মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কথা বলার সুযোগ না দিয়েই তড়িঘড়ি করে শেষ হলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতের কোম্পানি ইস্টার্ন ব্যাংকে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। নিজেদের অভিজাত হিসেবে দাবি করা এই প্রতিষ্ঠানের এজিএম শুরু হয়ে শেষ হতে সময় লাগে মাত্র সাত মিনিট। এই সময়ের মধ্যে পাস হয়ে যায় কোম্পানির সব ধরনের এজেন্ডা।
এদিকে অুষ্ঠানের কথা বলার সুযোগ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা। তারা অভিযোগ করেন এ প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ নিজের কোম্পানিকে অভিজাত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাবি করে। কিন্তু নিয়মনীতির বেলায় সম্পন্ন এর উল্টো। নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না তারা। সে জন্য কোনো নিয়ম না মেনেই এজিএম শেষ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দাবি, সব ধরনের নিয়ম মেনেই এজিএম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম করা হয়নি।
শেয়ারহাল্ডারদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, ‘তড়িঘড়ি করে এজিএম সম্পন্ন হয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংকের। এটা ঠিক নয়। শেয়ারহোল্ডারদের কথা বলার সুযোগ দেওয়া উচিত। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তেমন সুযোগ রাখা হয়নি। ইস্টার্ন ব্যাংকের মতো কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ প্রত্যাশা করা যায় না।
উপস্থিত অন্য বেশকিছু বিনিয়োগকারী বলেন, ‘এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের বক্তব্য ছাড়াই কোম্পানিগুলো হরহামেশা এজেন্ডা অনুমোদন করছে। বর্তমানে এটাই যেন এসব কোম্পানির এজেন্ডা অনুমোদনের নতুন কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ব্যাংক খাতের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেউ এটা আশা করে না।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর ইস্কাটনে পুলিশ কনভেনশন হলে ইস্টার্ন ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কোম্পানির চেয়ারম্যান এম গাজীউল হক। সেখানে সাধারণ শেয়ার হোল্ডাররা উপস্থিতি ছিলেন। এসব শেয়ারহোল্ডারদের অভিযোগ অনুষ্ঠানের তারা কোনো ধরনের কথা বলার সুযোগ পাননি। অনেকটা উপেক্ষিত হয়েছেন তারা।
এজিএমে এজেন্ডা উপস্থাপন করার সঙ্গে সঙ্গে কিছু বিনিয়োগকারী পাস পাস করে চিৎকার শুরু করেন। এতে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তাদের অভিযোগ যারা এজেন্ডা পাস করিয়ে দিয়েছে তারা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া করা লোক। প্রায় সব কোম্পানির এজিএমে দেখা যায়। বাজারে এরা এজিএম পার্টি নামে পরিচিত।
এজিএমে উপস্থিত শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে ২০১৭ সমাপ্তবছরে জন্য ঘোষিত ২০ শতাংশ নগদ ডিভিডেন্ডসহ অন্যান্য এজেন্ডা অনুমোদিত হয়।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শেয়ারহোল্ডার বলেন ইদানীং প্রায় সব প্রতিষ্ঠান ভাড়া করা লোক নিয়ে এজিএমের এজেন্ডা পাস করায়। এ কোম্পানি বেলায়ও ঠিক তেমনটি হয়েছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের কথা বলার সুযোগ দেয়নি। সারা বছর আমরা এজিএমে কিছু বলার জন্য অপেক্ষায় থাকি। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের সঙ্গে বিমাতা সূলভ আচারণ করেন। এটি ঠিক নয়। কর্তৃপক্ষের উচিত এজিএম করার জন্য নির্ধারিত সময় বেঁধে দেওয়া।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা সব ধরনের নিয়ম মেনেই এজিএম সম্পন্ন করেছি। কোন ধরনের আইন লঙ্ঘন করা হয়নি। শেয়ারহোল্ডারদের অনুমতি নিয়েই এজেন্ডা পাস হয়েছে। কারও যদি আমাদের নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকে তবে তারা সেটা বিএসইসিতে গিয়ে করুক।
এজিএম সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কোম্পানির পরিচালক মীর নাসির হোসাইন, এএম শওকত আলি চৌধুরী, আনিস আহমেদ, গাজী মো. শাখাওয়াত হোসাইন, মিয়া মোহাম্মদ আবদুর রহিম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী রেজা ইফতেখার, সচিব সাইফুর রহমান প্রমুখ।
‘এ’ ক্যাটেগরির ইস্টার্ন ব্যাংকের কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে ১৯৯৩ সালে তালিকাভুক্ত হয়। এর অনুমোদিত মূলধন এক হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৭৩৮ কোটি টাকা।
কোম্পানিটির মোট শেয়াররের মধ্যে ৩১ দশমিক ৫৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন পরিচালকেরা। বাকি শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ, বিদেশিদের কাছে শূন্য দশমিক ৫১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারী ২৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি ২০ শতাংশ নগদ এবং পাঁচ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করে।
এদিকে গতকালের লেনদেন চিত্রে দেখা যায় দিন শেষে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শেয়ার ৩৫ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়। দিনজুড়ে শেয়ারের দর ওঠানামা করে ৩৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৩৬ টাকার মধ্যে। গত এক বছরের হিসাবে দেখা যায় এ সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার সর্বনিম্ন ৩১ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫৯ টাকায় লেনদেন হয়।
ইস্টার্ন ব্যাংকের এজিএম সাত মিনিটেই শেষ
