ইসহাকপুর সোয়েটার কারখানা

১৫০ শ্রমজীবী মানুষ নিয়ে আবারও সম্ভাবনাময় অগ্রযাত্রার পথে যাত্রা করেছে ইসহাকপুর সোয়েটার কারখানা। নোয়াখালী সদরের নান্দনিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশে এর অবস্থান। ইতোমধ্যে জাপান থেকে আনা হয়েছে তিন কোটি টাকা দামের অত্যাধুনিক অটোমেশিন। ফলে শুরু হয়েছে বিশ্বমানের নানা রঙের, নানা বর্ণের, উন্নত ও আধুনিক মানের সোয়েটার উৎপাদন।
ইসহাকপুর সোয়েটার কারখানাটি প্রথম যাত্রা করে ২০০৩ সালে। ওই সময় কর্মচারীদের নির্ধারিত বেতন দিতে হিমশিম খেত প্রতিষ্ঠানটি। বেতন-ভাতার পেছনে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হতো বলে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক কবির হোসেন। কোনো কর্মচারী কাজ না করেও বেতন নিয়েছেন বলে জানান তিনি। ধারাবাহিক লোকসানের এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে কারখানার দৈনন্দিন সার্বিক হিসেবে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসংগতি তো ছিলই।
জেলা সদরের ইসহাকপুরে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিশিষ্ট শিল্পপতি মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ২০০৩ সালে প্রায় ২০ একর জায়গার ওপর ইসহাকপুর সোয়েটার কারখানার উদ্বোধন করেন। তখন থেকে একনাগাড়ে প্রায় ২০১২ সাল পর্যন্ত চলেছিল কারখানাটি। এরপর আর্থিক দৈন্যদশাসহ নানা প্রতিকূলতায় এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে এটি বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ৫ মার্চ কারখানাটি আবারও চালু করেছেন তিনি। ঘাত-প্রতিঘাতের অভিজ্ঞতায় বলা হয়Ñযিনি কাজ করবেন, তিনিই টাকা পাবেন। বর্তমানে পুরোপুরিই উৎপাদনের বিনিময়ে বেতন নিচ্ছেন শ্রমিকরা।
কারখানার জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক কবির হোসেন বলেন, কাজ করে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৭ হাজার ও সর্বনি¤œ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করছেন স্থানীয় কর্মীরা। তিনি আরও জানান, নিজ বাড়িতে বসেই অনেকটা আয় করছেন এখানকার শ্রমিকরা। আমাদের এ সমাজব্যবস্থায় বেকার মেয়েদের পক্ষে মাসে দরিদ্র মা-বাবার হাতে সাত থেকে আট হাজার টাকা তুলে দেওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। বর্তমানে দিনে দুই ভাগে কাজ করছেন শ্রমিকরা। স্থানীয় পরিবেশ-পরিস্থিতি, জনবল ও সরকারের সহযোগিতা পেলে এ কারখানার অগ্রযাত্রা আরও প্রসারিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে কারখানার কর্মী
শারমিন আক্তার, সুফিয়া খাতুন, নাহিদা বানু, আবদুর রহিম ও আকবর হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন পায়ে হেঁটে বাড়ি থেকে এসে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের কোনো কারখানায় কাজ করলে খেয়ে-পরে বাড়িতে মা-বাবার জন্য টাকা পাঠানো যেত বলে মনে হয় না। তাই বর্তমানে যা-ই রোজগার করছি, অনেকটা সঞ্চয়ের মতোই মাস শেষে হাতে পাচ্ছি।
জানা যায়, জেলা সদরের দুটি ও সুবর্ণচরে একটিসহ মোট তিনটি কারখানার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ব্যয় হয়েছে ৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সদরের একটি ও সুবর্ণচরের একটি এ দুটি কারখানা এখনও অচল রয়েছে। সদরের ইসহাকপুর সোয়েটার কারখানার উৎপাদিত সোয়েটার যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, চীন ও জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। তাছাড়া স্থানীয়ভাবে বেকারত্ব দূরীকরণে এ কারখানাটি জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখছে বলে মনে করে জেলাবাসী।
ব্যবসায়ী আবদুর রব হাসেম বলেন, এ কারখানাটি নতুন করে শুরু হওয়ায় আমরা খুশি। আমরা আশার আলো দেখছি। ধারণা ছিল যে, আমাদের মতো এলাকার হতাশাগ্রস্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা এখানে কাজ করে ন্যূনতম বেকারত্ব ঘুচাবে। কারখানাটি ঘিরে তাই আশেপাশে আমরা কিছু ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বপ্নও দেখেছিলাম। কিন্তু কোন কারণে যে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তা জানি না। তিনি মনে করেন, কর্তৃপক্ষ শুরু থেকে একটু হিসাব করে পরিচালনা করলে এটি আরও সমৃদ্ধ হবে।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দিন শাহিন বলেন, বর্তমান সরকার সব ধরনের উন্নয়নের পক্ষে। কারখানাটি আবার শুরু হয়েছে জেনে আমি আশান্বিত। নিশ্চয়ই এলাকার উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কর্তৃপক্ষ আশাবাদী। তার মনে করছেন, কর্মদক্ষতা ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে ইসহাকপুর সোয়েটার কারখানা। এলাকার পাশাপাশি দেশ ও অর্থনীতির কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারবে। এ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ জনশক্তির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ ধূমপানমুক্ত এ প্রতিষ্ঠান। কর্মস্থলে দুর্ঘটনাসহ নানা ঝুঁকি এড়াতে সচেষ্ট তারা। কর্মীবান্ধব প্রতিষ্ঠান গড়া ও গ্রাহকের কাছে গুণগতমানে সেরা পণ্য পৌঁছে দিতে তৎপর কর্তৃপক্ষ।

আকাশ মো. জসিম

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০