নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ শপের বিরুদ্ধে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। মামলায় ই-অরেঞ্জের পাঁচ কর্মকর্তাসহ সব মালিককে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার রাতে ই-অরেঞ্জের সাবেক ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা ভুক্তভোগীদের আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মামলা করার কথা বলেছিলেন।
গতকাল বিকালে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান।
তিনি বলেন, মো. তাহেরুল ইসলাম নামে এক ভুক্তভোগী বাদী হয়ে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন (মামলা নম্বর-১৪)। মামলায় তিনি ই-অরেঞ্জের পাঁচ কর্মকর্তাসহ সব মালিককে আসামি করেছেন।
আসামিরা হলেনÑসোনিয়া মেহাজাবিন, মাসুকুর রহমান, আমানুল্লাহ, বীথি আক্তার, কাওসার ও ই-অরেঞ্জের সব মালিক। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে কতজন মালিক রয়েছেন, তা উল্লেখ করা হয়নি মামলায়। মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ২৮ এপ্রিল থেকে নানা সময় নানা ধরনের পণ্য কেনার জন্য টাকা দেয়া হয়, যা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পর ই-অরেঞ্জ কোম্পানির ডেলিভারি দেয়ার কথা ছিল। এ শর্তেও বারবার নোটিসের নামে ভুক্তভোগীদের পণ্য ডেলিভারি না করে প্রতারণা করে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা ই-অরেঞ্জের অফিসে গিয়ে ডেলিভারি দেয়ার কথা বললে অফিসে কর্মরত কর্মকর্তারা ও মালিকপক্ষ জানান, কয়েক দিনের মধ্যে পণ্যগুলো ডেলিভারি হবে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো পণ্য ডেলিভারি না করে এক লাখ ভুক্তভোগীদের প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাৎ করেছে।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, কভিডকালে ভুক্তভোগীদের কষ্টার্জিত অর্থের নিশ্চয়তা না দিয়ে ই-অরেঞ্জ তাদের মালিকানা পরিবর্তনের নামে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে। নতুন মালিক ও পুরোনো মালিকের কোনো তথ্য ভুক্তভোগীদের সামনে প্রকাশ করা হচ্ছে না।
এছাড়া আসামিরা সব ধরনের অফিশিয়াল কার্যক্রম বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছে বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়। এর আগে গতকাল সোমবার রাতে ই-অরেঞ্জ শপের গ্রাহকরা রাজধানীর মিরপুরে মাশরাফি বিন মর্তুজার বাসার সামনে বিক্ষোভ করলে মাশরাফি বলেন, ‘ই-অরেঞ্জের সঙ্গে আমার ছয় মাসের চুক্তি ছিল। সেটা শেষ হয়েছে। আমি এখন এটির সঙ্গে নেই। তবুও একজন গ্রাহক বলছে, তাদের পাশে আমাকে থাকতে হবে। আইনগত জায়গায় খুব বেশি কিছু করার নেই। তবুও সাধারণ মানুষের কারণে কথা বলেছি। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, তাদের পাশে দাঁড়াব।’
ই-অরেঞ্জ শপের বিরুদ্ধে কোটি টাকার অর্ডার নিয়ে পণ্য ডেলিভারি না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর সেই টাকা ও পণ্যের দাবিতে মাশরাফি বিন মর্তুজার বাসার সামনে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীরা। এই ক্রিকেটার বলেন, ‘আমানউল্লাহ যিনি এটার সিইও, তার সঙ্গে ভুক্তভোগীদের সামনে লাউড স্পিকারে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, তাদের মালিকানা চেঞ্জ হয়েছে, তাই তারা সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারেননি। ১৯ তারিখ থেকে তারা পর্যায়ক্রমে ডেলিভারি দেয়া শুরু করবেন। তবে আমি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত আছি।’
এদিকে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমানের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালতে তারা আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।