শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইরানের ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার দুই দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট নতুন এ নিষেধাজ্ঞা দিল। ইসলামিক রেভোলুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ছয় ইরানি নাগরিক ও তিন কোম্পানি নতুন এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। নিষেধাজ্ঞার কারণে এই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবে না। খবর বিবিসি, রয়টার্স।
গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। ডলারে আইআরজিসির প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে সহায়তা করায় ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও এ নিষেধাজ্ঞায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে যেসব ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট তাদের নাম প্রকাশ করেনি।
পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিতে ৯০ থেকে ১৮০ বা এর চেয়েও বেশি দিন লাগতে পারে বলে ধারণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখতে পারবে না। আগে ইরানি এসব প্রতিষ্ঠান আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে লেনদেন করত।
স্টিভেন মুচিন বলেন, ইরান ও এর কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরব আমিরাতের সহায়তায় ডলার অর্জনের সুযোগের অপব্যবহার করেছে। এই সুযোগে তারা আইআরজিসি’কে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ সরবরাহ করেছে। এমনকি আঞ্চলিক ছায়াযুদ্ধে নিজেদের মদদপুষ্ট দলকেও অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করেছে। আমরা আইআরজিসি’র অর্থ সরবরাহ বন্ধ করতে চাই।
ইরানের ইসলামি শাসনব্যবস্থার প্রতিরক্ষায় ১৯৭৯ সালে আইআরজিসি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ইরানের অন্যতম বৃহৎ সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাহিনী।
প্রতিবেদন বলে, বৃহস্পতিবার আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সুনির্দিষ্টভাবে আইআরজিসির বিদেশি শাখা কুদস ফোর্সকেই লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। ট্রাম্প এই কুদস ফোর্সকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত সন্ত্রাসী বাহিনী ও মিলিশিয়া’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। গত বছরের অক্টোবরেও তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।
গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে তেহরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার ঘোষণা দেন। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার শর্তে তেহরানের পরমাণু কর্মসূচির লাগাম টানতে ২০১৫ সালে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য ও জার্মানির সঙ্গে দশ বছর মেয়াদি একটি চুক্তিতে সই করেছিল ইরান।
চুক্তি অনুযায়ী গত তিন বছর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহƒত সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা কমিয়ে আনার পাশাপাশি তেহরান তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও পরিদর্শকদেরও নিয়মিত অনুমতি দিয়ে এসেছে।
বারাক ওবামার আমলে সই হওয়া ওই চুক্তি নিয়ে প্রথম থেকেই সমালোচনায় মুখর ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার এক ঘোষণায় চুক্তিটি ‘ক্ষয়ে ও পচে গেছে’ উল্লেখ করে সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে আসা এবং ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানান এ রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।
তবে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলো বলছে, তারা এখনও চুক্তির ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।