নিজস্ব প্রতিবেদক: সংসদে পাস হওয়া ইসি গঠন আইনে কাউকে ইনডেমনিটি দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ইনডেমনিটির পথে হাঁটে না। ইনডেমনিটি কথা শুনলেই আওয়ামী লীগের হƒদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। বিএনপি ইনডেমনিটি দিয়ে আমাদের রক্তক্ষরণ করিয়েছে। এ আইনে লিগ্যাল কাভারেজ দেয়া হয়েছে। এ আইনের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তাকে প্রটেকশন দেয়া হয়নি।
জাতির পিতাকে হত্যার কথা স্বীকার এবং খুনিদের পুনর্বাসিত করার বিষয়টি স্বীকার করে জনগণের কাছে মাফ চাইলে আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্যে আসবে বলে জানান আইনমন্ত্রী। গতকাল সংসদে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিলটি পাসের সময় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা অভিযোগ করেন, খসড়া আইনটি ‘তড়িঘড়ি করে’ আনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি এটা তড়িঘড়ি করে করার আইন নয়, এটা সত্য। বর্তমান কমিশনের মেয়াদের মধ্যে আইন করা সম্ভব নয় এটাও বলেছি। কারণ আমি বলেছিলাম, করোনার সময় যে সীমিত সময়ের জন্য সংসদ বসে, এর মধ্যে এই আইন পাস করা কঠিন হবে। সংসদকে শ্রদ্ধা জানিয়েই এটা বলেছিলাম।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, সুজনের একটি প্রতিনিধিদল আমার কাছে গিয়ে আইনের একটি খসড়া দিয়ে পাসের প্রস্তাব করেন। আমি আইনটি পাস করার জন্য সময় লাগবে বলে তাদের জানাই। তারা অর্ডিন্যান্স করে এটা করার প্রস্তাবও দেন। আমি বললাম, সংসদকে পাস কাটিয়ে এই আইন করব না। সংসদে নেয়া ছাড়া এ আইন আমরা করব না।
এর জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে যারা গেছেন, যারা যাননি তারা নির্বাচন কমিশন নতুন আইনের মাধ্যমে গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। গত ১৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করে। রাষ্ট্রপতি আইনের বিষয়ে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আমরা তড়িঘড়ি করিনি। এ আইনের কথা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হয়, তখনই এই আইনের বিষয়ে কথা হয়েছিল। তখনই প্রধানমন্ত্রী এই আইনটি করার জন্য বলেছিলেন।
তিনি বলেন, এ আইন করার প্রক্রিয়া শুরুর পর যারা বাইরে কথা বলেন তাদের আন্দোলন সৃষ্টির চেষ্টার যে টুলস বা মসল্লা, সেটা আর থাকেনি। সেজন্যই এখন তারা উঠে-পড়ে লেগেছেন। আইনে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে ২০১২ সালে রাজনৈতিক দলগুলো সম্মত হয়েছিল। তখন থেকেই এই সার্চ কমিটির ধারণা এসেছে। এটা কল্পনা থেকেও আসেনি, আকাশ থেকেও পড়েনি। এটা তো নতুন আবিষ্কার নয়। সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত দুই কমিশন হয়েছে। যার কারণে এটা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ফলে জনমত যাচাই তো দশ বছর ধরে হয়ে গেছে। বিষয়টি হলো তালগাছটি না পেলে অনেক কমপ্লেন থাকে।
তিনি বলেন, দুজন বিশিষ্ট নাগরিক কারা হবেন, সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমরা তো আইনে কোথাও বলিনি যে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে তাদের নিয়োগ দেয়া যাবে না। বিশিষ্ট নাগরিকের ক্রাইটেরিয়া তো বলে দেয়া হয়নি। আমরা কেবল রাষ্ট্রপতিকে এই সুযোগটি দিয়েছি।
বক্তব্য এক্সপাঞ্জ বিষয়ে বিএনপির হারুনের বক্তব্যর জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি আগে অসংসদীয় ভাষায় কথা বলেছিলেন বলেই তা এক্সপাঞ্জ হয়। আমি অসংসদীয় ভাষায় কোনো কথা বলিনি। আমারটা এক্সপাঞ্জ হবে কেন?
বিএনপির এমপিদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির জবাবে মন্ত্রী বলেন, তারা তো তালগাছ চান। তারা কিছুই মানেন না, যতক্ষণ তালগাছটা তাদের না হয়। তারা আদালতের রায়ও মানে না। তাদের কথা হলো, যেটা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী করেছেন, সেটা ভালো। কিন্তু যুদ্ধ করে জাতির পিতা যেটা করে দিয়েছেন সেটা ভালো না।
বিএনপি এমপিদের ঐকমত্যের দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঐকমত্য করতে হলে তাাদের সত্যকে স্বীকার করতে হবে। আর সত্যটি হচ্ছে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারা ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে দেননি। খুনিদের পুনর্বাসিত করেছেন। এসব সত্য মেনে জনগণের কাছে মাফ চাইলে আমরা ঐকমত্যে আসব।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত আগের দুই কমিশনকে হেফাজত প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ইনডেমনিটি আর লিগ্যাল কাভারেজ এক কথা নয়। ইনডেমনিটি হচ্ছে অন্যায় করার পরে তাকে প্রটেকশন দেয়ার জন্য আইন করা। লিগ্যাল কাভারেজ হচ্ছে যেকোনো বৈধ কাজ, যেটার লিগ্যাল কাভারেজ ছিল না, সেটা তার আওতায় আনা। ইনডেমনিটি কথা শুনলেই হƒদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। ইনডেমনিটি আওয়ামী লীগ দেয় না, এটা বিএনপি দেয়। তারা ইনডেমনিটি দিয়ে আমাদের রক্তক্ষরণ করিয়েছে। ২১ বছর আমাদের অপেক্ষা করিয়েছে জাতির পিতার হত্যার বিচার করতে। ইনডেমনিটির কথা আর আমাদের কাছে শোনাতে আসবেন না। আমরা ওই পথে হাঁটি না। এই আইনে লিগ্যাল কাভারেজ দেয়া হয়েছে। ২০১২ সালে যে কাজটা করা হয়েছে, সেটা থেকে শুরু করে সেটার লিগ্যাল কাভারেজ। এই আইনের মধ্যে কেউ অন্যায় করে থাকলে তাকে প্রটেকশন দেয়া হয়নি। সেই কারণে তাদের সব প্রস্তাব গ্রহণ করা যায় না। তাদের এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করব। না হলে সংসদ সদস্যদের অনুরোধ করব, এসব প্রস্তাব ভোটে হারিয়ে দেয়ার জন্য।
পরে সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর বলা হয়েছিল ৩ মেয়াদে এটি থাকবে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, সংসদ চাইলে দুটি নির্বাচন হতে পারে। সংসদ এটি চায়নি। সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ শেষে আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি যত সংশোধনী গ্রহণ করেছেন, তার মনে হয়, এর আগে কখনও এত বেশি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়নি।