ইলেকট্রিক সিল-লক প্রত্যাহার চায় এফবিসিসিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমদানি-রফতানি পণ্যের কনটেইনারে ইলেকট্রিক সিল-লক ব্যবহারে পণ্য পরিবহন খরচ বাড়বে বলে মনে করছেন আমদানি-রফতানিকারকরা। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জারি করা সিল-লক বিধিমালা বাতিলের দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)।

গত ১৯ জানুয়ারি এনবিআর ইলেকট্রিক সিল-লকসংক্রান্ত বিধিমালা জারি করে। কেবল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনারে পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রেই এ প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে যেসব পণ্য আইসিডি বা অফ-ডকে স্টার্ফিং করা হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রেই বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অফডক এবং রফতানি পণ্যের ক্ষেত্রে অফ-ডক থেকে বন্দর পর্যন্ত সিল-লক ব্যবহারের ফি ৬০০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ৫০ টাকা ধার্য করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিধিমালার আওতায় তালিকাভুক্তির জন্য আলিফ করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনবিআর থেকে অনুমতি দিয়ে আদেশ জারি করা হয়।

এদিকে সিল-লক ব্যবহারের বিধিমালা বাতিলের দাবি জানিয়ে এনবিআরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানিকারকদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে আমদানি-রফতানি করতে হচ্ছে। পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে এ দেশের রফতানিকারকদের পক্ষে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ভীষণ কষ্টসাধ্য। তার ওপর কনটেইনারে বাধ্যতামূলক ইলেকট্রনিক সিল ও লক ব্যবহার ব্যবসা খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) আরও বাড়িয়ে দেবে। এতে রফতানিকারকদের পক্ষে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আরও কষ্টকর হবে। যেখানে অতি স্বল্প খরচে কনটেইনারবাহী পরিবহন ট্র্যাক করার জন্য দেশে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহƒত হচ্ছে, সেখানে অতিরিক্ত ফির মাধ্যমে ইলেকট্রিক সিল ও লক ব্যবহার কতটা যুক্তিসংগত এবং খরচসাশ্রয়ী, তা বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ’র মতো প্রধান স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কনটেইনারে ইলেকট্রিক সিল-লক লাগানোর মতো চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত মানা হবে না। এর আগেও এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করা হয়েছিল। দু-এক দিন আগে এ বিষয়ে এফবিসিসিআই থেকে এনবিআরে চিঠি পাঠিয়ে ব্যবসায়ীদের মতামত জানানো হয়েছে। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অবশ্যই বিশদ আলোচনা করতে হবে।

সম্প্রতি বিধিমালার আওতায় আলিফ করপোরেশন কার্যক্রম শুরু করলে ব্যবসায়ীরা আবারও সরব হয়ে ওঠেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু একটি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে ইলেকট্রিক সিল-লক ব্যবহার চালু করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে পণ্য পরিবহন খরচ বাড়বে। এ প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, সরকার যে মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেটিকে সবার সামনে তুলে ধরা। তাছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ২৭৫ কিলোমিটার। কিন্তু শুধু পণ্যের নিরাপত্তার জন্য অফ-ডক থেকে বন্দর বা বন্দর থেকে অফ-ডক পর্যন্ত সিল লক ব্যবহারের প্রশ্নই আসে না।

যদিও আলিফ করপোরেশনের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, পণ্যের নিরাপত্তা ও রাজস্ব সুরক্ষার স্বার্থে ইলেকট্রিক সিল-লক ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতিতে আমদানি-রফতানি পণ্যের সুরক্ষা দেওয়া হয়।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের আশপাশে ১৭টি অফডক বা বেসরকারি আইসিডি রয়েছে। এসব অফডকে কাঁচা তুলা, ইউরিয়া রেজিন, মসুর ডাল, গম, সরিষা, পশুখাদ্য, আদা, রসুন, চিনি, পেঁয়াজ, চালসহ ৩৭টি আইটেমের আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন করা হয়। অন্যদিকে তৈরি পোশাকশিল্পসহ রফতানিমুখী শিল্পের কাভার্ড ভ্যানের পণ্য অফডকে স্টাফিং করে জাহাজের কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দরে পাঠানো হয়। বন্দরের সবচেয়ে নিকটবর্তী অফডকের দূরত্ব দুই কিলোমিটার। আর সবচেয়ে বেশি দূরত্বের অফডকটি রয়েছে ২২ কিলোমিটার দূরে। এ দূরত্বের মধ্যে পণ্যবোঝাই কনটেইনারের সুরক্ষা দিতে সিল ও লক সেবার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক তৈরি পোশাকের রফতানি কনটেইনারে সিল-লক ব্যবহার করি। এর দাম ৪০-৬০ টাকা। এখন কম্পিউটারাইজড সিল লকের কথা বলে অফ-ডক থেকে বন্দর পর্যন্ত ৬০০ টাকা চার্জ ধার্যের কথা বলা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মানা হবে না। ইতোমধ্যে এনবিআরে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০