Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 2:51 am

ইলিশ রফতানির অনুমতি দেবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : পাচার ঠেকাতে বৈধভাবে ইলিশ মাছ রফতানির সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী থেকে পদোন্নতি পেয়ে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।

নারায়ণ চন্দ্র বলেন, ‘আমরা রফতানির দিকে যেতে চাচ্ছি এই কারণে যে, আমাদের ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা রয়েছে। সে জন্য আমরা কিছুটা রফতানি করতে চাই।’

২০১২ সালের ১ আগস্ট থেকে ইলিশসহ সব মাছ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরে ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ইলিশ ছাড়া অন্য সব মাছ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

সরকার ইলিশ মাছ রফতানি বন্ধ রাখলেও অবৈধভাবে তা পাচার হচ্ছে জানিয়ে নারায়ণ চন্দ্র বলেন, ‘এতে রাজস্ব থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হয়। আমরা যদি রফতানি করি, তাহলে ওপেন পথটা করে দেওয়া যায়, গোপনে যাওয়ার পথটা তখন অনেকটা সংকুচিত হয়ে যায়।’

মন্ত্রী বলেন, বড় আকারের ইলিশ মাছ গোপনে পাচার হওয়ায় দেশের বাজারে বড় ইলিশ কম পাওয়া যায়। বড় মাছ বাজারে আনতে হলে গোপন পথটি বন্ধ করতে হবে, আমাদের সদর পথটি চালু করতে হবে।’

রফতানি হলেও মা ইলিশ সংরক্ষণে গত কয়েক বছর ধরে সরকার যে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে, তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী।

‘আমরা ডিম ছাড়ার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি, জাটকা নিধন বন্ধ রাখার প্রকল্প চলবে। ইলিশ মাছের বিচরণ ক্ষেত্রগুলোও সংরক্ষিত রাখা হবে।’

উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের দাদনের হাত থেকে রক্ষায় তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে এবং গভীর সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করতে গবেষণা চলছে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল তিন দশমিক ৯৫ লাখ টন। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ টন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়, তার ১১ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক শতাংশের মতো। বিশ্বের মোট ইলিশের ৭৫ শতাংশ আহরণ করা হয় বাংলাদেশে। প্রত?্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২০ লাখ মানুষের জীবিকার উৎস এই ইলিশ।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে ইলিশের বিভিন্ন প্রজাতির বিচরণ কমলেও সরকারের বিভিন্ন সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।

মৎস্য অধিদফতরের আবেদনে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর গত বছর ইলিশকে বাংলাদেশের ‘ভৌগোলিক নির্দেশক’ (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন) পণ্য হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ইলিশের ব্র্যান্ডিং ও শনাক্তকরণ সহজ হবে।

আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে দেশে দুধের ঘাটতিও পূরণ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আমরা পুষ্টি চাহিদা পূরণে মৎস্য ও প্রাণিজ আমিষ, দুধ, ডিমসহ সব ক্ষেত্রে অতিদ্রুত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে চাই।’