ই-রিটার্ন অর্ধলাখ ছাড়িয়েছে করমেলায় মুহূর্তে করসেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আজিজুর রহমান। গত বছর ই-টিআইএন নিয়ে এবার রিটার্ন দিতে এসেছেন। রিটার্ন কীভাবে তৈরি করতে হয়, সম্পদ কীভাবে দেখাতে হবে কিছুই জানেন না। রিটার্ন দেবেন বলে সেগুনবাগিচা আত-ত্বরীক টাওয়ারের নিচতলায় কর অঞ্চল-৮ এসেছেন। কর কর্মকর্তাদের সহায়তায় অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের রিটার্ন তৈরি করে জমা দিলেন। বললেন, মাত্র কয়েক মিনিটেই রিটার্ন দাখিল করতে পেরে এবং সেবা পেয়ে আমি মুগ্ধ। রিটার্ন আর কর অফিসÑ দুটোর বিষয়ে যে ধারণা ছিল তা পাল্টে গেল। বললেন, বাইরে কর অফিসের হয়রানির অভিযোগকে প্রোপাগান্ডা বললেন তিনি।

শুধু আজিজুর রহমান নন, প্রতিটি কর অঞ্চলের মিনি করমেলায় সব করদাতা একই সেবা পাচ্ছেন। ১ থেকে ৩০ নভেম্বরকে করসেবা মাস ঘোষণা করেছে এনবিআর। সে হিসাবে জরিমানা ছাড়া পুরো নভেম্বর মাস রিটার্ন দাখিল করা যাবে। কর অঞ্চল-৮ এর বুথের সামনে ইকবাল হোসেন নামে একজন করদাতা শেয়ার বিজকে বলেন, সব সেবা এক জায়গায় পাচ্ছি। পরিবেশ চমৎকার। শেষ সময়ে ভিড় বাড়বে, সেজন্য আগেই জমা দিলাম। আর নতুন আইন অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের পরে জমা দিলে কর সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারব না। সেজন্য আগেই জমা দিয়ে দিলাম।

কর অঞ্চল-৮ এর একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের দুই জায়গায় বুথে এখন প্রতিদিন ৪৫০-৫০০ রিটার্ন পড়ছে। প্রতিদিন রিটার্ন বাড়ছে। কর্মকর্তারা সেবা মনিটরিং করেন। করদাতাদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার জন্য আমাদের টিম কাজ করছেন। বুথের পাশে মতামত বা অভিযোগ বাক্স রাখা হয়েছে। করদাতারা সেখানে সেবা নিয়ে তাদের অভিযোগ বা মতামত দিতে পারবেন।

এনবিআরের কর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাসের প্রথম দিকে ভিড় একটু কম থাকে। শেষ সময়ে ভিড় বাড়বে। শুধু কর অফিসের মিনি করমেলা নয়, অনলাইনেও রিটার্ন দাখিল বাড়তেছে। ই-টিআইএন ওয়েবসাইট ১৪ অক্টোবর খুলে দেয়া হয়। এরপর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রিটার্ন অর্ধলাখ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই রিটার্ন দাখিল বাড়তেছে। এবার ই-রিটার্নে সহজে এক পাতার রিটার্ন দাখিল করা যাচ্ছে। মূলত যাদের করযোগ্য আয় নেই, শূন্য রিটার্ন দাখিল করবেন। তারা অতি সহজেই ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন করে এক পাতার রিটার্ন দিতে পারছেন। সঙ্গে প্রাপ্তিস্বীকারের সঙ্গে সনদও পেয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া অন্য করদাতাদের জন্যও ই-রিটার্ন সহজ করা হয়েছে। যারা অনলাইনে রিটার্ন দিতে চান, তাদের দ্রুত রিটার্ন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে, পল্টনে কর অঞ্চল-১২ গিয়ে দেখা গেছে, কর অঞ্চলের কনফারেন্স রুমে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। করদাতারা সুশৃঙ্খলভাবে রিটার্ন দাখিল করছেন। ই-টিআইএন, ই-রিটার্ন, ই-পেমেন্ট এর জন্য আলাদা বুথ করা হয়েছে। কোনো করদাতা চাইলে সেবা নিতে পারছেন। আবদুল হক নামের একজন করদাতা শেয়ার বিজকে বলেন, প্রতি বছর রিটার্ন দেয়। আর প্রতি বছরই দেখছি নতুন সেবা যুক্ত হচ্ছে। সহজে রিটার্ন দাখিল করতে পারায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। কর অঞ্চল-১২ এর একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী সব সেবা যুক্ত করা হয়েছে। কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। যেকোনো করদাতাকে আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।

কর অঞ্চল-৬ গিয়ে দেখা গেছে, করদাতাদের দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। অর্থাৎ বুথে গিয়ে মুহূর্তের মধ্যে রিটার্ন দিয়ে চলে যেতে পারছেন। এবার ভবনের বেজমেন্টে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে সব ধরনের সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মকর্তারা মনিটরিং করছেন। এছাড়া কর অঞ্চল-৭ ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে কর অঞ্চলগুলো একইভাবে মিনি করমেলার আয়োজন করেছে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ অক্টোবর অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে ই-রিটার্ন সাইট খুলে দেয়া হয়। গতকাল পর্যন্ত অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করতে নিবন্ধন করেছেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৩৪ জন গ্রাহক। রিটার্ন প্রস্তুত করা হয়েছে ৬৬ হাজার ৩০৩টি। অনলাইনে রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৫৯ হাজার ২৭৬টি। আর কর পরিশোধ হয়েছে ২ কোটি ২৪ লাখ ২৭ হাজার ৭৮৬ টাকা।

অন্যদিকে, ৩১ অক্টোবর কর অঞ্চলে মাসব্যাপী করসেবা মাস নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। সেখানে অনলাইন রিটার্ন জমার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে অনলাইনে রিটার্ন জমা পড়ে ৬১ হাজার ২০৩টি। ২০২২-২৩ অনলাইনে রিটার্ন জমা পড়ে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮১টি। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস (জুলাই-অক্টোবর) এই সংখ্যা ২৭ হাজার ৬১২টি। অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর ওয়েবসাইট খুলে দেয়ার পর এই রিটার্ন জমা পড়েছে। আমাদের অনলাইন প্লাটফর্মটা যত সহজ হয়েছে, এর সুফলটা যদি করদাতারা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেন, অনলাইনে অনেক রিটার্ন জমা হবে। তবে করদাতাদের আহ্বান জানাব অনলাইনে আগে-ভাগেই রিটার্ন জমা দেবেন। শেষ সময় জমা দিতে গেলে সার্ভার ধীরগতির হতে পারে, সেক্ষেত্রে করদাতারা সর্বোচ্চ সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।

এনবিআরের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ই-টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা ৯৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৯ জন। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) করদাতারা ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫৯৯টি রিটার্ন জমা দিয়েছেন; যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল ৯০ লাখ ৩ হাজার ২০৬ জন। সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৯টি। অর্থাৎ তিন মাসে টিআইএনধারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ। ২০২১-২২ অর্থবছরে টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রিটার্ন দাখিল করেছিলেন ২৫ লাখ ৯০ হাজার ৯৮৮ জন করদাতা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেটা দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ২৬৩ জন। প্রায় ১০ লাখ রিটার্ন এক বছরে যোগ হয়েছে। যেখানে ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩ লাখ ১৯ হাজার রিটার্ন জমা পড়ে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০