রোহান রাজিব: রেমিট্যান্স আহরণে প্রধান ভূমিকা রাখে দেশের ইসলামি ব্যাংকগুলো। কিন্তু রেমিট্যান্স আহরণে হঠাৎ করেই হোঁচট খাচ্ছে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) ইসলামি ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স আহরণ কমেছে ৪ হাজার ৩২২ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ইসলামি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। এ ব্যাংকের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সেও ভাটা পড়েছে। গত বছরের (এপ্রিল-জুন) মাসে ইসলামি ব্যাংকের রেমিট্যান্স অবদান ছিল ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ, চলতি বছরের একই সময়ে তা কমে নেমেছে ৬৪ দশমিক ৯৫ শতাংশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) মাসে ইসলামি ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স আহরণ করেছে ১৫ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা, যেখানে গত বছরের একই সময়ে ছিল ২০ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কমেছে চার হাজার ৩২২ কোটি টাকা, যা শতকরা হিসাবে ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
তবে ইসলামি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্স কমলেও প্রচলিত ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ৬১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৬৮ দশমিক ৪৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংকভেদে রেমিট্যান্স আহরণের চিত্র থেকে দেখা যায়, গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আহরণ করে এর মধ্যে ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিডেটের অবদান ছিল ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ।
চলতি বছরের একই সময়ে তা কমে নেমেছে ৬৪ দশমিক ৯৫ শতাংশে।
এরপর ইউনিয়ন ব্যাংকের ২ দশমিক ২৬ শতাংশ থেকে কমে ১ দশমিক ৩৮ শতাংশে নেমেছে। আর স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ২ দশমিক ২৬ শতাংশ থেকে কমে ১ দশমিক ৩৮ শতাংশে নেমেছে। তবে ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক বাদে অন্য ইসলামি ব্যাংকগুলোর অবদান বেড়েছে। বেশি বেড়েছে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের।
প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে রেমিট্যান্স আহরণে ইসলামি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের অবদান ছিল ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংকের অবদান ছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।
এর বাইরে এক্সিম ব্যাংকের শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১ দশমিক ৪ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১.৯৮ থেকে ২.৭৬ শতাংশ, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ১.৪৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ১.৫৩ শতাংশ হয়েছে। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ১.৭৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ হয়েছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলেও চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইসলামি ব্যাংকগুলোতে আমানত ও বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি জুন শেষে ৪ লাখ ১২ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ। যা পুরো ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ২৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর জুন শেষে ইসলামি ব্যাংকিং খাতে মোট বিনিয়োগ (ঋণ ও অগ্রিম) দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইসলামিক ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। এক বছরের তুলনায় বেড়েছে ১২ শতাংশ। এছাড়া তিন মাসে বিনিয়োগ বেড়েছে ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর এক বছরে বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক (এপ্রিল-জুন) প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশে ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ও উইন্ডোর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২০৭টি। এর মধ্যে এক হাজার ৬৮২টি শাখাই পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর। বাকি ৪৫টি ইসলামি শাখা রয়েছে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর। এর বাইরে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর আরও ৪৮০টি ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো খুলে সেবা দিচ্ছে।