শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে। সম্প্রতি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এ নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ বা যেসব বিনিয়োগ থেকে ইসরায়েল লাভবান হয়, সেসব বিনিয়োগ প্রত্যাহার করার দাবি জোরালো হচ্ছে। খবর: দি নিউইয়র্ক টাইমস।
ইয়েল ও কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অস্ত্র উৎপাদনে বিনিয়োগ বন্ধ করার আহŸান জানিয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বা দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের ভ‚খণ্ড অধিকৃত করে রাখার মধ্য দিয়ে লাভবান হচ্ছেÑএমন তহবিল ও ব্যবসা থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এর মধ্যে গুগল এবং এয়ার বিএনবি রয়েছে। ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে গুগলে চুক্তির প্রতিবাদ করায় এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি প্রায় ৫০ জন কর্মী ছাঁটাই করেছে। অন্যদিকে এয়ার বিএনবি অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবস্থিত ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে সহায়তা করছে।
গত শতকের ষাটের দশক থেকে নানা অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সরব হতে দেখা যায় ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের শিক্ষার্থীদের। এখানকার শিক্ষার্থীরাও গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ করছেন তারা।
গবেষকরা বলছেন, এ ধরনের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি বাস্তবায়িত হলেও ইসরায়েল ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ ক্ষতি হবে না। তারা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিলে বা ভোট দেয়ার অধিকার হারালে উল্টো ফল হবে। তখন এসব কোম্পানির কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। এতে ওই কোম্পানিগুলো যা খুশি তা-ই করার সুযোগ পাবে।
ইসরায়েলের সমর্থকরা বলেন, এসব দাবি অন্যায্য এই অর্থে যে ইসরায়েল সব সময় হামলার হুমকিতে রয়েছে। একই সঙ্গে এই দাবি ইহুদি-বিদ্বেষ সম্পর্কিত। কারণ, বিশ্বের ইহুদি-অধ্যুষিত দেশকে লক্ষ্য করেই এসব দাবি করা হয়। বয়কট, বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও নিষেধাজ্ঞাবাদীরা এ ধরনের অভিযোগ করেন।
ফিলিস্তিনপন্থি এ আন্দোলনকারীদের একাংশ ইহুদি। তারা মনে করেন, এ বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষকে চাপে রেখে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করার অব্যর্থ কৌশল। এই দাবির মধ্য দিয়ে তাদের দাবির সপক্ষে সমর্থন তৈরি হবে। এ ধরনের তৎপরতা অবশ্য নতুন নয়। ১৯৮০-এর দশকের ছাত্ররাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চাপ দিয়ে বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসারত কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারে বাধ্য করেছিল। জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারে বাধ্য করার ক্ষেত্রেও একই কৌশল কাজে লেগেছিল।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক রে গুরেরো বলেন, প্রথমত তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের ফল দেখতে চান। কারণ, এখানেই তাদের সবচেয়ে শক্তিমত্তা সবচেয়ে বেশি। তারা আশা করছেন, এই আন্দোলন দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়বেÑতখন কোম্পানিগুলো বুঝবে, এই আন্দোলনের ফল কী।
ছাত্রদের এই দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক পত্রিকাগুলো। কর্নেল ডেইলি সান অস্ত্র কোম্পানি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবিতে সমর্থন জানিয়েছে। যেসব কোম্পানি সরাসরি ইসরায়েলের সমর্থনে কাজ করে, সেসব কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের এই দাবি উঠেছে।
ডেইলি সান লিখেছে, যে যুদ্ধ বেসামরিক মানুষের জীবনের প্রতি ন্যূনতম বিবেচনা ছাড়াই চালানো হচ্ছে, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত হবে না, সেই যুদ্ধে সহায়তা দেয়া।
এদিকে যেসব কোম্পানি সরাসরি ইসরায়েলের যুদ্ধে জড়িত নয়, সেসব কোম্পানি থেকেও কলাম্বিয়ার ছাত্ররা বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে, যেমন ক্যাটারপিলার, গুগল ও এয়ার বিএনবি।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল ও ইউক্রেনকে সামরিক ও মানবিক সহায়তা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের প্রতিনিধি পরিষদে বহুল আলোচিত বিল পাস হয়েছে।