বন্ধ হয়ে যাওয়া বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সাতটি গাড়ি নিলামে বিক্রি করে প্রায় তিন কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এ অর্থ ইভ্যালির গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধে কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান। ইভ্যালিতে হাইকোর্টের গঠন করে দেয়া পরিচালনা পর্ষদ বৃহস্পতিবার গাড়িগুলো নিলামে তুলেছিল।
গতকাল শেয়ার বিজের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিলাম শেষে পর্ষদ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির কাছে পণ্য সরবরাহকারী ও কয়েক লাখ ক্রেতার পাওনা রয়েছে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। বাড়ি ভাড়া বাবদ খরচ, কর্মচারীর বেতন, অন্য পাওনাদার আছেন। ক্রেতা, সরবরাহকারীরা পাওনাদার আছেন। পুঁজি বাড়লে পাওনাদারদের যথাসম্ভব পাওনাগুলো দেয়া যাবে।’
এখন পর্যন্ত ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির যে বিবরণ পাওয়া গেছে, তাতে সম্পদের চেয়ে দায় অনেক বেশি। এ অবস্থায় সব পাওনাদারকে পাওনা পরিশোধের কাজ দুরূহই বটে। নতুন পর্ষদকে তাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ইভ্যালির প্রকৃত দায়দেনার পরিমাণ জানতে উচ্চ আদালত একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা বলেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি অডিট করার জন্য ৮৬ লাখ টাকা চেয়েছিল। কিন্তু এত বেশি টাকায় পর্ষদ কাজটি করাতে চায়নি। একটি খ্যাতনামা নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ২৭ লাখ টাকায় কাজটি করে দিতে সম্মত হয়েছে। কৃচ্ছ্রতা সাধনের চেষ্টা নিঃসন্দেহে আশার খবর।
গত বছরের ১৫ জুন ইভ্যালির নতুন কর্মকর্তাদের জন্য বানানো একটি প্রেজেন্টেশনে দেখানো হয়েছে, ইভ্যালির মাসিক বিক্রির পরিমাণ হাজার কোটি টাকার বেশি। তাতে দেখানো হয়, ওই বছরের মে মাসে ইভ্যালির গ্রস মার্চেন্ডাইজ ভ্যালু (জিএমভি) ছিল ৮০০ কোটি টাকা। জিএমভি ই-কমার্সে ব্যবহৃত একটি ধারণা, যার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে একটি মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া পণ্য বা মার্চেন্ডাইজের পরিমাণ হিসাব করা হয়। ইভ্যালির তথ্য মতে গত বছরের প্রথম চার মাসে ইভ্যালির জিএমভি ৫০০ থেকে ৬০০ কোটির মধ্যে ছিল। আগের বছর সেপ্টেম্বর মাসে জিএমভি ৫০ কোটি টাকার কম ছিল। অর্থাৎ কয়েক মাসের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির জিএমভি ১০ গুণ বেড়েছে। তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে, প্রতি মাসে বিক্রি কয়েকশ কোটি টাকা হওয়ার পরও তাদের ব্যাংক হিসাবে স্থিতি খুব কম কেন এবং তাহলে এতগুলো টাকা গেল কোথায়?
ইভ্যালির যেহেতু সম্পদ নেই, ক্রয়াদেশদাতা ও পণ্য সরবরাহকারীদেরও পাওনা অনেক বেশি। নতুন চেয়ারম্যান বলেছেন, আয় বাড়ানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু দৃশ্যমান সম্পদ না থাকায় পর্ষদকে অর্থ পাচারের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। ইভ্যালি কিংবা সাবেক চেয়ারম্যান মানি লন্ডারিং কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন কি না, তা জানতে হবে। অর্থ পাচার ছাড়াও ইভ্যালির অর্থ কোনো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ও তহবিলে স্থানান্তর করা হয়েছে কি না, তা জানতে সহযোগিতা নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, এনবিআর, দুদক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার। আমরা মনে করি, প্রকৃত তথ্য বের করা গেলে প্রকৃত সম্পদ নিরূপণ করা যাবে এবং তা থেকেই দায় পরিশোধ সম্ভব। সম্পদ ও অর্থ যা-ই পাওয়া যাক, ইভ্যালির অর্থ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।