নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গতকাল শনিবার ৪ নভেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত আলোচনার দিন নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এতে ৪৪ দলের মধ্যে ১৮টি দলই অংশ নেয়নি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সংলাপ চলে।
কমিশনের নিবন্ধনপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দল ৪৪টি। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ২২টি এবং বেলা ৩টায় ২২টি দলের সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রথম অধিবেশনে ৯টি দল অংশ নেয়নি। দ্বিতীয় অধিবেশনেও ৯টি দল অনুপস্থিত ছিল, অর্থাৎ দুই অধিবেশনে ১৩টি করে মোট ২৬টি দল অংশগ্রহণ করে।
নিবন্ধিত দলগুলোর অনুপস্থিতির বিষয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘(সংলাপের জন্য) আমরা কম সময় নিয়ে দাওয়াত দিয়েছি। দ্রæততার কারণে কোনো দল অংশগ্রহণ না করে থাকতে পারে। কিন্তু তারা ইচ্ছা করলে কমিশনে আলাপ করে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করব।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা কম সময় নিয়ে দাওয়াত দিয়েছি। তারপরও দ্রæততার কারণে কোনো দল অংশগ্রহণ না করে থাকলে তারা যদি ইচ্ছা পোষণ করে, কমিশনে আলাপ করে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করব। কারণ আমাদের ইচ্ছা আমরা সকলের সঙ্গে মতবিনিময় করতে চাই। নির্বাচনের বড়জোর দুমাস সময় আছে। আমাদের কিছু কাজ দ্রæততার সঙ্গে করতে হবে। নির্বাচন বিষয়ে যে প্রস্তুতিগুলো গ্রহণ করেছি, তা আপনাদের অবহিত করা কারণ রাজনৈতিক দলগুলোই হচ্ছে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা এবং নির্বাচনের প্রধান অংশীদার।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলের সঙ্গে মতবিনিময় করতে চাই। নির্বাচনের বড়জোর দুমাস সময় আছে। আমাদের কিছু কাজ দ্রæততার সঙ্গে করতে হবে। নির্বাচনের বিষয়ে যে প্রস্তুতিগুলো গ্রহণ করেছি, তা সবাইকে অবহিত করতে চাই, কারণ রাজনৈতিক দলগুলোই হচ্ছে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার এবং নির্বাচনের প্রধান অংশীদার।’
আজকের সংলাপে নির্বাচনকালীন পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভোটে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্তের কথাও উল্লেখ করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। যেমন রাজনৈতিক মতানৈক্য হওয়ার আগে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা না করার পক্ষে মতামত দিয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)।
বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো প্রথম থেকেই বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারবিরোধীরা এসব দাবি পূরণ হলে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনেও সংস্কার ও পরিবর্তন চায় তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব।
অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, আগামী সাধারণ নির্বাচন সংবিধান অনুসারে এবং বর্তমান সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে অনড় অবস্থানে দলটি।
ইসির সঙ্গে সংলাপে বাংলাদেশ কংগ্রস নামের একটি রাজনৈতিক দল অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে জনগণের মতামতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার দাবি জানিয়েছে।
ইসির সঙ্গে আলোচনার পরে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য কমিশনকে আরও কাজ করতে হবে। তারা কতটা কার্যকর ভ‚মিকা নেয়, আমরা সে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা নির্বাচনে আসব কি না, সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।’
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন যে বক্তব্যগুলো দিয়েছে এবং যে ব্যবস্থাগুলো নিয়েছে, আমাদের সরকার যে সহায়তা করেছেন, তার বাস্তব প্রতিফলন আমরা দেখছি। নির্বাচনে প্রতিটি ব্যালট পেপারের পিছনে সিল ও স্বাক্ষরের ব্যবস্থা আবার রাখা হয়েছে। এতে নির্বাচন আরও সুষ্ঠু হবে।’
‘নির্বাচন কমিশন যে তথ্য দিয়েছে, তার ভিত্তিতে আমরা মনে করছি সংবিধান অনুযায়ী একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে’ যোগ করেন তিনি।
এদিকে কিছু এলাকায় নির্বাচনকালীন অরাজকতার যে উদ্বেগ রয়েছে, সে বিষয়ে ফারুক খান বলেন, আওয়ামী লীগ কখনও অরাজকতার নির্বাচন করেনি। আমাদের ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেবেন। এখানে যেসব রাজনৈতিক দল নামসর্বস্ব, যাদের ভোটার নেই, তারাই এরকম অভিযোগ করতে পারে বলে আমি মনে করি।’
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিএনপির অনুপস্থিত থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে, এমন কোনো কথা সংবিধানে লেখা নেই। যাদের জনসমর্থন নেই, তারা নির্বাচনে আসবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। বিশেষত যাদের দলের সক্ষমতা নেই, জনসমর্থন নেই, জনগণের যাদের ওপর আস্থা নেই, তারা তো নির্বাচনে আসবেই না।’
বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির সমালোচনা করে ফারুক খান বলেন, বিএনপি যে কর্মসূচি দিচ্ছে, সেটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এগুলো সহিংসতার কর্মসূচি। এগুলোকে ‘টেররিস্ট অ্যাকশন’ বলা যেতে পারে।
‘যেকোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি আইনের বিরোধী কাজ করে, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, নিচ্ছে এবং আগামীতেও নেবে।’
নির্বাচনের পরিবেশ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ আছে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইলেকশন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনে ভোটারদের উৎসাহিত করার জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাবে। আমি মনে করি, জনগণ তখন আরও বেশি উৎসাহিত হবে এবং আগামী নির্বাচনের জন্য আসবেন।’