ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যেন নতুন কৌশলে প্রতারণা করতে না পারে

আবদুল মকিম চৌধুরী: প্রতারিত হতে না চাইলে প্রতারণার ধরন সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি। ১৭ ডিসেম্বর ২০০৭ কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে প্রায় ২০০ চাকরিপ্রার্থীকে সাক্ষাৎকারে ডেকে জনপ্রতি এক লাখ টাকা দাবি করেছে ‘বাংলাসংবাদ’ নামের এক প্রতিষ্ঠান। জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এবং এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খোন্দকার ও মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। প্রতারণার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর গণমাধ্যমকর্মীদের কবীর চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আগে থেকে জড়িত। তারা যে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, সে সম্পর্কে আমি জানতাম না। লোকজন ডেকে তাদের কাছে টাকা দাবির বিষয়টি দুঃখজনক। এ জন্য আমি লজ্জিত এবং দুঃখিত। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভবিষ্যতে আর কোনো সম্পর্ক রাখব না। একই ধরনের কথা বলেছেন কে এম সফিউল্লাহও। ওই বছরের ২৯ জুলাই প্রথম আলোর ১৩ পৃষ্ঠায় লোভনীয় ধরনের সংবাদকর্মী চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। আবেদন পাঠানোর জন্য প্রথম আলোর বক্স নম্বর (৪৪৮) ব্যবহার করা হয়েছিল। ওই ঠিকানায় আবেদনপত্র পাঠান, তাদের নামে সাক্ষাৎকার প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে ৬ ডিসেম্বর চিঠি পাঠানো হয়। সাক্ষাৎকার ১৭ ডিসেম্বর পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে উপরিউক্ত তিন বিশিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষর ছিল। সাক্ষাৎকার দিতে এসে চাকরিপ্রার্থীরা দেখলেন সাক্ষাৎকার নয়, মতবিনিময় সভা। তাতে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক সৈকত চৌধুরী বলেন, দক্ষ সাংবাদিক তৈরির জন্য ‘বাংলাসংবাদ’ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করবে। এর জন্য ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে ফি দিতে হবে। টাকা জমা দেয়ার জন্য একটি চিরকুট ধরিয়ে দেয়া হয়, তাতে এসআইবিএল গুলশান শাখার একটি চলতি হিসাব নম্বর দেয়া হয়। চিরকুটে একটি মোবাইল ফোন নম্বরও ছিল। ওই নম্বরে ফোন করে জানা যায় নম্বরটি সৈকত চৌধুরীর। চাকরি প্রার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে সৈকত চৌধুরী দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। চাকরিপ্রার্থীদের এক কথা, ‘প্রশিক্ষণ ও ফি-র কথা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকলে আমরা আসতাম না। তিনজন খ্যাতনামা ব্যক্তির নাম দেখেই সাক্ষাৎকার দিতে এসেছেন তারা। এভাবে প্রতারিত হবেন, ভাবেননি কেউ।

পরে ফোনে যোগাযোগ করা হলে সৈকত চৌধুরী বলেন, পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। সুতরাং এ কাজের জন্য আমি এককভাবে দায়ী নই। আর বিষয়টিকে প্রতারণার শামিল বলেও মনে করি না। কারণ আমরা সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছি।

আমরা জানলাম, ক্ষমা চাইলে প্রতারণার অভিযোগ আনা যাবে না। বিশিষ্টজনরাও ব্যবহার হয়ে থাকেন। প্রতারিত হতে পারেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণা জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো। ইভ্যালির খারাপ ব্যবসার বিষয়টি এক বছর আগেই তদন্তে উঠে এসেছিল, কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ১৫ অক্টোবর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, তারা এক-দেড় বছর আগেই বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড নিয়ে সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন যে কিছু ভুল হচ্ছে, বড় ধরনের সমস্যা হবে। কিন্তু ওইসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের হাতে যথেষ্ট টাকা ছিল, যা দিয়ে তারা অনেকের ওপর প্রভাব খাটাতে পারে।

তিনি বলেন, এক বছর আগে অভ্যন্তরীণ তদন্তের মাধ্যমে জানা যায় যে ইভ্যালি খারাপ ব্যবসা করছে। তখন আমরা ছয়টা সংস্থাকে চিঠি দিই। এর মধ্যে যদি একটা সংস্থাও কাজ করত, তাহলে এ ঘটনা ঘটত না। স্ববিরোধী কথা হয়ে যায়। একটা সংস্থাকে যদি সক্রিয় করতে পারেন, ই-কমার্সের কিছু হবে না। শুধু ভোক্তা-অধিকারকে সক্রিয় করেন, তাহলেই আর কোনো সমস্যা হবে না।’ তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষ বানালেই হবে না, তাদের কাজ করতে হবে।

৮ অক্টোবর রংপুরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ই-কমার্সে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দায়ভার সরকার নেবে না। দেশে অন্তত ২০ হাজার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত। গ্রাহকরা কম মূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা কমে পণ্য কিনতে তো সরকারকে জানাননি। তাদের ক্ষতির দায় সরকার নেবে কেন? খুব সহজসাপটা কথা! কিন্তু ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক যে কথা বলেছেন, সেটি আমরেল নিলে দায় এড়াতে পারেন না বাণিজ্যমন্ত্রী ও সরকার। ছয়টা সংস্থাকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কেন একটি সংস্থাও কাজ করেনি?

এনবিআরের চেয়ারম্যান থেকে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বদলির পর পদত্যাগ করেন বদিউর রহমান। ২২ অক্টোবর ২০০৭ সংবাদ সম্মেলনে খোলামেলা কিছু কথা বলেন। সরকারের সঙ্গে নীতিগত কারণেই তাকে সরে যেতে হয়, এমন কথাও প্রচলিত। তার দাবি, মিডিয়াতে বেশি কথা বলা তার বদলির কারণ। তিনি বলেছেন, আমি কোদালকে কোদাল বলে ফেলি।

সেই বদিউর রহমানও প্রতারকের কবলে পড়েছেন কয়েকবার। ‘রাসেলের’ কবলেও পড়েছেন একবার। ২০০৮ সালের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষের (সম্মান) ছাত্র রাসেল তার বাসার টিঅ্যান্ডটি ফোনে ফোন করেন। তার বাড়ি ফেনীর দাগনভুঁঞা উপজেলায়। উপজেলার একটি গ্রামের নামও বলল। বদিউর রহমান সাহেবের বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ সবগুলোর বর্ণনাও দিল। তার ছাত্রজীবন, চাকরিজীবনেরও গুরত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিল। কেন ফোন করেছে, জানাতে চাইলে রাসেল জানাল, সে ফেনী জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সভাপতি। তারা ১২ মে সমিতির অভিষেক ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। তাতে ফেনীর গুণীজনদেরও আমন্ত্রণ করবে। তারা সংগঠনের তহবিল থেকে ৩০ জন মেধাবী ছাত্রকে বৃত্তি দেবে। বৃত্তিপ্রপ্তারা এককালীন ৫ হাজার টাকা করে পাবে। বদিউর রহমানকে প্রধান অতিথি করতে চায়। তার অনুমতি চায়। তিনি রাজি হননি। বললেন, অন্য কাউকে করো। তবে এমন মহতী অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকবেন। পরে আরও দু-একদিন ফোন করে বলল, তার অসম্মতির পর তারা সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরীকে প্রধান অতিথি করেছে এবং বদিউর রহমানকে আমন্ত্রণ পত্র পৌঁছে দিতে তার বাসায় আসতে চায়। তিনি বললেন, বাসার গেটে দিয়ে এলেও চলবে। কিন্তু রাসেল বুঝল, তার তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে চলেছে! সে আশা না হারিয়ে অতি বিনয়ের সঙ্গে বলল, আপনার পক্ষে একটা ছাত্রের বৃত্তি পাঁচ হাজার টাকা দেয়া সম্ভব হবে কি না। সম্ভব হলে অনুষ্ঠানের দিন দিলেও চলবে অথবা আগে দিতে চাইলে সে বাসায় এসে নিয়ে যাবে। বদিউর রহমান সাহেবের ভাষায়. “… সে এত ভদ্রভাবে বলল, ৩০ জনের মধ্যে ২-৩ জনের বৃত্তি টাকা জোগাড় করতে না পারলে তারা ৩০ জন থেকে সংখ্যা কমিয়ে দেবে। অদম্য এও বলল, এতে কোনো জোরাজুরি নেই। পারলে দেবেন, না পারলে অন্তত অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের যেন উৎসাহিত করা হয়।’ এরপর আরেকদিন টেলিফোন করে বলল, সাবেক রাষ্ট্রদূত রাশেদ আহমেদ চৌধুরী এবং বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদকেও বিশেষ অতিথি করা হয়েছে। বদিউর রহমানের কার্ডটি সে ১১ তারিখ নিজ হাতে বাসায় এসে দিতে চায়। এটি যে প্রতারণা হতে পারে এসব কথাবার্তায় ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি তিনি। ১১ তারিখ সে সকালে টেলিফোন করে বলল, কার্ড বাসায় দিয়ে গেছে। এবং তিনি যেন অনুষ্ঠানে যান। তিনি তখন একজন বৃত্তির টাকা দেয়ার কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেনী ছাত্র কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের একজন বদিউর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের আকুতি-মিনতিতে বললেন, পাঁচ হাজার টাকা বাসায় এসে নিয়ে যেতে পারে। সেদিনই মানবজমিনের সাপ্তাহিক প্রকাশনা ‘জনতার চোখ’ থেকে লেখক সম্মানী পাঁচ হাজার টাকা পেলেন তিনি। তার স্ত্রী কে বললেন, ‘আল্লাহর রহমত দেখো, আজ এক ছেলের বৃত্তির জন্য পাঁচ হাজার টাকা দেব বলেছি। আর মতিউর রহমান চৌধুরী সাহেবও ঠিক পাঁচ হাজার টাকাই দিলেন। এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! রাসেল টেলিফোন করে তার বাসায় এলো। বেশ বিনয়ী, ভদ্র ছেলে, কালো মাঝারি উচ্চতার। কথাবার্তায় খুব অমায়িক। নিজেই বলল, অনুষ্ঠানের সময় একটি রসিদও দিয়ে দেবে। খাম খুলে কার্ডে বিশেষ অতিথি হিসেবে ‘নিজের নাম দেখে’ বদিউর রহমান রাগ করলেন। বললেন, বিনা অনুমতিতে নাম ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। রাসেল বলল, ছাত্র কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) আক্তার হোসেন সাহেবের নির্দেশনা পেয়ে এটি করা হয়েছে।

সত্যতা যাছাইয়ে আইনে সম্মান পড়–য়া ছেলেকে কার্ড দেখিয়ে নিশ্চিত হতে চাইলেন কার্ডটি ভুয়া কি না। (হয়তো ভাবছিলেন ভুয়াও হতে পারে)। অনুষ্ঠানের স্থান, অতিথিদের নাম সব বিবেচনায় ‘ভুয়া’ হতে পারে না বলে মন্তব্য করল ছেলে। তবু সন্দিগ্ধ মন নিয়ে ১২ মে ২০০৮ সস্ত্রীক কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে গেলেন সময়মতো। গিয়ে দেখেন মূল মিলনায়তনে ছায়ানটের একটি অনুষ্ঠান চলছে। অন্য কোনো মিলনায়তনেও এ-জাতীয় কোনো অনুষ্ঠান নেই। বদিউর রহমান লক্ষ করলেন, আরও কয়েকজন ফেরত গেছেন। কেউ কার্ড হাতে ইতস্তত এদিক-সেদিক পায়চারি করছেন। মিলনায়তনের এক কর্মীকে সব খুলে বলায় সে বলল, মাঝে মধ্যে এ ধরনের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে এসে অনেকে ফেরত যান। এটি প্রতারক চক্রের কাজ। কম্পিউটারের এভাবে কার্ড করে টাকা আদায় করে।

এরপর কাছাকাছি সময়ে রাজধানীর ইডেন কলেজের প্রায় ১০০ জন ছাত্রী প্রতারণার ফাঁদে পড়ে তাদের মোবাইল ফোনসেট হারিয়েছেন। রাজধানীর চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে (বর্তমান নাম বঙ্গবন্ধু মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র) নববর্ষ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের কথা বলে রাসেল নামক এক প্রতারক তার এক তরুণী সহযোগীকে নিয়ে ইডেন কলেজের প্রায় ১০০ ছাত্রীকে প্রলুব্ধ করে। ওই তরুণী ইডেন কলেজের ছাত্রীনিবাসে গিয়ে ছাত্রীদের জানায়, সন্ধ্যায় পান্থপথের একটি রেস্তোরাঁয় ওই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিপর্ব অনুষ্ঠিত হবে। রিহার্সেল শেষে অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে একটি শাড়ি ও ৫০০ টাকা দেয়া হবে। ওদের কথামতো ৮ এপ্রিল ২০০৯ সন্ধ্যায় ১০০ ছাত্রী পান্থপথের ওই রেস্তোরাঁয় যান। এ সময় রাসেল তাদের জানায়, রেস্তোরাঁয় প্রবেশের আগে নিয়মানুযায়ী সবাইকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করা হবে এবং সবার ফোন তার কাছে জমা দিতে হবে। ছাত্রীরা প্রথমে ইতস্তত করলেও পরে মোবাইল জমা দিয়ে ভেতরে ঢোকেন। তারা ভেতরে প্রবেশের পরপরই মোবাইল ফোনসেটগুলো নিয়ে কেটে পড়ে রাসেল।

দু’জনই রাসেল। হয়তো একই ব্যক্তি। নতুবা কাকতালীয়। ইভ্যালির নতুন রাসেল তো এককাঠি সরেস। কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করে দেউলিয়া হতে চেয়েছেন। তারপর মওকামতো পগার পার!

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘দালাল প্লাস’-এর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান হাফিজুর রহমানের মন্তব্য জানার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। (ডেইলি স্টার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১)। ১৫ অক্টোবর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ মিলনায়তনে ই-কমার্স নিয়ে জ্বালাময়ী বক্তব্য রেখে বাহকা কুড়িয়েছেন তিনি।

প্রতারণা যেন আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে। যে যেভাবে পারছে, প্রতারণায় লিপ্ত হচ্ছে। আমরা জেনেছি, ‘রাজমিস্ত্রি’র ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ডিম বিক্রেতার ২২টি ব্যাংক হিসাবে ৯ মাসে লেনদেন হয়েছে প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা। ‘থ্রি হুইলার চালকের ব্যাংক হিসাব আছে ৯টি। তিন মাসে এসব ব্যাংক হিসাবে লেনদেন ২৩ লাখ টাকা (প্রথম আলো, ১১ অক্টোবর)’।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, চক্রের সদস্যরা শতাধিক ব্যক্তিকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গত ১০ এপ্রিল মেরি চন ইম্যান নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো হয়। মেরি চন ইম্যান নামের ফেসবুক আইডিধারী নিজেকে যুক্তরাজ্যের ব্যাংক কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। ওই সরকারি কর্মকর্তা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করার পর তাদের মধ্যে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ হয়। মেরি চন নামধারী ব্যক্তি নিজেকে ফিলিপাইনের নাগরিক ও তার আন্তর্জাতিক ব্যবসা আছে বলে জানান। বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার একপর্যায়ে মেরি চন ওই সরকারি কর্মকর্তাকে বলেন, বাংলাদেশে শহীদুল, সজীব, শরিফ নামে তার ব্যবসায়িক অংশীদার আছেন। একপর্যায়ে মেরি চন বলেন, যুক্তরাজ্যের নাগরিক ও লিবিয়াপ্রবাসী বেনজ্যাক ডেনিসের লন্ডনের একটি ব্যাংকে ২৪ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত আছে। কিন্তু তিনি ও তার স্ত্রী মারা গেছেন। তাদের উত্তরাধিকার না থাকায় ওই টাকা বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। তিনি (সরকারি কর্মকর্তা) রাজি থাকলে ওই টাকার অংশবিশেষ পেতে পারেন। সে জন্য তাকে বেনজ্যাকের ব্যবসায়িক অংশীদার হতে হবে। এ জন্য কিছু কাগজপত্র ও মেরি চনকে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯০০ টাকা পাঠাতে হবে। ‘লোভে পড়ে’ ওই সরকারি কর্মকর্তা ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংক হিসাবে ওই টাকা জমা দেন। পরে ওই সরকারি কর্মকর্তাকে বলা হয়, টাকা পেতে হলে আরও ৮ লাখ টাকা দিতে হবে। এতে ওই সরকারি কর্মকর্তার সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় গত ২৯ আগস্ট শহীদুল ইসলামসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় প্রতারণার মামলা করেন ওই সরকারি কর্মকর্তা।

প্রতারণার শিকার ওই সরকারি কর্মকর্তা বলেন, মেরি চন ইম্যান পরিচয় দেয়া ব্যক্তি তাকে বলেছিলেন, ২৪ কোটি টাকার ৪০ শতাংশ তিনি পাবেন। তিনি বলেন, ‘লোভে পড়েছি, ভুল করেছি।’

আর্থ ফাউন্ডেশনের কথা মনে আছে অনেকের। ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত হয়েছেন কয়েকজন সাবেক সচিব। পরে প্রতারণার অভিযোগ ওঠায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন তারা। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছেন সে কথা। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠান ‘আর্থ হোল্ডিংস’ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছে, ‘আর্থ ফাউন্ডেশনে’র সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

ধরা পড়ার পর প্রতারকদের সঙ্গে কেউ নেই। জন এফ কেনেডি বলেছেন, Victory has a thousand fathers, but defeat is an orphan. (সবাই বিজয়ের কৃতিত্বের দাবিদার; পরাজয় নেহাত একা, এতিম)। তাহলে প্রতারকরা কার প্রশ্রয় পায়? যা হওয়ার হয়ে গেছে। নতুন করে কোনো ‘ইভ্যালি’ যেন পড়ে না ওঠে। 

সাংবাদিক

amchy9@gmail.com

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০