Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 3:16 pm

ইসলামি ধারার ছোট ব্যাংকগুলো একীভূত করার চিন্তা আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী ধারার ছোট ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার চিন্তা আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ছোট ছোট ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার চিন্তা আছে। ব্যাংক সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারলে ভালো হবে। তিনি বলেন, একীভূত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও কোনো সিদ্ধান্তে যায়নি। আমরা চেষ্টা করব ছোট ছোট ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে ফেলা যায় কিনা। এ ব্যাংকগুলোর যেহেতু মূলধন সহায়তা আমরাই করব, সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ অনেক ব্যাংকের আগের মালিকরা অনিয়ম করে তাদের মালিকানা হারিয়েছেন। এখন ওই মালিকানা সরকারের ক্ষেত্রে একীভূত করা সহজ হবে। তবে বাস্তবতা বুঝে আমরা কাজ করব। তবে কয়েকটি ব্যাংক কমিয়ে ফেলা অবশ্যই ভালো হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক একীভূত হলেও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেয়া হবে।

গভর্নর বলেন, ব্যাংক খাতের সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্স মূলত ৩টি বিষয়ে কাজ করবে। প্রথমত ব্যাংকগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদ নির্ণয় করবে। এরপর ব্যাংকগুলোর সম্পদ কোথায় আছে তা চিহ্নিত করবে। এরপর ওই সম্পদ পুনরুদ্ধারে কাজ করবে। আমরা প্রথমে ৩টি ব্যাংক নিয়ে কাজ করব। পরবর্তী সময়ে আরও ৬টি ব্যাংক। এক্ষেত্রে প্রথম ধাপে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৪ জন কর্মকর্তাকে ৩ ভাগে বিভক্ত করে ওই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে দুই গ্রুপে ৪ জন করে কর্মকর্তা দেবেন। আর অন্য গ্রুপে রয়েছেন ৬ জন। এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক বড় ব্যাংক হওয়ায় পরিদর্শনের দায়িত্বে থাকবে ৬ জন কর্মকর্তা। পাশাপাশি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি নিরীক্ষকদের যুক্ত করা হবে। উন্নয়ন সহযোগীরা এসব অর্থ দেবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে দেখব ব্যাংক থেকে নামে বা বেনামে কী পরিমাণ অর্থ বের করে নেয়া হয়েছে তা দেখব। এরপর ওই অর্থ যদি দেশের বাইরে চলে যায় তাহলে সেগুলো কীভাবে আন্তর্জাতিক আইন মেনে আনা যায় সে বিষয়ে কাজ করব। এ ক্ষেত্রে আমরা বড় কেসগুলোকে নিয়ে কাজ করব। আমাদের যদি ৪ লাখ কোটি টাকার মতো খারাপ সম্পদ থেকে থাকে তার অর্ধেক হয়ে তো অল্প কয়েকজন ব্যক্তির কাছে গেছে। এজন্য তাদের ওপর বেশি ফোকাস থাকবে। আর ছোটগুলো সিস্টেমেটিক ওয়েতে তুলে আনা হবে।’
গভর্নর বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছি।

আমাদের রেমিট্যান্স প্রভাব বাড়ছে। যদি এসব ব্যাংক রেমিট্যান্স ভালো পায় তাহলে তাদের তারল্য প্রবাহ বাড়ার সহায়তা করবে। রেমিট্যান্স যখন তারা বিক্রি করবে তখন তাদের হাতে টাকা চলে আসবে। এভাবেই তাদের রিকভার করতে পারবে।’ গভর্নর বলেন, ‘কিছু ব্যাংক থেকে গ্রাহক টাকা তুলে অন্য ব্যাংকের রাখছেন। যেসব ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হচ্ছে তারা তারল্য সংকটে পড়ছে। আবার যাদের কাছে রাখা হচ্ছে তাদের তারল্য বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য আমরা গ্যারান্টার হয়ে তারল্য বেশি থাকা ব্যাংকগুলো থেকে কম থাকা ব্যাংকগুলোকে টাকা দেব। এক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংক টাকা না দিতে পারলে ওই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক পরিশোধ করবে। এখন পর্যন্ত এই স্কিম থেকে কাউকেই টাকা দেয়া হয়নি। যদি এদের অবস্থা ভালো হয়ে যায় তাহলে কাউকে দিতেও হবে না। প্রয়োজন বোধে দেব। যার যত টাকা দরকার সেই অনুযায়ী টাকা দেয়া হবে। তবে এসব ব্যাংকগুলোর এখন ক্যাশফ্লো ভালো রয়েছে। গত কয়েকদিনে ব্যাংকগুলোর তারল্য উদ্বৃত্ত আছে ৮১০ কোটি টাকা। আশা করি, সমস্যা সমাধান হবে।’

তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় চলতি সপ্তাহে আবারও নীতি সুদহার (পলিসি রেট) বৃদ্ধি করা হবে। এরপর আগামী মাসে আরও কিছুটা বৃদ্ধি করা হবে। বর্তমানে নীতি সুদহার ৯ শতাংশে রয়েছে। গত বছরের মার্চ থেকে দেশের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়।

গভর্নর বলেন, ‘আমি আশাবাদী মূল্যস্ফীতি মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে একটি ভালো জায়গায় চলে আসবে। কতখানি ভালো জায়গায় আসবে সেটা হয়তো বলা যাবে না। তবে আমরা পলিটি টাইট করব, যাতে মূল্যস্ফীতি কমে আসে। আমাদের এখন বিনিময় হার স্থিতিশীল আছে। এছাড়া রেমিট্যান্সও বাড়ছে। আশা করি, আগামীতেও বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে। যদি এটা ধরে রাখা যায় তাহলে মূল্যস্ফীতি অবশ্যই কমে আসবে। তাছাড়া আমাদের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণের যেই লক্ষ্য রাখা হয়েছে তা ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো হতে পারে। এটা হলে বেসরকারি বিনিয়োগও ঠিক হয়ে আসবে। সবমিলিয়ে আমরা যদি মূল্যস্ফীতি ৪-৫-এ নামিয়ে আনতে পারি, তাহলে সুদের হার আমরা কমিয়ে আনতে পারব। সে জন্য সময় দিতে হবে।