ই-কমার্স ব্যবসা কী এটি এখন কমবেশি সবাই জানেন। ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক বিশেষ করে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে পণ্য কেনাবেচা, অর্থ লেনদেন ও ডেটা আদান-প্রদানই হচ্ছে ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য। সাধারণত ই-কমার্স সুসম্পন্ন হয় এক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও আরেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের (বিটুবি), ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ভোক্তার (বিটুসি) মধ্যে এবং ভোক্তা ও ভোক্তার (সিটুসি) মধ্যে। এক কথায় প্রায় স্বয়ংক্রিয় আদান-প্রদানের এই বিপণন প্রক্রিয়ার নাম হচ্ছে ই-কমার্স।
সন্দেহ নেই, আমাদের দেশে ই-কমার্স আলোচিত হয়েছে যতটা না ব্যবসার জন্য তার চেয়ে বেশি প্রতারণার জন্য। তবুও ই-কমার্স পরিত্যাগ করার সুযোগ নেই। এখানে আছে শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ, হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। দেশে ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তির সুবিধা ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় ই-কমার্স সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সারাদেশে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) রয়েছে। তাই বলা যায়, ই-কমার্সের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। দুই-চারজন অসাধু উদ্যোক্তার জন্য ই-কমার্স কিছুটা কলঙ্কিত হলেও এটি সগৌরবে টিকে থাকবে। তবে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে গ্রাহকস্বার্থ সুরক্ষায় ই-কমার্সকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
গতকাল শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদন ছিল ‘ই-কমার্সে অস্থিরতায় লেনদেন কমেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে’। এতে বলা হয়, অর্থ নিয়ে পণ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে না ই-কমার্স খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান। কয়েকটির কার্যক্রম বন্ধের দ্বারপ্রান্তে। প্রতারণার মামলা ঝুলছে ইভ্যালিসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন ও দেশি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ২৩টি ই-কমার্সের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে একরকম অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ই-কমার্স খাত। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের মোবাইল ব্যাংকিং তথা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস)।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি না থাকায় ই-কমার্সে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। এখন এমএফএস খাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ই-কমার্স ব্যবস্থাপনা ‘সুন্দর ও সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য নির্দেশিকা জারি করেই দায়িত্ব পালন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নির্দেশিকা পরিপালিত হচ্ছে কি না, তা তদারকি করা হচ্ছে না বলেই প্রতীয়মান।’
নির্দেশনার লক্ষ্যে বলা হয়, ডিজিটাল ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণের মাধ্যমে ‘জাতীয় ই-কমার্স নীতিমালা (সংশোধিত) ২০২০-এর সফল বাস্তবায়নের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা। নির্দেশিকা জারি করলেই স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তদারকি না থাকলে ব্যবসায় প্রতারণা ও জালিয়াতি এসসঙ্গে চলবে। গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, মতলববাজ উদ্যোক্তারা আত্মগোপনে চলে যাবে, এমএফএসসহ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। ই-কমার্স তথা অনলাইন ব্যবসায় লেনদেনে এমএফএস অপরিহার্য। কিন্তু গ্রাহক আস্থা না থাকলে ব্যবসায় ধস নামবেই। ই-কমার্সে ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতা পণ্য না পেলে কিংবা অর্থ ফেরত না পেলে মানুষ কেন এতে পণ্য কিনবে। ক্রেতাসাধারণ যাতে কোনোভাবে প্রতারিত না হয়, সে লক্ষ্যে পণ্য ও সেবা কেনাবেচার জন্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবা সংশ্লিষ্ট সব বিবরণ ও শর্ত সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। কোনো অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। শৃঙ্খলা আনয়ন করা গেলে ই-কমার্স হয়ে উঠবে প্রবৃদ্ধির অন্যতম উৎস।