২০১৭ সালে ইলিশ মাছকে বাংলাদেশের ‘ভৌগোলিক নির্দেশক’ পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালে মাছটির পূর্ণাঙ্গ ‘জীবনরহস্য’ উšে§াচনের কৃতিত্ব অর্জন করেন আমাদের বিজ্ঞানীরা। অনন্য এ অর্জন বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুনভাবে পরিচিত করবে, সন্দেহ নেই। বাংলাদেশি গবেষকদল উদ্ভাবিত পদ্মার ইলিশের জিন-বিন্যাস প্রকাশিত হয়েছে লন্ডনভিত্তিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাসংক্রান্ত বিশ্বখ্যাত সাময়িকী বায়োমেড সেন্ট্রাল (বিএমসি)-তে। বিএমসি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জিন ব্যাংক ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনের (এনসিবিআই) ছাড়পত্র পেয়ে সেটা সময় নিয়ে পর্যালোচনা করেছে। শেষে ইলিশের জিন-বিন্যাসে বাংলাদেশের গবেষণালব্ধ তথ্য প্রকাশ করেছে তারা। জার্নালটি সর্বসাধারণের উš§ুক্ত থাকায় যে কেউ বাংলাদেশের গবেষণা সম্পর্কে জানতে পারবেন। ভবিষ্যতে ইলিশ-সম্পর্কিত যে কোনো গবেষণায় বাংলাদেশের গবেষণালব্ধ তথ্য ব্যবহার করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।
আমাদের জিআই পণ্য ইলিশ এবং এর জীবনরহস্য উদ্ঘাটনের সুফল পাবে বাংলাদেশ। স্বত্ব পাওয়ায় এখন ইলিশ বলতে বাংলাদেশকেই বোঝাবে। বিশ্বের কোথাও ইলিশ নিয়ে গবেষণা হলে বাংলাদেশ অর্থ পাবে। এ অনন্য অর্জন নিয়ে আমরা এতই বুঁদ হয়ে আছি যে, আমরা নিজ দেশেই গবেষণায় উদাসীনতা দেখাচ্ছি। গতকাল শেয়ার বিজে ‘গবেষণায় উৎপাদন বৃদ্ধি হলেও ভরা মৌসুমে ইলিশের আকাল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে যেন সেটিই প্রমাণ হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) কর্তৃক বাস্তবায়িত চাঁদপুর নদী কেন্দ্রে ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পে গবেষণার নামে ক্রয় প্রক্রিয়াসহ অঙ্গভিত্তিক সীমাহীন অনিয়ম আর লুটপাটের কারণে ভেস্তে গেছে প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ্য। ফলে ভরা মৌসুমেও কাগজে-কলমে গবেষণাগারে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও বাস্তবে ‘ইলিশের বাড়ি’ খ্যাত চাঁদপুরের ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় দেখা দিয়েছে ইলিশের আকাল।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণের জন্য চাঁদপুর নদী কেন্দ্রে আধুনিক গবেষণা ভেসেল কেনাসহ অন্যান্য অবকাঠামো স্থাপন। কিন্তু ৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে গবেষণা জাহাজ কেনা হলেও প্রকল্পে গবেষণাসহ অন্যান্য অঙ্গভিত্তিক খাতে অনিয়মের নানা অভিযোগ রয়েছে। অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতার কারণে ২০১৭ সালের পর থেকে প্রতি বছরই ইলিশের উৎপাদন কমছে।
দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে হলে সঠিক সময়ে মা মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, সব নদ-নদীতে ইলিশ এক সময় ডিম পাড়ে না। ফলে যখন ইলিশ যে নদীতে ডিম পাড়বে, সেই নদীতে তখন তা ধরার নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। অথচ দেশে ঢালাওভাবে এ সময় নির্ধারিত করা হচ্ছে। ইলিশ সম্পদের সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য এর মজুত সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা থাকা প্রয়োজন। যেসব নদনদী ভৌগোলিক অবস্থান ও পরিবেশগত কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোয় মাছের বিচরণ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ইলিশ সাধারণত পানিতে থাকা ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণিকণা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এদের জন্য আলাদা করে কোনো খাবার দিতে হয় না। সব দিক বিবেচনা করে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।