ইস্পাত খাতের কোম্পানির পুঁজিবাজারে অনাগ্রহ

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ ইস্পাত পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ইস্পাত খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর বছরে ৮০ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন সক্ষমতা আছে। বর্তমানে দেশে আড়াইশ’র বেশি ইস্পাত কারখানা থাকলেও ২০-২৫টি কোম্পানি সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে। অথচ পুঁজিবাজারে ইস্পাত খাতে এসএস স্টিল, আরএসআরএস, জিপিএইচ ইস্পাত, বাংলাদেশে স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিল, অ্যাপোলো ইস্পাত লিমিটেড এবং এস আলম কোল্ড রোল স্টিল লিমিটেড অর্থাৎ মাত্র সাতটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। কিন্তু দেশের একেএস, কেএসআরএম, সীমা অটোমেটিক রি-রোলিং মিলস, আনোয়ার ইস্পাত, গোল্ডেন ইস্পাতসহ বড় ও মাঝারি আকারের কারখানাগুলোর অনাগ্রহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে ইস্পাত খাতের মোট সাতটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে। এর মধ্যে সর্বশেষ এসএস স্টিল লিমিটেড গত ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয়। এর আগে রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড (আরএসআরএস), জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড, বাংলাদেশে স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিল, অ্যাপোলো ইস্পাত লিমিটেড এবং এস আলম কোল্ড রোল স্টিল লিমিটেড। যদিও বর্তমানে দেশের আড়াইশ’ ইস্পাত কারখানা থাকলেও ২০-২৫টি ইস্পাত কোম্পানি সক্রিয়। অন্যদিকে দেশে বড় ও মাঝারি মানের বেশ কয়েকটি ভালো ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয়নি কিংবা অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামভিত্তিক দেশের সবচেয়ে বড় ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের স্টিল। এ প্রতিষ্ঠানের বার্ষিকী উৎপাদন সক্ষমতা ১৪ লাখ মেট্রিক টন। কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান  কেএসআরএমের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা আট লাখ মেট্রিক টন। একই অবস্থা বায়োজিদ স্টিল, সীমা অটোমেটিক রি-রোলিং মিলস লিমিটেড, সীমা স্টিল, গোল্ডেন ইস্পাত লিমিটেড, এইচএম স্টিল, শীতলপুর স্টিল, রহিম স্টিল, চকলাদার স্টিল, আম্বিয়া স্টিল, শাহরিয়ার স্টিল, ইসলাম স্টিলসহ আরও বেশ কয়েকটি ইস্পাত কোম্পানির।

এ খাতের বিনিয়োগকারীরা বলেন, ইস্পাতশিল্পে মূলত দুই ধরনের পণ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ফ্ল্যাট স্টিল (সিআই শিট ও সিআর কয়েল) এবং লং স্টিল (এমএস রড/টিএমটি বার)। এ খাতে সক্রিয় আড়াইশ’রও বেশি প্রতিষ্ঠান। এসব মিলের সম্মিলিত ইস্পাত পণ্য উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৮০ লাখ টন। এর বিপরীতে বছরে চাহিদা ৫০ লাখ টনের মতো। যদিও বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় চাহিদা ৩০ লাখের কম। তবে মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি মেটায় শীর্ষ পাঁচ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অন্যতম প্রতিষ্ঠান হলো আবুল খায়ের স্টিল, বিএসআরএম, জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড এবং কেএসআরএম।

এর মধ্যে আবুল খায়ের স্টিল রি-রোলিং মিলস একক কোম্পানি হিসেবে ইস্পাত খাতের শীর্ষে রয়েছে। লং স্টিলে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ১৪ লাখ টন। এছাড়া বিএসআরএম গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত বার্ষিক উৎপাদন ১৪ লাখ টন। আর জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ১০ লাখ মেট্রিক টন, কবির স্টিল রি-রোলিং মিলের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা আট লাখ মেট্রিক টন, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম) লিমিটেডের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা এক লাখ ৮৭ হাজার টন।

খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে দেশের ইস্পাতের বাজার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ চাহিদার নেপথ্যে রয়েছে সরকারের উন্নয়নযজ্ঞ।

এদিকে বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৮০ লাখ মেট্রিক টন হলেও এখন পর্যন্ত চাহিদা প্রায় অর্ধেক। তবে আগামীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ট্রানেল, ছোট-বড় সেতু, শিল্প স্থাপনাসহ অনেক প্রকল্পের কাজে গতি আসবে। এছাড়া আবাসন খাত চাঙ্গা এবং ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলোয় রপ্তানি বাড়লে ২০৩০ সালে ইস্পাতের চাহিদা দাঁড়াবে এক কোটি ৮০ লাখ টনে। এতে ইস্পাতশিল্পের প্রবৃদ্ধি বর্তমান ৫-৭ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত হওয়ার সুযোগ আছে। এসব সম্ভাবনা মাথায় রেখে বছর দুয়েক আগে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বড় ধরনের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে কাজ শুরু করে জিপিএইচ ইস্পাত। এছাড়া বিএসআরএম, বসুন্ধরা স্টিল, ম্যাকডোনাল্ড স্টিল, আনোয়ার ইস্পাতসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করছে।

কর্মকর্তারা জানান, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল নির্মাণ, ফ্লাইওভার, সেতু, চার লেনের মহাসড়ক, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সমুদ্র বন্দর অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণসহ অনেকগুলো অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাড়ছে। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে নির্মাণ হচ্ছে শিল্প-কারখানা, আবাসন প্রকল্প। ফলে প্রতিনিয়ত ইস্পাতের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াচ্ছেন কোম্পানিগুলো। অনেক কোম্পানি আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগ করছে।

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্তির বিষয়ে সীমা অটোমেটিক রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলে, দেশের ইস্পাত খাতের সম্ভাবনা অনেক। আমাদের মাথাপিছু ইস্পাতের ব্যবহার কম। এ ব্যবহার আরও বাড়বে। এছাড়া ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যসহ চীন, কোরিয়া, আফ্রিকার বহু দেশে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। এমন সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমরা পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তালিকাভুক্ত হলে করছাড়সহ বহুমাত্রিক সুবিধা পাওয়া যাবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০