ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে অনলাইন শপিং ই-অরেঞ্জে অভিযান পরিচালনা করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা)। ফাঁকি উদ্ঘাটিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল এ মামলা করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, রাজধানীর গুলশানে ই-অরেঞ্জ অনলাইন শপিং প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ১৩ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় গতকাল প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা: হাউজ-৫/এ, লেভেল-৩ ও ৪, রোড-১৩৬/১৩৭, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২। এর মূসক নিবন্ধন নং-০০৩৬২৮০২৭-০১০১।

অভিযানে দেখা গেছে, ই-অরেঞ্জ, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নানা পণ্য বিক্রি করে। কিন্তু তাদের প্রাপ্ত কমিশনের ওপর আরোপনীয় ভ্যাট যথাযথভাবে জমা দেয় না। প্রতিষ্ঠানটি বিপুল পরিমাণ সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে গত ৮ জুন ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সোনিয়া মেহজাবিন সহযোগিতা করেন এবং তিনি প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাটসংশ্লিষ্ট দলিলাদি উপস্থাপন করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি করে হিসাব বিবরণী জব্দ করা হয়।

এতে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে মোট ২৪৫ কোটি ৭৫ লাখ ৫৩ হাজার ২১৫ টাকার সেবা/পণ্য ক্রয় করে এবং ২৪৯ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭১০ টাকার সেবা/পণ্য বিক্রি করে। এ সেবা/পণ্য বিক্রির ওপর ই-অরেঞ্জ তিন কোটি ৮৭ লাখ ৯৮ হাজার ৪৯৫ টাকা কমিশন লাভ করে। প্রাপ্ত কমিশনের ওপর পাঁচ শতাংশ হারে প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯২৪ টাকা প্রযোজ্য হলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ মাত্র ছয় লাখ ২৩ হাজার ৭৬৭ টাকা পরিশোধ করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনলাইন শপিং প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে। এতে সরকারের ১৩ লাখ ১৬ হাজার ১৫৮ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। বিক্রয় তথ্য গোপন করা এবং ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে জড়িত হওয়ার মাধ্যমে ই-অরেঞ্জ ভ্যাট আইন লঙ্ঘন করেছে। অভিযানের সূত্র ধরে গতকাল ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছে। অভিযানে প্রাপ্ত ই-অরেঞ্জ কর্তৃক পরিহারকৃত ভ্যাট আদায় ও অন্যান্য আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম নেয়ার জন্য মামলার প্রতিবেদন এখতিয়ারাধীন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা উত্তরে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম আরও নজরদারি ও তদন্ত করার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান ড. মইনুল খান।

সূত্রমতে, বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানার বোন ও ভগ্নিপতি চালাতেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ। অভিযোগ উঠেছে, গ্রাহকের এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এই অভিযোগে সোহেল রানার বোন ও ভগ্নিপতিসহ পাঁচজনকে প্রতিষ্ঠানটির মালিক উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় প্রতারণার মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী।

পুলিশও বলেছে, ই-অরেঞ্জের মূল মালিক পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানার বোন সোনিয়া মেহজাবিন, ভগ্নিপতি মাসুকুর রহমান ও আমানউল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। মামলার পর এ তিনজনই এখন কারাগারে আছেন। এজাহারভুক্ত আসামি বীথি আক্তারসহ দুজন পলাতক।

মামলার বাদী বলছেন, বীথি আক্তার সোহেল রানার স্ত্রী বলে তিনি শুনেছেন। যদিও সোহেল রানা তা অস্বীকার করেছেন। আর পুলিশ বলছে, বীথি আক্তারকে নিয়ে যে বক্তব্য এসেছে, তা তদন্ত করে নিশ্চিত হবে তারা। এক লাখ গ্রাহকের ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার গুলশান থানায় প্রতারণার মামলা করা হয়। মামলায় ভুক্তভোগী ২৯ গ্রাহকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে তাহেরুল ইসলাম বাদী হয়েছেন। ই-অরেঞ্জ মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোনসহ নানা পণ্য অনলাইনে বিক্রি করত। মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ২৮ এপ্রিল থেকে নানা সময় নানা ধরনের পণ্য কেনার জন্য টাকা দেন গ্রাহকেরা। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পর ই-অরেঞ্জ কোম্পানির পণ্য সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি পণ্যও দিচ্ছে না, টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০