ইলেকট্রনিক পণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেড (ইএমএল)। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এটি। আমদানি ও উৎপাদনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি।
ইলেক্ট্রো মার্টের পণ্যের মধ্যে রয়েছে এসি, রেফ্রিজারেটর, এলইডি পণ্য, কালার টিভি, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ডিভিডি প্লেয়ার, রাইস কুকার প্রভৃতি। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, চীনের এক নম্বর এসি ব্র্যান্ড ‘গ্রি’ আমদানি করে দেশের বাজারে বিপণন করে এই প্রতিষ্ঠান। বিশ্বখ্যাত ‘কনকা’ ব্র্যান্ডের রঙিন টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরসহ গৃহস্থালির নানা ইলেকট্রনিক পণ্যের ডিস্ট্রিবিউটর ইলেক্ট্রো মার্ট। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘হাইকো’। গ্রাহক চাহিদা পূরণের জন্য গুণগত মানে সেরা ও টেকসই পণ্য সরবরাহ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। সংগত কারণে ক্রেতাসাধারণের আস্থা অর্জন করেছে তাদের সব পণ্য। পরিণত হয়েছে বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডে। প্রসঙ্গত, গ্রি ব্র্যান্ডের এসির কম্প্রেসরের ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি সুবিধা দেওয়া হয়। এ ব্র্যান্ডের এসিতে অর্থ সাশ্রয় হয়, ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। এটি পরিবেশবান্ধব জ-৪১০ধ গ্যাস নিশ্চিত করে। এতে রয়েছে ইনভার্টার টেকনোলজি। সব মিলিয়ে ঠাণ্ডার বেলায় ভারসাম্য রক্ষা করে এটি।
উল্লিখিত ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি ভারতের ফোর্বস ওয়াটার পিউরিফায়ার ও সিম্ফনি এয়ারকুলার বিপণন করে ইএমএল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের হানিওয়েল এয়ারকুলার ও বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র্রের বিখ্যাত ব্র্যান্ড ম্যাককুয়ে ও ট্রেন এইচভিএসি সিস্টেমসের পণ্যসহ হোয়াইট ওয়েস্টিংহাউজের রেফ্রিজারেটর ও ওয়াশিং সামগ্রীর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এই ইলেক্ট্রো মার্ট। জাপানের ডাইকিন, দক্ষিণ কোরিয়ার
স্যামসাং, মালয়েশিয়ার খিন্দ, চীনের মাইডিয়া প্রভৃতির ব্র্যান্ডের ইলেকট্রনিক সামগ্রীর সঙ্গে আমরা কম-বেশি পরিচিত। নামকরা এসব ব্র্যান্ডের পণ্য দেশে বাজারজাত করছে ইলেক্ট্রো মার্ট।
শিল্পবিকাশের এ যুগে বাণিজ্যিক ভবনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎশক্তি। যদিও এর পেছনে অনেক অর্থ খরচ হয়। তাই শক্তিসাশ্রয়ী অত্যাধুনিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার সাহায্যে অর্ধেকের বেশি খরচ কমানো সম্ভব। বিপণিবিতান ও সুপরিসর দোকানপাটসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ভবনে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সমন্বিত ব্যবস্থা বা এইচভিএসি গড়ে তোলা হয়। এইচভিএসি হচ্ছে বড় আকৃতির চকচকে ধাতুর বাক্সে ভরা যান্ত্রিক ব্যবস্থা। এখানে তাপমাত্রা বাড়ানোর (হিট), কমানোর (কুলিং), বাতাস চলাচল (ভেন্টিলেশন) ও বাতাস নিয়ন্ত্রণের (কন্ট্রোল) জন্য ব্যবহƒত সব যন্ত্রপাতি সমন্বিতভাবে রাখা হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎশক্তি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও থাকে। ফলে শক্তি সাশ্রয় হয়। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে এইচভিএসির বড় আকৃতির ধাতুর বাক্স স্থাপন করা হয়। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে এই এইচভিএসি প্রযুক্তির প্রবর্তন শুরু করে ইলেক্ট্রো মার্ট। অল্প সময়ের মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে তারা। দেশের উন্নয়ন বিবেচনায় দক্ষ এইচভিএসি যন্ত্রব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
বিভিন্ন উৎসব যেমন ঈদ, পয়লা বৈশাখ কিংবা বিশ্বকাপ খেলা উপলক্ষে ইলেক্ট্রো মার্টের সব ধরনের পণ্যে বিশেষ ছাড়ের অফার দেওয়া হয় ক্রেতাদের জন্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটি বার্ষিক বিজনেস মিট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। একই সঙ্গে তারা পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ডও দিয়ে থাকে। এসব অনুষ্ঠানে ইলেক্ট্রো মার্টের বিভিন্ন পণ্য ও ব্র্যান্ডের বাজারজাতকরণ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। কোনো অসংগতি থাকলে তা সমাধানের উপায় বের করা হয়। এছাড়া বিগত বছরের কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানটি সারা দেশের ডিলার ও চ্যানেল পার্টনারদের মধ্যে পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে।
ইলেক্ট্রো মার্টে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ নুরুন নেওয়াজ সেলিম। ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন নুরুল আমিন। পরিচালনা পর্ষদে আরও রয়েছেন নুর ছাফা বাবু, নুরুল আফসার ও সাজ্জাদ উন নেওয়াজ রাফী। বাজার মনিটরিং ও গবেষণার কারণে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ জনশক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখছে তারা। পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পরিষদের কার্যকরী দিকনির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
ইলেকট্রনিকস-শিল্পে দেশসেরা হতে চায় ইলেক্ট্রো মার্ট। সে লক্ষ্যে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ৪০ বছর ধরে দেশের ইলেকট্রনিক পণ্যের বাজারে নিজেদের স্বকীয়তা ধরে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা আমদানি কমিয়ে দেশেই ইলেকট্রনিক সামগ্রী উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায়। এরপর দেশের চাহিদা মিটিয়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে রফতানি করতে আগ্রহী। এভাবে দেশ ও অর্থনীতির কল্যাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে চায় ইলেক্ট্রো মার্ট।
রতন কুমার দাস