ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে তলানিতে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামিক ব্যাংকিং বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হলেও এখনও তলানিতে বাংলাদেশ। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে ইসলামিক বন্ড ‘সুকুক’ খুবই জনপ্রিয়। তবে বাংলাদেশে আটটি পূর্ণ ইসলামিক ব্যাংক এবং ১৭টি ব্যাংকে ইসলামিক ব্যাংকের উইন্ডো থাকলেও এখনও সুকুক চালু হয়নি। সুকুক সবচেয়ে জনপ্রিয় সৌদি আরবে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম মিলনায়তনে গতকাল ‘প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন অব ইসলামিক ব্যাংকস: প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. আলমগীর। গবেষণা দলে আরও ছিলেন বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মহব্বত হোসেন, বিআইবিএমের প্রভাষক মো. আবদুল হালিম এবং ইসলামিক ব্যাংক ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ একাডেমির (আইবিটিআরএ) পরিচালক ড. মো. মিজানুর রহমান।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। এছাড়া বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ও পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব-উল-আলম, এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. হায়দার আলী মিঞা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিং এখন বাংলাদেশের মূল ধারার ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে আটটি ইসলামিক ব্যাংক গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে। একই সঙ্গে সাধারণ ব্যাংকিংয়ের ১৭টি ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো কাজ করছে। বাংলাদেশ ইসলামিক ব্যাংকিং প্রসারে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে, যাতে আগামী দিনে টেকসই আর্থিক ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে সুকুক খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে কীভাবে এটি জনপ্রিয় করে তোলা যায়, সে বিষয়ে কাজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দেশ ঘুরে সরেজমিনে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে। তিনি ইসলামিক ব্যাংকগুলোকে নতুন উদ্যোক্ততা সৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগের ওপর জোর দেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভিন্ন নামে ইসলামিক বন্ড চালু থাকলেও তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না গ্রাহকরা। সুকুকের মোট শেয়ারের প্রায় ৩৯ শতাংশ এখন সৌদি আরবের দখলে। দ্বিতীয় অবস্থানে মালয়েশিয়া। দেশটির উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে সুকুক।
২০১৮ সালের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সুকুকে মালয়েশিয়ার শেয়ার প্রায় ৩৩ শতাংশ। এরপরে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, কাতার, ওমান, তুরস্ক, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, হংকং, নাইজেরিয়া, ব্রুনাই ও জর্ডান। বাংলাদেশের অবস্থান ১৪ নম্বরে। মাত্র দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ ইসলামিক বন্ডের শেয়ার রয়েছে দেশটির। আবার বৃহত্তর মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইসলামিক ব্যাকিংয়ের অধিকাংশ ক্যাটেগরিতে পেছনের সারিতে বাংলাদেশ।
হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংক খাতের মোট শেয়ারের ২২ শতাংশ ইসলামি ব্যাংকিংয়ের নিয়ন্ত্রণে। এ বড় শেয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পর্যাপ্ত প্রডাক্ট নেই। ছোট ছোট ঋণ দেওয়ার জন্য সে ধরনের প্রডাক্ট তৈরির ওপর জোর দেন তিনি। এতে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ঝুঁকি কমবে।
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকি কমাতে প্রডাক্টের বৈচিত্র্য প্রয়োজন। ছোট ছোট ঋণ দিয়ে ব্যাংকের ঝুঁকি কমানোর ওপর জোর দেন তিনি। তিনি বলেন, তারল্য ব্যবস্থাপনার জন্য সুকুকের প্রবর্তন জরুরি।
ইয়াছিন আলি বলেন, প্রচলিত ব্যাংকের সঙ্গে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে। এ জন্য পণ্য বৈচিত্র্য আনতে হবে। তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন।
মাহবুব-উল-আলম বলেন, প্রচলিত ব্যাংকগুলোর চেয়ে ইসলামিক ব্যাংকের প্রডাক্ট অনেক বেশি। এগুলো আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এসব প্রডাক্ট বৈচিত্র্যের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের ঝুঁকি কমবে।
হায়দার আলী মিঞা বলেন, মালয়েশিয়ার চেয়ে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ার কথা বলা হলেও তা বাস্তবসম্মত নয়। কারণ মালেয়েশিয়ার ইসলামিক ব্যাংকিং খাত বাংলাদেশের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। বাংলাদেশেরও অনেক পণ্য মালয়েশিয়ার তুলনায় ভিন্ন। যেগুলোর প্রতি গ্রাহকরা ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। তিনি গ্রাহকদের ইসলামিক ব্যাংকিং সেবার মান আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নতুন নতুন ইসলামিক ব্যাংকিং পণ্য নিয়ে গ্রাহকদের সেবা করার ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০