ইমাম পেটালেন বৃদ্ধ বাবাকে, বাবার হাতে শিশু কন্যা খুন

প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে দেড় বছর বয়সী শিশু কন্যাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পাষন্ড বাবা। গত সোমবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট রায়হান চৌধুরীর খাস কামরায় খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় ঘাতক বাবা ফয়েজ আহাম্মদ মনু (৪৫)। ঘাতক মনু চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা।

অপরদিকে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার পাটবাজার দারুস সালাম জামে মসজিদের ইমাম বদরোদ্দৌজার (৩২) পেটালেন তার বৃদ্ধ বাবা আফতাব উদ্দিন (৯০) কে। পারিবারিক সম্পত্তি জোরপূর্বক নিজের নামে লিখিয়ে নিতে গিয়ে বৃদ্ধ বাবার ওপর চড়াও হন বদরোদ্দৌজা।

আহত বৃদ্ধ আফতাব উদ্দিন রামগঞ্জ উপজেলার কচুয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক। তিনি উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। ৯ ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছেলের বড় জন বদরোদ্দৌজা (৩২)। রামগঞ্জ পাটবাজার দারুস সালাম জামে মসজিদের ইমামতি করেন। তিনি অন্ধ বাবা ও অসুস্থ মাকে নিয়ে পৌর শহরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।

শিশু কন্যা হত্যাকারী ঘাতক বাবা ফয়েজ আহাম্মদ মনু জানায়, পাশের বাড়ির মতিনদের সাথে জমি পরিমাপ এবং বিদ্যুতের লাইন টানা নিয়ে তার সাথে পূর্ব থেকে বিরোধ চলছিল। তাদেরকে হত্যা মামলায় ফাঁসাতেই নিজের শিশু কন্যাকে হত্যার একক পরিকল্পনা নেয় মনু।

গত ৫ই মে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বাড়িতে খেলাধূলা করছিল শিশু রাহিমা। এসময় সবার অজান্তে রাহিমাকে কোলে তুলে বাড়ি থেকে একটু দূরে নির্জন ঝোঁপের কাছে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ সেখানেই লুকিয়ে রাখে। এরপর বাড়িতে এসে তার মেয়ে হারিয়ে গেছে বলে বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন স্বজনরা।

পরে ওইদিন রাতে চন্দ্রগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন মনু। এরপর ৮ মে শুক্রবার রাত ১২টার পরে শিশু রাহিমার লাশ ওই ঝোঁপের থেকে নিয়ে এসে নিজবাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকিতে ফেলে দেয় মনু। পরদিন শনিবার সকাল ৭টায় চন্দ্রগঞ্জ থানায় ফোনে খবর দেয় তার মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে তার বাড়ির টয়লেটের ট্যাংকিতে।

এরপর পুলিশ এসে সেপটিক ট্যাংকি থেকে শিশু রাহিমার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় শিশু রাহিমার মা রাশেদা আক্তার সুমি বাদি হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

রামগঞ্জ শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃদ্ধ আফতাব উদ্দিন জানান, সম্প্রতি বদরোদ্দৌজা পারিবারিক সম্পত্তি তার নামে লিখে দেয়ার জন্য বায়না ধরে। এসময় অন্য সন্তানদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বললে বদরোদ্দৌজা তাকে প্রচণ্ড মারধর শুরু করে। তার মারধরের সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে বদরোদ্দৌজা তাদেরকেও মারার জন্য তেড়ে যায়।

চন্দ্রগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জসীম উদ্দীন বলেন, পুলিশ সুপার ড.এএইচএম কামরুজ্জামানের দিকনির্দেশনায় শিশু কন্যা রাহিমা হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। খুনের যাবতীয় পরিকল্পনা ও লাশ গুমের বর্ণনা দিয়ে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক বাবা ফয়েজ আহাম্মদ মনু।

রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, বৃদ্ধ মানুষটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্ত বদরোদ্দৌজার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০