আতিক এম রহমান, ইবি: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) অনুমোদনহীন বিভাগে শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ সম্মান শ্রেণিতে ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা’ বিভাগে ৩০টি আসনের বিপরীতে এ ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ‘বি’ ইউনিটের সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, উপাচার্যের নির্দেশক্রমে আমরা ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছি। এ বিভাগে বর্তমানে কোনো সভাপতি না থাকায় আমিই দায়িত্ব পালন করছি। অনুমোদনের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। না পেলে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের অন্য বিভাগে বণ্টন করে দেয়া হবে।
জানা গেছে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে হুট করেই ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা’ নামে একটি বিভাগ সংযুক্ত করা হয়। সে সময়ই ক্যাম্পাসজুড়ে সৃষ্টি হয় নানা গুঞ্জন। অফিস, শিক্ষক ও জনবলবিহীন নামসর্বস্ব বিভাগকে অনেকে নাম দেন ‘ভুতুড়ে বিভাগ’। বিষয়টি জানাজানি হলে সাফাই বক্তব্য দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি টিম সরেজমিন পরিদর্শনে আসে।
জানা গেছে, নতুন বিভাগের জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো নিয়ে সন্তোষমূলক চিত্র না পাওয়ায় অনুমোদনপত্রে স্বাক্ষর করতে ইতোমধ্যেই অসম্মতি জানিয়েছেন ইউজিসির এক সদস্য। এদিকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এতে আবারও বিতর্ক শুরু হয়েছে ক্যাম্পাসজুড়ে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার থেকে গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষার অধীনে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে মেধাতালিকার সাক্ষাৎকার ও ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গুচ্ছভুক্ত কলা অনুষদের ‘চারুকলা’ বিভাগে ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নেয়া হবে বলে এ বিভাগে ভর্তিচ্ছুদের ‘আলাদাভাবে’ আবেদন করতে বলা হয়েছে।
গুচ্ছভুক্ত তিন ইউনিটে ইবি’র সাতটি অনুষদ রয়েছে। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে রয়েছে বিজ্ঞান অনুষদ, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ এবং বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ। ‘বি’ ইউনিটে রয়েছে কলা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং আইন অনুষদ। এ ছাড়া ‘সি’ ইউনিটে রয়েছে ব্যসসায় প্রশাসন অনুষদ। তিনটি ইউনিটের মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ১১টি বিভাগ, ‘বি’ ইউনিটে ১৫টি এবং ‘সি’ ইউনিটে ৬টি বিভাগ রয়েছে।
বিদ্যমান বিভাগগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিভাগে এখনও প্রবল জনবল ও অবকাঠামোগত সংকট রয়েছে। কোনো কোনো বিভাগ একেবারেই শিক্ষকবিহীন আবার কোনো কোনো বিভাগ ধার করা শিক্ষক দিয়ে চলছে।
এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, অনুমোদনহীন বিভাগে তড়িঘড়ি করে শিক্ষার্থী ভর্তির পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, জনবল ও অফিসবিহীন বিভাগে ভর্তি করানোর মানে হলো শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে তামাশা করা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক বিভাগ রয়েছেন যাদের অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকট রয়েছে। সেগুলোর দিকে নজর না দিয়ে নতুন নতুন বিভাগ খোলা বিলাসিতার নামান্তর।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত একটি বিভাগের চেয়ারম্যান নাম না প্রকাশ করে বলেন, অনুমোদনহীন বিভাগে ভর্তি নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আমাদের সম্মতি চাওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, অনুমোদন না পেলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করে দেয়া হবে। কিন্তু আমরা সেটি সঙ্গে সঙ্গে ‘প্রত্যাখ্যান’ করে দিয়েছি। তারা কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির কাছে উত্থাপন করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, অনুমোদনহীন বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি কোনো নিয়মের মধ্যেই পড়ে না। এটি সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত। চারুকলা বিভাগ খোলার তিন বছর হয়েছে; এখনও একজন শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হয়নি। এমনকি তাদের নিজস্ব অফিস ও শ্রেণিকক্ষ নেই।
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার জানামতে সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছে; যা হচ্ছে উপাচার্যের নির্দেশেই হচ্ছে। অবকাঠামো এবং জনবল নিয়ে আমাদের কিছু সংকট আছে; আমরা ধীরে ধীরে সবগুলোকে ‘অ্যাড্রেস’ করার চেষ্টা করছি। ‘ওভারনাইট’ তো আর সবকিছু করা সম্ভব করা যায় না।’
ইউজিসি সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফেরদৌস জামান তুহিন বলেন, অনুমোদনহীন বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির কোনো প্রশ্নই আসে না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। তখন কাজ চলমান ছিল, আমাদের জানামতে কাজ এখনও শেষ হয়নি।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ইউজিসি থেকে আমাকে মৌখিক অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই লিখিত অনুমোদন দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এরপরও যদি অনুমোদন না হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা মাইগ্রেশন করে অন্য বিভাগে যেতে পারবে।