আতাউর রহমান: পুঁজিবাজারে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগে এবার প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিকারী মো. জসিম উদ্দিন শেখকে এক কোটি টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অনুসন্ধানে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজি প্রমাণিত হওয়ায় এ জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার যোগসাজশের মাধ্যমে কারসাজি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগে মো. জসিম উদ্দিন শেখ, মো. এজি মাহমুদ ও মো. সাইফ উল্লাহকে ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
শেয়ার কারসাজি ও জরিমানার বিষয়ে বিএসইসির সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর সেকশন ১৭(ই)(৩) ভঙ্গের জন্য মো. জসিম উদ্দিন শেখকে এক কোটি টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ বিষয়ে এনফোর্সমেন্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর সেকশন ২২ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-এর ধারা ১৮-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি হওয়ার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে অভিযুক্তকে বিএসইসির অনুকূলে দণ্ডিত অর্থ ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মধ্যে বিএসইসিতে জমা দিতে হবে। অন্যথায় অভিযুক্তর বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
অভিযুক্ত মো. জসিম উদ্দিন শেখ এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের বিনিয়োগকারী ও শিক্ষিত বেকার কেন্দ্রীয় সঞ্চয় ঋণদান সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। তিনি চাঁদপুরে থাকেন। তার বিরুদ্ধে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে তিনি কত কোটি টাকা মুনাফা করেছেন, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পুঁজিবাজারে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে গুঞ্জন ছিল আর্থিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানিটির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কারসাজির কারণে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দামে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। গত দুই বছরের মধ্যে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সর্বনিন্ম ৭৮ টাকা ৫০ পয়সা নেমে আসে। এর পর থেকেই ধীরে ধীরে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে। পরে ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর শেয়ারটির দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১০৬ টাকা ৩০ পয়সা। এরপর ২০২১ সালের ৪ মে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৫ টাকা ৯০ পয়সা। তার চার মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৪ টাকা ৮০ পয়সা। তবে এর পর থেকেই ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম পড়তে থাকে। প্রায় ১৩ মাসের ব্যবধানে সর্বশেষ গতকাল কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫১ দশমিক ৪ টাকায় লেনদেন হয়েছে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ অবস্থান।
এ বিষয়ে জানতে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই বলে তিনি জানান।
তবে বিএসইসির অপর এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করে শেয়ার বিজকে জানান, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতে জসিমকে এক কোটি টাকা জরিমানা করেছে কমিশন। এ বিষয়ে জসিমকে জানানো হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। পুরো বিষয়টির ফাইল এনফোর্সমেন্ট বিভাগ থেকে তৈরি করে চিঠি পাঠাতে কয়েক দিন সময় লাগে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করা কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৪৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ারসংখ্যা চার কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার ১৪৪টি।