রাজধানীর ইসলামপুর। দেশ সেরা কাপড়ের পাইকারী বাজার। তবে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে ইসলামপুর। বিশেষ করে বন্ড সুবিধার কাপড় হাত বাড়ালেই ইসলামপুরে পাওয়া যায়। বন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি ইসলামপুর ব্যবসায়ীদের কাছে কাপড় বিক্রি করে দেয়। এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে আসছে। আর ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা এসব অসাধু পোশাক মালিকদের সহযোগিতা করে। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট নড়েচড়ে বসেছে। আজ শনিবার দ্বিতীয় দফায় ইসলামপুরে অভিযান চালিয়ে ৭৫ জন বন্ড সুবিধার কাপড় উদ্ধার করে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মো. হুমায়ূন কবীর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর ইসলামপুর থেকে প্রায় শতাধিক টন চোরাই ফেব্রিক্স উদ্ধার করা হয়।
হুমায়ূন কবীর জানান, পুরান ঢাকার ইসলামপুর এলাকার বাদশা হাজী আহমেদ কমপ্লেক্স ও আইটিসি টাওয়ারের কয়েকটি গুদামে বন্ডের চোরাই কাপড় রয়েছে বলে গোপন সংবাদ পাওয়া যায়। এরই প্রেক্ষিতে উপ কমিশনার রেজভী আহম্মেদ, ফখরুল আমিন চৌধুরী, সহকারী কমিশনার আল আমিন ও আকতার হোসেনের নেতৃত্বে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। অভিযানে দুইটি মার্কেটের কয়েকটি গুদাম থেকে মজুদ করা প্রায় ৭৬ টন উন্নতমানের শাটিং, স্যুটিং ফেব্রিক্স উদ্ধার করা হয়। যার মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। এসব ফেব্রিক্স বিভিন্ন রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধায় শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করে বিদেশে রফতানির পরিবর্তে অবৈধভাবে ইসলামপুরের বিভিন্ন পাইকারী বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বাদশা হাজী আহম্মেদ কমপ্লেক্স এর গুদামের মালিক হাজী আবদুল মতিন। তিনি ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি। অভিযানের খবরে ব্যবসায়ীরা পালিয়ে গেছেন। শুধু গোডাউনের মালিক বা ক্রেতা নয় যে সমস্ত উৎস হতে চোরাই পথে অবৈধভাবে এই সকল পণ্য ইসলামপুরে আসে সে সকল উৎস প্রতিষ্ঠান এবং এই চক্রকে বিজিএমইএ এর সহযোগিতা নিয়ে অতিদ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। দায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, ইসলামপুর এলাকার বিভিন্ন পাইকারী মার্কেটে বন্ডেড চোরাই ফেব্রিকস এর বাণিজ্যে বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার প্রতিরোধ এবং দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় এনবিআর চেয়ারম্যানের নির্দেশনা এবং গতিশীল নেতৃত্বে এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
হুমায়ূন কবীর বলেন, পুরান ঢাকার ইসলামপুরস্থ আল ইসলাম প্লাজা এবং শুভরাজ টাওয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরে মোট সাতটি গোপন গুদামে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২ হতে ২৬ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত প্রায় ১৮ ঘন্টার আরো একটি রুদ্ধশাস অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানেও প্রায় ১০৫ টন শাটিং, স্যুটিং, পর্দার কাপড় জব্দ করে কাস্টমস গুদামে জমা দেওয়া হয়েছে। আটককৃত পণ্যের মোট মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। যার বিপরীতে শুল্ককর প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা। এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চোরাচালান ও রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ইতোমধ্যে ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়েছে।