Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:36 am

ই-কমার্সে অস্থিরতায় লেনদেন কমেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে

শেখ আবু তালেব: অর্থ নিয়ে পণ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে না ই-কমার্স খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান। কয়েকটির কার্যক্রম বন্ধের দ্বারপ্রান্তে। প্রতারণার মামলা ঝুলছে ইভ্যালিসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন ও দেশি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ২৩টি ই-কমার্সের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে একরকম অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ই-কমার্স খাত। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের মোবাইল ব্যাংকিং তথা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে (এমএএফএস)।

কয়েক মাস ধরেই কমে আসছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন। গত চার মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ। পরিমাণে তা ৯ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ গত আগস্টে কমেছে প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ। যদিও এই সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট ও গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন ও খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য।

মোবাইল ব্যাংকিং বা লেনদেনের তথ্য নিয়ে তৈরি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে মূলত ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পরিশোধ, ব্যবসায়িক বা মার্চেন্ট লেনদেন, সরকারি থেকে ব্যক্তিপর্যায়ে লেনদেন, বেতন পরিশোধ, মোবাইলের রিচার্জ ও ইউটিলিটির বিল পরিশোধ-সংক্রান্ত লেনদেন তথ্য তুলে ধরা হয়। এই আট খাতের তথ্যের মধ্যে তিনটি ছাড়া সবগুলোতেই লেনদেন কমেছে।

জানা গেছে, গত মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন হয়েছিল ৭১ হাজার ২৪৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। দৈনিক গড় লেনদেন ছিল দুই হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এর পরের মাস জুনে লেনদেন হয় ৬২ হাজার ৯৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। জুলাই মাসে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৬ হাজার ৩৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

জুলাই মাসে লেনদেন কিছুটা বৃদ্ধির বিষয়ে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসময় পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়টিতে লেনদেন একটু বেশি হয়। বিষয়টিতে ঐকমত্য পোষণ করে এমএফস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘সাধারণত ঈদ ও বৈশাখী উৎসবসহ যেকোনো জাতীয় আকারের উৎসবের মাসগুলোয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশি হয়। স্বজনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে লেনদেন বেশি করে মানুষ। এজন্য এ মাসগুলোয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় বেশি হয়।’

জুলাই মাসে লেনদেন সামান্য বাড়লেও ফের আগস্টে এসে কমে যায়। গত আগস্টে হওয়া লেনদেন গত জুন মাসের চেয়ে আরও কম। যদিও এই সময়ে ক্যাশ ইন বেশি হয়েছে, কিন্তু ক্যাশ আউট কমেছে। অর্থাৎ গত জুলাইয়ের তুলনায় মোবাইলে ক্যাশ ইন বেশি হলেও অর্থ বের হয়েছে কম।

তথ্য বলছে, গত আগস্ট মাসে লেনদেন হয়েছে ৬২ হাজার ২৩০। জুলাই মাসের তুলনায় গত আগস্টে লেনদেন কমেছে চার হাজার ১৫৭ কোটি টাকা বা প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ। গত আগস্টে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল দুই হাজার সাত কোটি টাকা। এর আগে অর্থাৎ জুলাই মাসে লেনদেন হয় ৬৬ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। দৈনিক গড় লেনদেন ছিল দুই হাজার ১৪১ কোটি টাকা।

এ হিসাবে শুধু এক মাসের ব্যবধানে সারা দেশে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ১৩৪ কোটি টাকা। আর চার মাসের ব্যবধানে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ২৯১ কোটি টাকা। লেনদেন কমলেও লেনদেন সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসময় ছোট পরিমাণের লেনদেন বেশি হয়েছে। আবার গ্রাহক ও এজেন্ট সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এসময়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুলাই মাসে সারা দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১০ কোটি ২৭ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮। গত আগস্টে এসে দাঁড়ায় ১০ কোটি ৪৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪০৮। এক মাসের ব্যবধানে গ্রাহক বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৮৬০। গত জুলাই মাসে সারা দেশে এজেন্ট সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৪২ হাজার ৩৯৫টি। গত আগস্ট মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৬২ হাজার ২৮৬টি। এক মাসের ব্যবধানে এজেন্ট সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯ হাজার ৮৯১টি।

জানা গেছে, প্রায় সাড়ে ১০ কোটির ঘরে গ্রাহক পৌঁছালেও সক্রিয় সংখ্যা পাঁচ কোটি। মূলত মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন বিল পরিশোধ, শিক্ষার্থীদের বেতন, বিভিন্ন কেনাকাটা, সরকারি ভাতা, বিমার প্রিমিয়াম পরিশোধ, মোবাইলের রিচার্জ এমনকি ক্রেডিট কার্ড ও সঞ্চয়ী আমানতের অর্থ পরিশোধ করা যাচ্ছে এর মাধ্যমে। এতেই দিন দিন বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক। আবার মোবাইল ব্যংকিংয়ে টাকা জমা করতে এখন আর এজেন্টদের কাছেও যেতে হচ্ছে না। ব্যাংকের অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা থেকে সহজেই টাকা আনা যাচ্ছে এসব হিসাবে।

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পথ চলা শুরু হয় ২০১১ সালের মার্চে। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের হাত ধরে সেবাটি শুরু হলেও একে একে যুক্ত হয় বিকাশ, এম ক্যাশ, মাই ক্যাশ, উপায়, শিওর ক্যাশ ও ডাক বিভাগের নগদ। অবশ্য এখনও মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই রয়েছে একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে।