Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:31 am

ইসলামি ব্যাংকিংয়ে শরিয়াহ পরিপালনে মুরাকিবদের প্রয়োজনীয়তা

ড. মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা: ইসলামি নীতিমালার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, কেনাবেচা এবং সব আর্থিক লেনদেন পরিচালিত হয়ে আসছে ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই। ইসলামের প্রাথমিক যুগে ব্যাংকিং পদ্ধতি না থাকলেও আর্থিক লেনদেনগুলো সম্পাদিত হতো শরিয়াহর নীতিমালা অনুসরণ করেই। সময়ের পরিক্রমায় প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে ইসলামি বিধিবিধানের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম যুক্ত হয় গত শতকের ষাটের দশকে। বর্তমান মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার পরিবর্তে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিংশ শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।

ইসলামিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুদমুক্ত আর্থিক কার্যক্রম প্রবর্তনের মাধ্যমে সমাজকে সুদের কুফল থেকে মুক্ত রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য, দুর্নীতি এর সবের মূলে রয়েছে সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা। ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কেবল এই বৈষম্য ও অস্থিরতা দূর করা সম্ভব। ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থায় শরিয়াহ পরিপালনের মাধ্যমে উক্ত সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে মুরাকিবরা ইসলামি ব্যাংকিংয়ের প্রাণ শক্তি কাজ করে। ইসলামি ব্যাংকিংয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে আওইফি (AAOIFI) ও সেন্টাল শরিয়াহ বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য সিএসএএ (CSAA) প্রফেশনাল কোর্স চালু করা হয়েছে।

শরিয়াহ কী: শরিয়াহ একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ দীন, ধর্ম, পথ, পন্থা, আইন-কানুন, জীবনপদ্ধতি ইত্যাদি। আল্লাহকে খুশি করার লক্ষ্যে মানুষের জন্য অনুকরণীয় আচরণবিধি। বস্তুত ইসলামি শরিয়াহ হলো ইসলামের সেই সকল বিধিবিধান ও নিয়মনীতি, যা ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক জীবন এবং কল্যাণমুখী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রদান করা হয়েছে। আর এসব বিধিবিধান ইমান-আকিদা, ইবাদত, মু’আমালাহ, পারস্পরিক লেনদেন, কর্ম-সংস্কৃতি, আখলাক ও নৈতিকতা, আচার-আচরণসহ জীবনের নানা দিক ও বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করে। মূলত ইসলামি শরিয়তের উৎস চারটি, যথা: পবিত্র আল কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস। ইবনু তাইমিয়া বলেন, আল্লাহতায়ালা যে সব আকিদা ও আমল মানুষের জন্য প্রণয়ন করেছেন, তাই শরিয়াহ।

ইসলামি ব্যাংকিং: ইসলামি ব্যাংকিং বলতে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক আর্থিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা ব্যাংক ব্যবস্থাকে বোঝায়। ইসলামি ব্যাংক দুটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, যথা লাভ ও লোকসানের ভাগ নেয়া এবং সকল কার্যক্রমে সুদ নিষিদ্ধ। ইসলামি ব্যাংক আমানত গ্রহণ ও বিনিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলামি নিয়মনীতি অনুসরণ করে থাকে। ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থা কাঠামোগত দিক থেকে প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থার মতো মনে হলেও আদর্শ ও মূল্যবোধের দিক থেকে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। ইসলামি ব্যাংকের সংজ্ঞায় ওআইসি বলেছে, ইসলামি ব্যাংক এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা তার উদ্দেশ্য ও মূলনীতি এবং কর্মপদ্ধতির সব স্তরে ইসলামি শরিয়াহর নীতিমালা মেনে চলে এবং এর সব কার্যক্রমে সুদের লেনদেন সম্পূর্ণরূপে বর্জন করে।

শরিয়াহ অডিট: ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম সুদমুক্ত করার ক্ষেত্রে শরিয়াহ অডিট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম শরিয়াহভিত্তিক হচ্ছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণের জন্য শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির তত্ত্বাবধানে মুরাকিবদের মাধ্যমে শরিয়াহ পরিদর্শন পরিচালিত হয়। পরিদর্শন কার্যক্রম আরও ফলপ্রসূ ও কার্যকর করার উদ্দেশ্যে বাহরাইনভিত্তিক অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস (AAOIFI), ইসলামিক ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বোর্ড (IFSB) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত ইসলামি ব্যাংকিংয়ের নির্দেশনা (Guidelines for Islamic Banking) সামনে রেখে বাংলাদেশের ইসলামি ব্যাংকগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ শরিয়াহ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইসলামি ব্যাংকিং-সংক্রান্ত কোনো বিষয় বা লেনদেন শরিয়াহ সম্মত হচ্ছে কিনা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পূর্ণ এখতিয়ার মুরাকিবের রয়েছে। শরিয়াহ অডিট শরিয়াহ নিয়ন্ত্রণের একটি প্রাথমিক উপাদান।

শরিয়াহ পরিদর্শনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য:  বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন ও ইসলামিক ব্যাংকের বাস্তব অনুশীলন অনুযায়ী শরিয়াহ পরিদর্শনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ হলো:

এক. ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রমে শরিয়াহ পরিপালন নিশ্চিত করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন; দুই. বাংলাদেশ ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং গাইডলাইন ও ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির পরামর্শের ভিত্তিতে শরিয়াহ পরিপালন সম্পর্কে বিনিয়োগসহ ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম শরিয়াহর দৃষ্টিতে পরিদর্শন করা; তিন. ব্যাংকের সামগ্রিক কার্যক্রমে শরিয়াহ পরিপালন বিষয়ে শরিয়াহ সুপারভাইজার কমিটির স্বাধীন মতামত প্রদানের সুবিধার্থে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ ও শরিয়াহ পরিপালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান।

শরিয়াহ পরিপালনের গুরুত্ব: ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা ইসলামি অর্থনীতির একটি দিক। ইসলামিক ব্যাংকিং মূলত সুদবিহীন ও লাভ-লোকসান অংশীদারিত্বের ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং এটি শরিয়াহ আইনের নীতিগুলোর ভিত্তিতে এবং ইসলামি অর্থনীতি দ্বারা পরিচালিত একটি স্বতন্ত্র ব্যাংকিং পদ্ধতি। ইসলামি ব্যাংকিংয়ের দুটি মূলনীতি হলো লাভ-লোকসানের অংশীদারিত্ব এবং মূলধন সরবরাহকারী ও বিনিয়োগকারীদের দ্বারা সুদ আদায় ও প্রদান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। অতএব সঠিকভাবে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিপালনের জন্য যথাযথ শরিয়াহ পরিদর্শন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুরাকিবরা (শরিয়াহ অডিটর) ব্যাংকের কার্যক্রমে কোনো সুদ আদান বা প্রদান করা হচ্ছে কিনা, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করে থাকে। এজন্য সঠিকভাবে ইসলামি ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য শরিয়াহ অডিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নোক্ত কারণে ব্যাংকিং কার্যক্রমে ইসলামী শরিয়াহর বিধিবিধান মেনে চলা ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ:

আইনগত বাধ্যবাধকতা ইসলামি ব্যাংকগুলোকে ইসলামি শরিয়াহর নিয়ম-কানুন মেনে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করার শর্তেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছে। সুতরাং শরিয়াহ পরিপালন করার ব্যাপারে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি: ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো ইসলামী ব্যাংকে শরিয়াহ পরিপালনের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি শুধু আইনগত নয়; বরং এর জন্য মহান আল্লাহর কাছেও জবাবদিহি করতে হবে। আর্থিক কার্যক্রমে শরিয়াহ পরিপালিত হলে আল্লাহতায়ালা সন্তুষ্ট হবেন এবং পরিপালনকারীকে পুরস্কৃত করবেন। আর এ জন্য রাসুল (সা.) সুদদাতা, গ্রহীতা, লেখক ও সাক্ষী উভয়কেই অভিসম্পাত করেছেন। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় সুদ গ্রহণ ও প্রদানের ভয়াবহতা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং সব ধরনের আর্থিক লেনদেন সুদমুক্ত রাখতে ও পরকালের জবাবদিহির ভয়ে শরিয়াহ পরিপালন গুরুত্বপূর্ণ।

সংশ্লিষ্ট সবার কাছে ব্যাংকের দায়বদ্ধতা: আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করাই শুধু নয়; বরং দুনিয়াতেও ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষ যেমন: নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ, শেয়ার হোল্ডার, ডিপোজিটর, বিনিয়োগ গ্রাহক সবার কাছেও শরিয়াহ পরিপালনের ব্যাপারে ইসলামি ব্যাংকগুলোর দায়বদ্ধতা রয়েছে।

লাভজনকতা বৃদ্ধি: ইসলামিক ব্যাংকে সঠিকভাবে ও নিয়মনীতি মেনে শরিয়াহ পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পাদিত হলে ব্যাংকের লাভজনকতা বৃদ্ধি পায়। কারণ শরিয়াহ পরিদর্শনের ফলে বিনিয়োগের অনিয়মগুলো চিহ্নিত হয় এবং পরবর্তীতে তা উত্তরণের আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে। যার ফলে ব্যাংকের সম্পদের কোয়ালিটি ধরে রাখা সম্ভব হয়।

মুরাকিব (শরিয়াহ অডিটর): শরিয়াহ সেক্রেটারিয়েটে কর্মরত মুরাকিবরা শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির অনুমোদনকৃত বার্ষিক শরিয়াহ পরিদর্শন পরিকল্পনা মোতাবেক ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় বছরে সাধারণত একবার অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করেন। জেনারেল ব্যাংকিং, বিনিয়োগ, বৈদেশিক বাণিজ্য তথা ব্যাংকের যাবতীয় কার্যক্রম শরিয়াহ পরিদর্শনের আওতাভুক্ত। তা ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নৈতিক মান, শাখার পরিবেশ, মহিলা গ্রাহকদের সেবার মান ইত্যাদি সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

মুরাকিবদের ভূমিকা: প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই কিছু উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকে। ইসলামি ব্যাংকেরও কিছু উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আছে এবং সেগুলো সম্পূর্ণভাবে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে হতে হবে। কেবল মুনাফা অর্জন করা কিংবা সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া ইসলামি ব্যাংকের মুখ্য উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নয়। ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থা কাঠামোগত দিক থেকে প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থার মত মনে হলেও আদর্শ ও মূলবোধের দিক থেকে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। সুতরাং ব্যাংকিং খাতে সুদ নির্মূল করে সুদবিহীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা কায়েমে মুরাকিবদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মুরাকিব, মাকাসিদে শরিয়াহর আলোকে ও ইসলামি ব্যাংকিং কাঠামোর ভিত্তিতে শাখার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কিনা, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিদর্শন করে থাকেন। ইকুইটি, আমানত, সম্পদ ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের ভূমিকা রাখে। ইসলামি ব্যাংকগুলোকে জনবলের অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ থেকে সৃষ্ট শরিয়াহ ও কারিগরি সমস্যার উত্তরণে মুরাকিরা শাখাভিত্তিক পরিদর্শনকালে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। যখন ব্যাংকগুলোর জনবল এই নতুন কৌশলের সঙ্গে পুরোপুরি পরিচিত থাকে না তথন পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণবিহীন কর্মীবাহিনীকে ইসলামি ব্যাংকিং বিষয়ে বাস্তব বা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে সাময়িকভাবে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সহায়তা করে থাকে। ব্যাংকিং শরিয়াহ আইন পুরোপুরি অনুধাবনের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সচেতনতা ও অনুপ্রেরণা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। শরিয়াহ পরিদর্শনের শেষ দিন শাখার জনবল নিয়ে একটি মোটিভেশনাল ও শরিয়াহ অওয়ারনেজ প্রোগ্রামের মাধ্যমে শরিয়াহ সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। বিশ্বের সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে ইসলামি ব্যাংকিং দ্রুত বর্ধনশীল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আবির্ভূত হচ্ছে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে প্রায় সব ব্যাংক উইন্ডো বা শাখা ইসলামি ব্যাংকিং চালু করছে। যার ফলে ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম তদারকি ও পরিদর্শনের ওপর ব্যাংকের সফলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। কারণ সঠিকভাবে শরিয়াহর বিষয়টি তদারকি না করা হলে ব্যাংকের মুনাফার সঙ্গে সুদ যোগ হতে পারে, যার কারণে ইসলামি ব্যাংকের সঙ্গে গ্রাহকের চুক্তি লঙ্ঘন হতে পারে। ফলে গ্রাহকের আস্থার সংকট তৈরি হতে পারে এবং পর্যায়ক্রমে প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। সর্বোপরি, আর্থসামাজিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে আর্থিক খাতে ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থার অবস্থান সুদৃঢ় ও জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য এবং সুদকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বয়কট করার জন্য মুরাকিবদের ভূমিকা অপরিহার্য।

পরিশেষে ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে বাস্তবতার আলোকে ইসলামি ব্যাংকিং কাঠামো শক্তিশালী করণে শরিয়াহ অডিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে টেকসই করার জন্য শরিয়াহ নিয়ম-কানুনগুলো কঠোরভাবে মেনে চলা অত্যান্ত জরুরি। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রচলিত ব্যাংকগুলো সাধারণ মানুষের আস্থা ধরে রাখতে যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন ইসলামি ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহক সেবা বৃদ্ধির মাধ্যমে জনসাধারণের আস্থা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হচ্ছে। অন্যদিকে অনেক ব্যাংক তাদের ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রমে মুরাকিবের মাধ্যমে শরিয়াহ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করেন না, যার ফলে জনগণের মাঝে প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে ইসলামি ব্যাংকিং অপারেশনে যারা জড়িত তাদের কার্যক্রম শরিয়াহভিত্তিক করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি জোরদার করা উচিত।

মালয়েশিয়া ‘ইসলামিক ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউট মালয়েশিয়া (আইবিএফআইএম) সার্টিফাইড প্রফেশনাল শরিয়াহ অডিটর (সিপিএসএ) প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রতি বছর কমপক্ষে ২০০ জন নিরীক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্য রাখে, যাতে ইসলামি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শরিয়াহ সম্মত অডিটরদের চাহিদা পূরণ করা যায়। আমাদের দেশে ইসলামিক ব্যাংকগুলোর জন্য মানসম্মত ও দক্ষ শরিয়াহ অডিটর তৈরির লক্ষ্যে এরকম প্রতিষ্ঠান সময়ের দাবি। সেন্টাল শরিয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশের উদ্যোগে ওয়ার্কশপ এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মুরাকিবদের (শরিয়াহ অডিটর) যোগ্যতা বৃদ্ধি করতে হবে। তবেই ইসলামি ব্যাংকিং আরও উৎকর্ষ লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ।

কর্মকর্তা ও মুরাকিব

শরিয়াহ সেক্রেটারিয়েট

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড

drmdgulammustafa@gmail.com