পিআইডি নিবন্ধ

ই-পাসপোর্ট যুগে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ উন্নয়নের আরও একটি ধাপ অতিক্রম করল। ই-পাসপোর্ট সিস্টেম চালু হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করল এতে সন্দেহ নেই। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট চালু করেছে বাংলাদেশ, যা এই দেশকে আলাদা এক মর্যাদায় নিয়ে যাবে। বহুদিনের কাক্সিক্ষত স্বপ্ন ছিল আমাদের। অবশেষে বহু প্রতীক্ষার পর প্রধানমন্ত্রী ২২ জানুয়ারি ২০২০ ই-পাসপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা করেন। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশকে আধুনিক করার যে প্রত্যয় তিনি গ্রহণ করেছেন তা একধাপ এগিয়ে গেছে এই ই-পাসপোর্ট চালু করার মাধ্যমে। সারা বিশ্ব আজ আধুনিক হচ্ছে, তাহলে কেন পিছিয়ে থাকব আমরা? বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদেরও আধুনিক হতে হবে। আর ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নের এই একটি ধাপ পূরণ হয়েছে একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ইতোমধ্যে ই-পাসপোর্টের সুবিধা, নিয়মকানুন ও আবেদনের যাবতীয় প্রক্রিয়া প্রকাশ করেছে। বাড়তি ঝুট ঝামেলা ছাড়াই অনলাইনেই আবেদন করতে পারবেন আগ্রহীরা। ই-পাসপোর্ট আসলে কেমন হবেÑএই নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অবসান নেই! একটি জাতীয় পত্রিকা মারফত জানলাম; বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বা যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের মতো ই-পাসপোর্টের বইও একই রকমের থাকবে। তবে যন্ত্রে পাসপোর্টের বইয়ে? প্রথমে যে তথ্য সংবলিত দুটি পাতা থাকে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না। সেখানে বরং পালিমানের তৈরি একটি কার্ড ও অ্যান্টেনা থাকবে। সেই কার্ডের ভেতরে চিপ থাকবে, যেখানে পাসপোর্ট বাহকের সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ডেটাবেজে থাকবে পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ। ফলে যে কোনো দেশের কর্তৃপক্ষ সহজেই ভ্রমণকারীর সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারবেন। ডিজিটাল সিস্টেম ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেই এই ই-পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ই-পাসপোর্ট উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন ‘ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। এটি চালুর ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। এই ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে জাল পাসপোর্টের সমস্যা যেমন, অন্যদিকে প্রবাসীসহ বিদেশগামীদের হয়রানির শিকার হতে হবে না। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি মানুষের পাসপোর্ট রয়ে?ছে। ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আগের এমআরপি পাসপোর্ট বহনকারীদের ভিসা চেক করার জন্য এয়ারপোর্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হতো! ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে আপনি সহজেই ই-গেট পার করতে পারবেন। ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁডালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ে?র ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে তিনি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে? যেতে পারবেন। যদি আপনার পাসপোর্টে কোনো সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে গেটে অটোমেটিক লালবাতি জ্বলে উঠবে। আরেকটি বড় সুবিধা হলো ই-পাসপোর্টে ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে; সাধারণত পাসপোর্ট ভিসার মেয়াদ পাঁচ বছর ছিল। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে এই মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর করা হয়েছে, যা সত্যিই আনন্দের। আগের এমআরপি পাসপোর্ট আবেদন করার পর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে এই সমস্যার সমাধান হবে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের এই সাফল্য জনগণের জন্য উপহার। এই বছর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর শততম জš§বার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষ পালন করছে পুরো দেশ। মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হলো এই ই-পাসপোর্ট। উন্নত পাসপোর্ট একটি উন্নত রাষ্ট্রের পরিচয় বহন করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভিসা প্রদানে আগ্রহী কি না, তা অনেকটা আধুনিক পাসপোর্টের ওপর নির্ভর করে। যে দেশ যতটা উন্নত, সে দেশের পাসপোর্ট ততটা উন্নত। বাংলাদেশ সরকার পাসপোর্ট আধুনিকায়নের যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তা সাফল্যমণ্ডিত হোক। এই কামনা করছি।

হিমেল আহমেদ

বগুড়া

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০