারা সবাই বাসায় অফিস করেন। শুভ কামনা।’
আসনাদ আহমেদ নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘‘ইভ্যালি বর্তমানে একটি নেতিবাচক ই-কমার্স ব্র্যান্ড। গ্রাহক প্রতারণার ফল যে কত তিক্ত হতে পারে, এবার নিশ্চয়ই তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। ভুয়া ব্যবসায়িক মডেল দিয়ে সাময়িক লাভ পাওয়া গেলেও এর সুদূরপ্রসারী খেসারত দিতে এখন প্রস্তুত থাকুন। দেশের নিরীহ অথচ ‘লোভী’ ক্রেতাদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার এমন অপচেষ্টা যেন আর না ঘটে, সে ব্যাপারে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও বিচার বিভাগসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট মহলের কঠোর অবস্থান কামনা করছি। আর আমজনতার উদ্দেশ্যে একটি কথাই প্রযোজ্য ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। এই ধরনের চটকদার আর লোভনীয় অফারের খপ্পরে পড়বেন, তো মরবেন।’’
কভিড-১৯ মহামারিতে গ্রাহকদের বহু অভিযোগের মধ্যে গত জুনেও ইভ্যালি তাদের অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল। আগস্টের শেষ দিকে এসে খুলেছিল অফিস। রাসেল-শামীমা গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার রাতে ইভ্যালিতে ‘টি-টেন’ ক্যাম্পেইনের পণ্য বিক্রির কথা থাকলেও অর্ডারগুলো অপেক্ষায় রাখা হয়, গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হয়নি।
এর আগে রাত ২টায় ‘টি-১০’ সংক্রান্ত এক ‘জরুরি নোটিসে’ ইভ্যালির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘‘আমাদের প্রধান দুজন সিগনেটরি-সম্মানিত সিইও এবং চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে, আমাদের সেলারদের রেগুলার বিল দিতে পারছি না। এজন্য আমাদের স্বাভাবিক ডেলিভারি কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। তাই আপনাদের করা আজকের ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১-এর টি১০-এর সকল অর্ডার আপাতত রিকোয়েস্ট হিসেবে জমা থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া মাত্রই আপনাদের ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১-এর টি১০-এর সকল অর্ডার কনফার্ম করা হবে। অর্ডার কনফার্ম হলেই আপনারা পেমেন্ট সম্পন্ন করতে পারবেন।’’
মাত্র তিন বছর আগে গড়ে ওঠার পর লোভনীয় অফার ও চটকদার বিজ্ঞাপনে দ্রুত আলোচনায় আসে ইভ্যালি। কিন্তু গ্রাহকের অভিযোগের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপে বেরিয়ে আসে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির দেনা ৪০৩ কোটি টাকা।
সর্বশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মোট চলতি দায় ৫৪৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে মার্চেন্ট বা পণ্য সরবরাহকারীরা পাবেন ২০৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর গ্রাহকদের পাওনা ৩১১ কোটি টাকা।
গত জুলাইয়ে সংকটের চূড়ান্ত পর্ব শুরুর সময় কোম্পানিতে এক হাজার ৯৫০ জনের কর্মসংস্থান ছিল, যাদের বড় অংশই বয়সে তরুণ। তবে সংকটে পড়ার পর কর্মী ছাঁটাইয়ের খবরও এসেছে।