Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 2:23 am

ই-কমার্সে লেনদেন বাড়লেও কমছে মেম্বারশিপ

হামিদুর রহমান: দেশে বিপুল হারে বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। একই সঙ্গে দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে ডিজিটাল বা অনলাইন মার্কেট ই-কমার্স। গেল বছরে ই-কমার্সে লেনদেন হয়েছে প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তবে ই-কমার্সে লেনদেন বৃদ্ধি পেলেও নীতিমালা না থাকায় কমছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সদস্য সংখ্যা।

অনলাইন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে অনলাইন মার্কেট ই-কমার্সে লেনদেন হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০১৭ সালে লেনদেন হয়েছে প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা। যেটি গত বছরের তুলনায় লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। এদিকে এক বছরে ই-ক্যাবে নতুন সদস্য হয়েছে প্রায় ১৮০ জন। অথচ ২০১৬ সালে সংগঠনটির সদস্য হয়েছিল ২২৮ জন। যেটি ২০১৬ সালের তুলনায় নতুন সদস্য সংখ্যা না বেড়ে বরং প্রায় ৪৮ জন কমেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশ হিসেবে অনলাইন মার্কেটিং বা ই-কমার্স দ্রুত প্রসারিত হলেও এটি পরিচালনায় আট বছরেও কোনো নীতিমালা প্রতিষ্ঠা হয়নি। আর নীতিমালা না থাকায় অনেক ব্যবসায়ী ই-কমার্স ধারণা ছাড়া নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবসা পরিচালনা করাই গ্রাহকরা বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। অন্যান্য দেশে ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনার জন্য নীতিমাল প্রণয়ন হলেও বাংলাদেশে তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেশে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ আলোর মুখ দেখতে হলে নীতিমালার বিকল্প নেই।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা যাত্রা শুরু করে ২০০০ সালে।

ই-কমার্সের অর্থ লেনদেনকে বাংলাদেশ বৈধ ঘোষণা করে ২০০৯ সালে। এ খাতে ঐক্যভাবে কাজ করতে ও এগিয়ে নিতে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সংগঠন তৈরি করে ২০১৪ সালে যদিও এটি সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায় ২০১৫ সালেও ৮ জুলাই।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি রাজীব আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দিন দিন ই-কমার্সের আওতা বাড়ছে। মানুষের প্রয়োজনীয় সবকিছু এখন অনলাইনে পাওয়া যায়। ই-কমার্সের অনেকগুলো বিষয় সম্পৃক্ত থাকায় নীতিমালাগুলো প্রণয়নে অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের থেকে সবকিছু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই একটি নীতিমালা পাব বলে আশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘গেল বছরে বাংলাদেশে ই-কমার্সে প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা লেদদেন হয়েছে। ২০১৮ সালে এটি তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ই-কমার্সে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমতি রয়েছে। তবে নীতিমালাটি প্রণয়ন হয়ে গেলে ই-কমার্সে ছাড়া বাড়বে। অ্যাসোসিয়েশনে বর্তমানে প্রায় ৭২০ জন মেম্বার রয়েছে। গত বছর নির্বাচনের জন্য নতুন সদস্যপদ প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকায় নতুন মেম্বার কম হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে কথা হলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার শেয়ার বিজকে বলেন, মাত্র দায়িত্ব পেয়েছি, আশা করছি এক বছরে অনেক কিছু করে দেখাতে পারব। দেশে প্রযুক্তি খাতে ই-কমার্সের পরিধি বাড়াতে যা যা প্রয়োজন সবকিছু করা হবে। দেশের অনেক তরুণ-মেধাবী ই-কমার্সে জড়িত তাদের কর্মসংস্থান হচ্ছে। শুরু তরুণরাই নয়, ই-কমার্সের সঙ্গে প্রায় সব শ্রেণির মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য ২০০৯ থেকে যে প্রচেষ্টার তার ৯ বছর অতিক্রম করেছি। টেকনিক্যালি অনেক কাজে আমরা এগিয়ে, বাস্তবায়নেও কোনো ঘাটতি হবে না। ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির প্রধান শর্ত ভোক্তার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা। এর জন্য প্রয়োজন একটা সঠিক যুগোপযোগী নীতিমালা এবং সব ই-কমার্স ব্যবসায়কে এ নীতিমালা অনুসরণে বাধ্য করা।’

বিশ্বব্যাপী ই-কমার্সের একটা বড় অংশ পর্যটন ক্ষেত্র। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে। হোটেল, ফ্লাইট, ট্যুর-প্যাকেজ ইত্যাদি বুকিংয়ে ই-কমার্সের ব্যবহার শুরু করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও ই-কমার্সের একটা বড় ভূমিকা থাকতে পারে। বিটুবি বা বিজনেস-টু-বিজনেস ব্যবসায়ে ই-কমার্সের ব্যবহার এ শিল্পের এক নতুন দিগন্ত উম্মোচন করতে পারে। এছাড়া প্রতিনিয়ত ই-কমার্সের নতুন নতুন প্রয়োগক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে।